ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মাথা গোঁজার ঠাঁই মিললেও, ১৮ বছরে মেলেনি মৌলিক অধিকার

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৮
মাথা গোঁজার ঠাঁই মিললেও, ১৮ বছরে মেলেনি মৌলিক অধিকার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেনী: ফেনী পরশুরাম পৌরসভার নীচু ভূ’মিতে, গৃহহীন, ভূমিহীন দুর্দশাগ্রস্ত ও ছিন্নমূল পরিবারের বসবাসের জন্য গড়ে তোলা হয় বাউরখুমা আশ্রয়ন প্রকল্প। এইসব পরিবারে নারী-শিশুসহ বাসিন্দ রয়েছে প্রায় ছয়শ’। নানা বিপর্যয়ে ভিটে মাটিহীন কিছু মানুষের বেঁচে থাকার ঠাঁই হয়েছে এখানে।

এ আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখানকার মানুষগুলো এখনো পায়নি বেঁচে থাকার নূন্যতম মৌলিক অধিকার।

আওয়ামীলীগের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এএসএইচকে সাদেক ২০০০ সালের ২২ জুলাই বাউরখুমা মৌজার ৪ একর ৮০ শতক জমিতে আশ্রায়ণ প্রকল্পটি উদ্বোধন করেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যবদি আশ্রায়ণে কোনো মেরামত কাজ না হওয়ায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, নিরাপত্তা আর অবকাঠামোগত অব্যবস্থাপনায় অনেকটা মানবেতর জীবন যাপন করছে এখানকার বাসিন্দারা। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। কথা ছিল তাদের জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র থাকবে, স্কুল থাকবে, স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য থাকবে সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ। কিন্তু এ সুবিধাগুলো এখনো অধরাই রয়েছে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৗলিক চাহিদার শুধুমাত্র বাসস্থানের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানকার বাসিন্দাদের। আশ্রায়ণের ঘরের বেশীরভাগ ছাউনি, বেড়া, দরজা, জানালাসহ ঘরের সব কিছু নষ্ট হয়ে ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। জরাজীর্ণ ঘরে চালে পলিথিন দিয়ে মেরামত করে কোনোমতে চলছে বসবাস করছে। বর্তমানে ৩টি টিউবওয়েল পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ছোট ছোট তিনটি পুকুর মজে গেছে। দূর থেকে আনতে হয় খাওয়ার পানি। ১০টি পরিবারের জন্য ১টি টয়লেট স্থাপন করা হলেও বর্তমানে সবগুলো টয়লেট সম্পূর্ন পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে।

বর্ষাকালে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্দশার অন্ত থাকেনা। অতি বৃষ্টি আর ভারত নেমে আসা পানিতে কখনও কখনও ডুবে যায় আশ্রায়ণ এলাকা। তখন পরিবার-পরিজন, গৃহপালিত পশুসহ তাদের ঠাঁই নিতে হয় আশে-পাশের এলাকায়।

এর নিকটে কোন সরকারি প্রাইমারি স্কুল না থাকায় এখানকার শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত।

পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনমূখী ও আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহারিক ও কারিগরী প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তেমন কোন সুফল দেখা যায়নি।

অন্য কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় চরম দারিদ্রতা আর অভাবের মধ্যে দিন কাটছে তাদের। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতাসহ ভিজিএফ কার্র্ডের সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত বলে অভিযোগ করেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।

প্রকল্পে যে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে, চাহিদামাপিক ওষুধ থাকে না। আর সে কারণেই এখানকার বাসিন্দাদের সামান্য কিছু হলেই উপজেলা সদরের হাসপাতালে যেতে হয়।
ভারতীয় সীমান্তবর্তী হওয়ায় এলাকাটি মাদক ও চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। প্রতি রাতে প্রকল্পের আশপাশ মাদক ব্যবসায়ী, মাদকসেবী ও চোরাচালানকারী মুখরিত হয়ে উঠে।

এখানকার পরিবারগুলোর বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার জন্য কমিউনিটি সেন্টার করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু অবহেলায় সেগুলো এখন একেবারেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।  

বাউরখুমা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সভাপতি মোঃ এরশাদ বলেন এখানে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নাই, এর থেকে গ্রামের গরুর ঘরও অনেক ভাল। প্রতি বছর শুধু আশ্বাস পাই কিন্তু বাস্তবায়ন হয় না।

পরশুরাম পৌরসভার মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল জানান, আশ্রায়ণের ঘর গুলি বর্তমানে ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। তিনি এ ব্যাপারে সংলিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

ফেনী জেলা প্রশাসক মোঃ অহিদুজজমান সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারকে চিঠি দেয়া হয়েছে । আশা করি খুব দ্রুত এর সমাধান হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৪০ ঘণ্টা, ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৮ 
এসএইচডি/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।