ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘জয়বাংলা’ স্লোগানে নদী সাঁতরে শহরে আসে মানুষ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৮, ২০১৮
‘জয়বাংলা’ স্লোগানে নদী সাঁতরে শহরে আসে মানুষ মুক্তিযদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: ৮ ডিসেম্বর। দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস হানাদার বাহিনীর কবলে থাকার পর সাড়াশী আক্রমণের পর ১৯৭১ সনের এই দিনে তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমা সদর হানাদার মুক্ত হয়। বিজয় আনন্দে সেদিন উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলার গর্বিত পতাকা।

ভারতের কৈলাশহর এবং ধর্মনগর সীমান্ত ঘেঁষা হানাদার বাহিনীর বিওপি ধ্বংস করার জন্য যৌথবাহিনী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে পর্যায়ক্রমে আক্রমণ শুরু করেছিল এই অঞ্চলে। যুদ্ধের ছক অনুযায়ী ভারতীয় ৮১ মাউন্টেন ব্রিগেডের ওপর দায়িত্ব বর্তেছিল।

সমশেরনগর হয়ে মৌলভীবাজার অভিমুখে অগ্রাভিযান পরিচালনার। সেই অভিযানের ধারাবাহিকতায় মূলত মৌলভীবাজার মুক্ত হয়।

জানা যায়, ৩ ডিসেম্বর রাতে সিইনসি স্পেশাল গ্রুপের ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আহাদ চৌধুরী (অধ্যক্ষ আহাদ চৌধুরী) এবং সহ অধিনায়ক সৈয়দ মহসীন আলীর (প্রয়াত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী) নেতৃত্বে মুন্সিবাজারে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে রাত ৯টা থেকে যুদ্ধ শুরু হয়। এ যুদ্ধ চলে ৪, ৫, এবং ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু মুক্তিবাহিনী সফলতার মুখ দেখতে পারেনি।

মৌলভীবাজারে ছিল হানাদার বাহিনীর ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার যার ফলে অত্র অঞ্চল মুক্তিবাহিনীর দখল নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছিল। অবস্থা পর্যবেক্ষণে ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার মেজর জেনারেল অরোরা যেকোন মূল্যে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মৌলভীবাজার শহর দখলের নির্দেশ দেন। ফলে যৌথবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার লক্ষণ সিং আরো শানিত হয়ে ওঠেন। ৭ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী ব্যাপক হামলা চালালে ওইদিন দুপুর থেকেই হানাদার বাহিনী ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার (পিটিআই এবং মৌলভীবাজার কলেজ) থেকে পিছু হটতে শুরু করে। ৭ ডিসেম্বর রাত ১০টার মধ্যেই তারা পিছু যায়। মুক্ত হতে থাকে মৌলভীবাজার।

সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ আনসার আলী সেদিনের স্মৃতিচারণ করেন।  ছবি: বাংলানিউজসদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ আনসার আলী সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ৬ ডিসেম্বর জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলো থেকে হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে আমরা ৭ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার শহরের দিকে রওয়ানা হলাম। এর মধ্যে মুন্সিবাজারে পাকিস্তানী সেনাদের মুখোমুখি ছিলো আমাদের যোদ্ধারা। কুলাউড়া, সমশেরনগর, শ্রীমঙ্গল থেকে তিনটি গ্রুপ শহরের আশপাশে অবস্থান করছিলো। তখনই আমাদের কাছে খবর আসে হানাদার বাহিনী সিলেটের দিকে পালিয়ে যাচ্ছে। আমরা তখন একটা দল পাঠালাম শহরের দিকে। তারা শহরে এসে চাঁদনীঘাট মনু ব্রিজে এসে ফায়ারিং করে কিন্তু হানাদার বাহিনীর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। অন্যান্য এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর যৌথ আক্রমণে পাকিস্তানী সেনাদের নিহত হওয়ার খবর পেয়ে প্রাণভয়ে তারা তখন জেলা শহর ছেড়ে পালাচ্ছিল। সেদিন রাতেই আমরা শহর দখল করেছিলাম।

তিনি জানান, ৮ ডিসেম্বর সকালে মনু নদের শহরের বিপরীত পাড়ে কৌতুহলী জনতার ভিড় জমতে থাকে। আজিজ বেগ হাত উঁচিয়ে হাঁক দেন-“মৌলভীবাজার শহর মুক্ত হয়ে গেছে”। আবেগাপ্লুত জনতা তখন নদী সাঁতরিয়ে এবং জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে শহরে এসে বিজয় মিছিল বের করে। এ সময় পশ্চিম বাজারস্থ ট্রাফিক পোস্টে দাঁড়িয়ে আজিজ বেগ বক্তব্য রাখেন জনতার উদ্দেশে। পরে বর্তমান কোর্ট ভবন (তৎকালীন এসডিও অফিস) এর সামনে বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৮ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।