ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এমপির পিএস থেকে প্রতারক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৯
এমপির পিএস থেকে প্রতারক খন্দকার মো. ফারুক ওরফে ওমর মবিন

ঢাকা: পাঁচ বছর আগে জামালপুর এলাকার এক সংসদ সদস্যের পিএস হিসেবে কর্মরত ছিলেন খন্দকার মো. ফারুক ওরফে ওমর মবিন (৫২)। এরপর গড়ে তোলেন এক প্রতারকচক্র। নিজেকে কখনো কাস্টমস কমিশনার, কখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আসা ফারুকের সঙ্গে সব সময় থাকতো দু’জন পিএস।

সব সময় দামি পোশাক পরে চলাফেরা করতেন প্রাডো গাড়িতে। ক্লায়েন্টদের টার্গেট করে প্রতারণার চুক্তি করতেন নামি-দামি অভিজাত হোটেলে।

কাস্টমস হাউজের জব্দ স্বর্ণের বার নিলামের মাধ্যমে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন এই প্রতারক ফারুক।

বুধবার (৯ জানুযারি) রাতে রাজধানীর রমনা থানাধীন বেইলি রোডের নবাবী ভোজ রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে প্রতারক ফারুকসহ তার পিএস মোহাম্মদ ইলিয়াস ওরফে নুর ইসলাম সরকার (৩৮) ও সাইফুল ইসলামকে (৩০) আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

এসময় তাদের কাছ থেকে ১ টি ওমর মবিন নামের কাস্টমস সহকারী কমিশনারের ভিজিটিং কার্ড, ৪টি ব্যাংকের চেকের পাতা, ৭টি মোবাইল ও ১৩টি বিভিন্ন অপারেটর সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিআইডির সিরিয়াস অ্যান্ড হোমিসাইডাল স্কোয়াডের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) সৈয়দা জান্নাত আরা।  

তিনি বলেন, প্রতারকচক্রের সদস্যরা কাস্টমস হাউজের জব্দ স্বর্ণের বার নিলামের মাধ্যমে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। ফারুক নিজেকে কাস্টমস কমিশনার বলে পরিচয় দিতেন আর তার দুই সহযোগী ইলিয়াস ও সাইফুল কমিশনারের পিএস হিসেবে পরিচয় দিতেন। তারা বিভিন্ন মানুষকে টার্গেট করে প্রথমে পিএসদের পাঠাতেন ফারুক। দরকষাকষি করে কাস্টমস হাউজের জব্দ সোনার বার নিলামে দেওয়ার কথা বলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।

ইতোমধ্যেই কয়েকজন ভুক্তভোগী পাওয়া গেছে। যাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা নিয়েছে এই চক্রটি। মৃণাল নামে এক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যিনি সিআইডি কার্যালয়ে এসে প্রতারক ফারুককে শনাক্ত করেছেন।

ফারুককে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, গত ৫ বছর আগে জামালপুরের এক এমপির পিএস হিসেবে কাজ করতেন তিনি। সেখান থেকে চাকরি ছাড়ার পর প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

আসামির কাছ থেকে ৪০ কোটি টাকার ব্লাংক চেক পাওয়া গেছে বলেও জানান তিনি।

ফারুক কোন এমপির পিএস ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে ওই এমপির নাম বলা যাচ্ছে না। আমরা বিষয়টি যাচাই করে দেখছি। এই চক্রের আরও সদস্য রয়েছে, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

চক্রের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি বলেন, ফারুক কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীদের বলতেন, স্বর্ণের বার আমরা জব্দ করেছি, আমরা সব পারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা। কোনো সমস্যা নেই। ভুক্তভোগীদের নিজের ভিজিটিং কার্ডও দিতেন, সেখানে কাস্টমস কমিশনার ওমর মবিন নাম ব্যবহার করতেন।

আটকদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে রমনা থানায় একটি মামলা (নং-১৮) দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান সিআইডির এ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৯
পিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।