ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

যেখানে সরালির ডাকে ভাঙে ঘুম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৯
যেখানে সরালির ডাকে ভাঙে ঘুম জলকেলিতে ব্যস্ত অতিথি পাখির ঝাঁক। ছবি: বাংলানিউজ

পাবনা: হিমেল বার্তা নিয়ে শীত এসেছে প্রায় একমাস। আর এই কুয়াশা মোড়ানো শীতের সকালে ঘুম ভাঙিয়ে দিচ্ছে হাজার-হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে খাবার ও নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে উড়ে আসা অতিথি পাখিরা। 

পাবনা শহরের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরীর শেষ প্রান্তে জলাশয়ে আশ্রয় নিয়েছে এই অতিথি পাখিরা।  মূল শহর থেকে একটু দূরে।

যান্ত্রিকতা ও কোলাহলমুক্ত এই জলাশয়ের আশপাশের মানুষের সকালের ঘুম ভাঙিয়ে দিচ্ছে অতিথি পাখি। পূর্ব আকাশে সূর্যের আলো উঠতেই উড়া-উড়ি, ছুটো-ছুটি, খুনসুটি আর সাঁতার খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে পাখিরা। তাদের কিচিরমিচির শব্দে এখন মুখরিত জলাশয়ের চারপাশ।  

স্থানীয় পাখি প্রেমীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উড়ে আসা অতিথি পাখিদের মধ্যে বেশি দেখা যায় যে পাখিটি তার নাম পাতি সরালি।  
জলকেলিতে ব্যস্ত এক ঝাঁক অতিথি।  ছবি: বাংলানিউজ
পাবনা পৌর এলাকার কাশিপুর মহল্লার বিসিক শিল্পনগরীর শেষ প্রান্তে দেখা মিলবে তাদের। শীতের সময়ে বাংলাদেশে যেসব পাখির দেখা মেলে তাদের মধ্যে পাতি সরালি অন্যতম। এটি ছোট সরালি বা গেছো হাঁস নামেও পরিচিত। এরা শীতকালে ভারত, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে উড়ে এসে এদেশে আবাস গড়ে তোলে।

পাবনা পাখি ও পায়রা সমিতির সভাপতি হাসান মাহামুদ বাংলানিউজকে বলেন, পাতি সরালি নিশাচর স্বভাবের আবাসিক পাখি। দিনে জলমগ্ন ধানক্ষেত ও বড় জলাশয়ের আশপাশে দলবদ্ধভাবে জলকেলি আর খুনসুঁটিতে ব্যস্ত থাকলেও রাতে খাবারের সন্ধানে চরে বেড়ায়। এদের প্রধান খাবার পানিতে থাকা গুল্ম জলজ উদ্ভিদ, নতুন কুঁড়ি, শস্যদানা, ছোট মাছ, ব্যাঙ, শামুক ইত্যাদি।  

তিনি আরো বলেন, এই পাখিটির মাথা, গলা ও বুক বাদামি হয়ে থাকে, কালো পা এবং ঠোঁট ধূসর-কালচে রঙের। পিঠে হালকা বাদামির ওপর নকশা আঁকা ও লেজের তলা সাদা। পুরুষ ও স্ত্রী পাখি দেখতে একই রকম। প্রজনন মৌসুমসহ অন্য সময় এরা জুটি বেঁধে পৃথকভাবে দুর্গম বিল-হাওরে বসবাস করে। তাই শীত ব্যতিত এদের একত্রে বেশি সংখ্যায় দেখা যায় না। পাতি সরালির ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম, দৈর্ঘ্য ৪৫ সেন্টিমিটার। সাধারণত এদের ডানা ১৮ দশমিক ৭ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৪ সেন্টিমিটার এবং লেজ ৫ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। তবে পাবনা শহরে এবারই প্রথমবারের মতো শহরের কাছে এতো পরিমাণ পাখি আমরা দেখছি। খুব ভালো লাগছে। একবার যদি জায়গা ওদের ভালো লাগে, পরের বছর আরো বেশি পরিমাণ আসে। তবে ভয়ের ব্যাপার হলো পাখি শিকারিদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে হবে। তা হলে অন্য পাখিরাও আমাদের এখানে আসবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার চারপাশে বড় বড় দালান আর মাঝে ছোট্ট একটা জলাশয়। কচুরিপানাপূর্ণ সেই জলাশয়েই নির্ভয়ে ঘুরছে এক ঝাঁক পাখি। সামান্য শব্দ হলেই উড়ে যাচ্ছে দল বেঁধে। ওদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত পুরো এলাকা। বাড়ির ছাদ বা বারান্দা থেকেই এলাকাবাসীরা উপভোগ করছেন সেই দৃশ্য।
  
মামুনুর রশিদ নামে এলাকার স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, জেলার বিভিন্ন বড় বড় জলাশয়ে অতিথি পাখির সমাগম ঘটলেও পাবনার শহরে এবারই প্রথম এদের দেখা মিলল। নগরের যান্ত্রিক শব্দের বদলে এখন সকালে ঘুম ভাঙে ওদের কোলাহলে। ওরা যেনো নিরাপদে এখানে থাকতে পারে, তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। পাখি শিকারি বা বাইরের কারো দ্বারা ওদের যেনো কোনো ক্ষতি না হয়, বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে।
জলকেলিতে ব্যস্ত পাতি সরালির ঝাঁক।  ছবি: বাংলানিউজ
কথা হয় পাবনা বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলন কমিটির আহ্বায়ক ও আলোকচিত্রী এহসান আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, এই পাখি দেশি প্রজাতির হলেও পাবনার জন্য তারা অতিথি ও দেশীয় সম্পদ। পাখি শিকারের বিরুদ্ধে সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রচারণা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে এই সম্পদ রক্ষা করতে হবে।

এ ব্যাপারে সামাজিক বন বিভাগ পাবনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, শীতের এই সময়ে পাবনার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর পরিমাণে অতিথিসহ দেশি পাখির আগমন ঘটে। বিশেষ করে পাবনা কাজিরহাট, নগরবাড়ি পদ্মার চরে। আবার চাটমোহর, সুজানগর, ভাঙ্গুড়ার বিল অঞ্চলেও অতিথি পাখির দেখা মেলে। তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা রাজশাহী বন্য প্রানী বিভাগ ও পুলিশের সহায়তায় প্রায়ই পাখি শিকারবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছি। তবে লোকবলের অভাবে এটা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে স্থানীয়রা যদি আমাদের খবর দেন, তবে অবশ্যই শিকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৯
‌ইইউডি/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।