ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এ মাসেই বাজারে আসছে তিস্তাপাড়ের পেঁয়াজ

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
এ মাসেই বাজারে আসছে তিস্তাপাড়ের পেঁয়াজ

লালমনিরহাট: চাষতে জানলে ধু-ধু বালুচরেও সোনা ফলানো সম্ভব। আগাম জাতের পেঁয়াজ চাষ করে সেটা আবারো প্রমাণ করেছে লালমনিরহাটের তিস্তা চরাঞ্চলের চাষিরা। ভোগ্যপণ্যের বাজারে সব থেকে আলোচিত ও সংকটময় পণ্য পেঁয়াজ এ মাসেই বাজারজাত করবে এ অঞ্চলের চাষিরা। 

প্রতিবেশী দেশ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় দেশের বাজার সংকট দেখা দিয়েছে রান্নার অন্যতম মসলা খ্যাত পেঁয়াজ। ফলে ৩৫/৪০ টাকা কেজি দরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিনশ টাকা কেজি দরে।

যা নিয়ে দেশে রীতিমত হৈ-চৈ পড়েছে। হাট-বাজার থেকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এমনকি খোদ সংসদেও আলোচনার ঝড় উঠেছে পেঁয়াজের বাজার নিয়ে। আকাশ ছোঁয়া দামে কিনতে হচ্ছে পেঁয়াজ।  

বর্তমান বাজারে দাম ভালো থাকলেও কৃষকদের পেঁয়াজ বাজার আসার প্রাক্কালে কমে যাওয়া নিয়ে বেশ শঙ্কিত চাষিরা। নভেম্বর মাসের শেষ দিক পর্যন্ত আমদানি না হলে বেশ লাভবান হবেন এ অঞ্চলের পেঁয়াজ চাষিরা।  

হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা চরাঞ্চলের পাটিকাপাড়া, পারুলিয়া, ডাউয়াবাড়ি, চর হলদিবাড়ি ও হলদিবাড়িসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলের বিস্তৃর্ণ এলাকায় চাষ হয়েছে আগাম জাতের পেঁয়াজ। এ ছাড়াও পুরো চরাঞ্চলের চাষিরা এবার বালু চরে পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।  

...চাষিরা জানান, বন্যার পানি নেমে গেলে তিস্তার বুকে জেগে উঠে ধু-ধু বালু চর। সেই বালু চরে দিনরাত পরিশ্রম করে চাষিরা পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজি চাষাবাদ করেন। এবার দেশে পেঁয়াজের সংকট দেখা দেওয়ায় এটি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন চাষিরা। অনেকেই আগাম পেঁয়াজ চাষ করেছেন। নভেম্বর মাসের শেষ দিকে এসব পেঁয়াজ বাজারে আসবে বলেও জানান চাষিরা।  

তবে প্রতিবছর চাষিদের পেঁয়াজ বাজারে আসতে না আসতেই দাম কমে যাওয়ায় খুব একটা মুনাফা করতে পারেনি তারা। তবে চলতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ও মূল্য ভালো থাকায় বেশ মুনাফার আশা করছেন চাষিরা।  

অনেক ভূমিহীন কৃষক অন্যের জমি বর্গা বা লিজ নিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। জমি কর্ষন দিয়ে বীজবপন করে প্রয়োজনীয় সার, সেচ ও পরিচর্যা করলে পেঁয়াজ ঘরে তোলা যায়। বেলে, দো-আয়াঁশ মাটি পেঁয়াজ চাষের উপযোগী হলেও চরাঞ্চলের জমির বড় সমস্যা সেচ। দূরে নদী থেকে বিশেষ পাইপের সাহায্যে পানি সেচ দেন তারা। ফলে পরিশ্রম ও খরচ দু'টোই বেড়ে যায়। খরচ বাড়লেও বাজার মূল্য ভালো থাকলে বেশ লাভবান হওয়ার আশা চরাঞ্চলের চাষিদের। দেশে পেঁয়াজের সংকট ও মূল্যবান পণ্য হওয়ায় রাত জেগে পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন চাষিরা।

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার হলদিবাড়ি গ্রামের কৃষক খাইরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, পেঁয়াজ চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ২৫/২৮ হাজার টাকা। উৎপাদন হবে বিঘা প্রতি ৩০/৩৫ মণ পেঁয়াজ। প্রতি মণ পেঁয়াজ দেড় থেকে দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি করলে কিছু মুনাফা হয়। কিন্তু গত বছরও প্রতি মণ পেঁয়াজ হাজার টাকার নিচে বিক্রি করে মুনাফা করতে পারিনি। তবে এ বছর আপাতত বাজার ভালো থাকায় মুনাফা হবে বলে আমরা আশাবাদী।

একই গ্রামের চাষি শফিকুল ও হাসান আলী বলেন, বেশী দামে সার বীজ ও কীটনাশক ব্যবহার করে চাষাবাদ করি। কিন্তু দাম পাই না। এখন কিনতে গেলে পেঁয়াজ তিনশ টাকা কেজি। আর যখন আমাদের পেঁয়াজ বিক্রি হবে তখন সরকার দাম কমিয়ে লোকসান করায়। তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজ ১৮/২০ দিনের মধ্যে বাজারে আসবে বলেও জানান তারা।  

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণের উপ পরিচালক বিদ্যুৎ ভূষন রায় বাংলানিউজকে বলেন, চরাঞ্চলের চাষিদের আগাম পেঁয়াজ নভেম্বরের শেষে অথবা ডিসেম্বরের প্রথমে বাজারে আসবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। চাহিদা থাকায় এবারে পেঁয়াজ চাষিরা বেশ লাভবান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৯
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।