ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মোটরবাইক ফেরিওয়ালা!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
মোটরবাইক ফেরিওয়ালা! মোটরবাইকে করে বিক্রি হয় মোরগ-মুরগি-হাঁস। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: জীবনসংগ্রাম বয়ে নিয়ে আসে নানান আকুতি। তীব্র বেগে ছুটে চলা। অপেক্ষাকৃত ব্যতিক্রমী চিন্তার মানুষগুলো সৃষ্টি করতে চায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। সেটা নিজের কাজেই হোক কিংবা নিজের টিকে থাকার সংগ্রামে। 

সকাল তখন চোখ মেলেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ঘন অরণ্যে। এ উদ্যানের প্রবেশমুখের টংদোকানটিতে তখন রোদের ঝলক।

চা-প্রেমীরা মৃদু শীতে চায়ে চুমুক দিতে ইতোমধ্যে এখানে ভিড় করেছেন।  

এখানের আরণ্যক নিস্তব্ধতাকে ভেঙে দিচ্ছে পর্যটকদের গাড়িগুলো। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা যে যার মতন করে এই সকালে ছুটছেন -এ চিরসবুজ বনের অন্তঃপুরে। এ সময় দু’জন মোটরবাইক আরোহী সম্প্রতি চায়ের নেশায় এখানে যাত্রাবিরতিতে এসেছেন। শুধু মোটরবাইক আরোহী বললে ভুলই হবে, উনারা সময়ের আধুনিক ফেরিওয়ালা!

তাদের মোটরবাইকের পেছনে রয়েছে নিজেদের ব্যতিক্রমী বিপণনপণ্য। একটি বড় আকারের টুকরিতে গৃহপালিত ঝুঁটিওয়ালা মুরগির বাহার। কিছু হাঁসও রয়েছে তাতে। এমন বাহারি মোটরবাইক ফেরিওয়ালাদের মানুষরা দেখেছেন বিস্ময় নিয়ে। কেউ কেউ দরদামও করেছেন। কিছুক্ষণের চা-চুকুকের যাত্রাবিরতি তাদের। মুরগি আর হাঁসগুলো তখন দু মোটরবাইকের টুকরিতে গুণছে মৃত্যুর প্রহর! কোনো কোনোটি আবার ‘কক-কক’ করে ডাক ছড়াচ্ছে।

এ দু’জন আধুনিক মুরগিব্যবসায়ীর নাম আব্দুল আলী ও তার সহযোগী আসকির মিয়া।
 ফেরিওয়ালা আসকির ও আব্দুল আলী।  ছবি: বাংলানিউজমুরগি ব্যবসায় ২২ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আব্দুল আলী অবশেষে মোটরবাইকে এসে ঠেকেছেন। জীবনের ছুটেচলাকে আরও গতিময় করতে কিছুদিন আগে একটি মোটরসাইকেল কিনে নিয়েছেন। সঙ্গে জুটিয়েছেন আপন ভাবধারার অপর এক শিষ্যকে। দু’জনে মিলে নিজেদের তৈরি করেছেন দুরন্ত সময়ের আধুনিক ফেরিওয়ালা হিসেবে।  

সারাদিনের এমন ছুটেচলায় কেমন আয় হয়, জিজ্ঞেস করতেই আব্দুল আলী পাকা দাঁড়ির গালভরা হাসি! তারপর সেকেন্ড দু’তিন পরে উত্তর, এই কোনোমতে টিকে আছি সাব। দু’জনের প্রায় হাজার দেড় হাজার টাকা থাকে।  

কয়টা মুরগি-হাঁস ও মূলধনের পরিমাণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দু’জনের টুকরিতে নয়টি মোরগ, আটটি মুরগি ও চারটি হাঁস আছে। এগুলোর একেকটার দাম ধরা হয়েছে ৩শ থেকে ৬শ টাকার মধ্যে। টুকরিতে প্রায় সাত হাজার টাকা মাল আছে। দু-একদিনের মধ্যেই এগুলো বিক্রি হয়ে যাবে।

এ ব্যবসা সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, মুরগি-হাঁসের মাংস বাঙালির মতো খাসিয়াও খুব পছন্দ করে। তাই তাড়াতাড়ি তাদের কাছে পৌঁছে ব্যতিক্রমী চিন্তা করেছি। কিনেছি মোটরসাইকেল। তাতে সুবিধা হয় অনেক। এগুলো উপজেলার বিভিন্ন খাসিয়াপুঞ্জিতে আমার নিয়ে গিয়ে বিক্রি করি। অনেক কষ্ট করতে হয়। তবে, সেই কষ্টের অনুপাতে বেনিফিট কম।

তারা বলেন, টুকরি ছাড়া এই প্রাণীগুলোকে আমরা ঝুলিয়েও নিতে পারতাম। কিন্তু প্রাণীগুলো কষ্ট পাবে ভেবে মোটরসাইকেলে টুকরিতে বেঁধে তার ওপর নিয়ে যাচ্ছি। এতে প্রাণীগুলো যেমন রক্ষা পাবে তেমনি আমরাও তাদের হঠাৎ মরে যাওয়ার ঝুঁকি থেকেও বাঁচবো।  

এমনি একটি প্রশ্নের উত্তরে তাদের কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত হয়, দু’পায়ের গৃহপালিত প্রাণীদের প্রতি তাদের অন্য ধরনের টান আছে। কাপের চা শেষ করেই দ্রুত মোটরসাইকেলে ধোঁয়ায় মিলিয়ে যান তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৯
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।