ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

শ্রদ্ধায় স্মরণ কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনকে

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৯
শ্রদ্ধায় স্মরণ কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনকে

ঢাকা: আধুনিক ও সাহসী মানুষ ছিলেন কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে, সাংস্কৃতিক আন্দোলনে পুরোভাগে থেকে ‘সাহসী’ মানুষ হয়ে যিনি অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন সকলকে। পেয়েছেন দেশের অন্যতম সম্মাননা একুশে পদক।

শিল্প, সাহিত্য, স্থাপত্যসহ বিভিন্ন অঙ্গনে স্বাক্ষর রাখা এই বহুমুখী প্রতিভার আধুনিক মানুষটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলো বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় কবি রবিউল হুসাইনের স্মরণসভা।

সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ। জাতীয় জাদুঘরের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে সভায় কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনকে নিয়ে কথা বলেন বিশিষ্টজনেরা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, স্থপতি হয়েও স্থাপত্যের তুলনায় কবি হিসেবে বেশি এগিয়ে গেছেন রবিউল হুসাইন। স্থাপত্য শিল্পে তার পারদর্শীতা দেখা যায় তারই সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। এমন একজন মানুষের স্মৃতি রক্ষার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

চিত্রশিল্পী হাশেম খান বলেন, আমার সঙ্গে তার দীর্ঘ ৪০ বছরের সম্পর্ক। আমরা একসঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, ঢাকা নগর জাদুঘর, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা জাদুঘরের কাজ করেছি। তিনি চিত্রকলা নিয়ে নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করে মন্তব্য করতে পারতেন। এদেশের শিল্পে তার অবদান অনন্য।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, নিজের কাজ তো রয়েছেই, একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অপারাজেয় বাংলা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশসহ অনেক বিখ্যাত ভাস্কর্যের ভিত্তি গড়ে সাহায্য করেছেন এই মহান মানুষটি। আর শুধু স্থাপত্য নয়, অনেক মানুষেরও ভিত্তি গড়েছেন। শুধু নিজের জন্যই কিছু করেননি।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, কবি রবিউল হুসাইন সবসময়ই ছিলেন প্রকাশে অনিহাযুক্ত একটা মানুষ। তার বড় প্রমাণ হলো তিনি ৬০ দশকের কবি হলেও তার প্রকাশ ঘটে ৮০র’ দশকে। তিনি সবসময় কাজের জন্য পাগল ছিলেন, নিজেকে প্রকাশের জন্য নয়। বোধের একটি অংশকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেছেন তিনি। তার কাজ এবং লেখাগুলো সংরক্ষণ করা আমাদের নিজেদের জন্যই অত্যন্ত জরুরি।

বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ সম্পর্কে কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনের ভালোবাসা ছিল, রসবোধ ছিল। উত্তর আধুনিক ধারার গল্প এদেশে তিনিই প্রথম লেখেন। তার কাজগুলো সংরক্ষণের আহ্বান জানায়।

জাতীয় কবিতা পরিষেদর সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাত বলেন, রবিউল হুসাইন এতোগুলো রাষ্ট্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন এবং স্থাপত্যে এতো অনন্য যে, তার মতো আর দ্বিতীয় কেউ নেই। তবে এমন একটি পর্যায়ে থেকেও নিজেকে সবসময় আড়াল করে রাখতেন তিনি। এই একজনকে কেন্দ্র করে সমৃদ্ধ হয়েছে শিল্পের বিভিন্ন শাখা।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, স্থাপত্য কলাকে নিত্য নতুন বিন্যাসে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে রবিউল হুসাইন ছিলেন অনন্য। তার স্থাপত্যে দেশপ্রেম মূর্ত হয়ে উঠেছে বারবার। বাংলার প্রকৃতি ধরে ধরে তিনি স্থাপত্যকে করে তুলতেন নান্দনিক। স্থাপত্যে তার উদ্ভাবন ব্যাখ্যা করার মতো।

এসময় পরিবারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন- কবি পুত্র রবিন হুসাইন ও কবির ভাই ক্যাপ্টেন তারিক হোসেন। স্মৃতিচারণ করে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম,  সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, কবি শিহাব সরকার, জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি অধ্যাপক সুলতানা সুমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৯
এইচএমএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।