ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে শিশুকে হত্যাচেষ্টা সহপাঠীদের!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে শিশুকে হত্যাচেষ্টা সহপাঠীদের! হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশু, ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া আরাফাত (ছদ্মনাম) তার এক জোড়া চাকাওয়ালা জুতা তার সহপাঠী রাব্বীর (ছদ্মনাম) কাছে বাকিতে বিক্রি করে। আরাফাত টাকার জন্য বারবার চাপ দিতে থাকে। টাকা না দেওয়ায় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে তাকে হত্যার পরিকল্পনা আঁটা হয়।

পরিকল্পনানুযায়ী তাকে একটি আখক্ষেতে নিয়ে লোমহর্ষকভাবে হত্যাচেষ্টা করা হয়। কিন্তু আখক্ষেতের মধ্যে পড়ে থেকে দীর্ঘ প্রায় ১৩ ঘণ্টা রক্তক্ষরণের পরও সৌভাগ্যক্রমে সে বেঁচে যায়।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে পাবনার ঈশ্বরদীতে একটি আখক্ষেতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। পরে মুমূর্ষু অবস্থা তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন সে হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আছে এবং শঙ্কামুক্ত।

ঈশ্বরদী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অসিত কুমার বসাক বাংলানিউজকে জানান, আরাফাত কিছুদিন আগে তার একজোড়া চাকাযুক্ত জুতা দুই হাজার ৫শ টাকায় সহপাঠী রাব্বীকে বিক্রি করে। পুরো টাকা বাকি থাকায় আরাফাত বারবার টাকার জন্য চাপ দিচ্ছিলো। তাই রাব্বী তার সহপাঠী রাসেল (ছদ্মনাম) ও রাকিবকে (ছদ্মনাম) নিয়ে আরাফাতকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।

ভারতীয় চ্যানেল সনি সিক্স চ্যানেলে ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে তাকে পরিকল্পনা করা হয়।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রোববার ‍দুপুরে আখ খাওয়ার কথা বলে তারা আরাফাতকে গ্রামের একটি আখক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে রড় দিয়ে আরাফাতের মাথায় আঘাত করা হয়। উপর্যুপরি আঘাতে তার মাথার মগজ বেরিয়ে যায় এবং কান কেটে যায়।

তিনি আরও জানান, ঘটনার অনুসন্ধানে তারা অভিযুক্ত শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তারা জানায় ‘ক্রাইম পেট্রোল’ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আরাফাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। হত্যার পরে ঘটনায় ব্যবহৃত রডটি রাব্বী একটি পুকুরে ফেলে দেয়।

ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী রোববার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে আখক্ষেত থেকে আরাফাতকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় তার মাথায় গুরুতর জখম ছিল। প্রথমে তাকে পাবনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এখন সে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় আরাফাতের বাবা আকমল মণ্ডল বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন।

জানতে চাইলে আরাফাতের বাবা আকমল মণ্ডল জানান, রোববার দুপুরের পর থেকে আরাফাতের খোঁজ পাচ্ছিলেন না তারা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তিনি থানায় অভিযোগ করেন। আরাফাত প্রতিদিন অভিযুক্তদের সঙ্গে খেলা করতো। তাই প্রথমেই তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

আরাফাতের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। মাথায় অনেকগুলো সেলাই দেওয়া হয়েছে। উপর্যপুরি আঘাতে মাথার মগজ বেরিয়ে এসেছে। জ্ঞান ফোরার পর ঠিকভাবে কথা বলতে পারছে না। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া লাগতে পারে। এজন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান, আরাফাতের বাবা আকমল মণ্ডল।

এর আগে ২০১৬ সালের ২২ এপ্রিল রাজশাহীর একটি আবাসিক হোটেলে সুপরিকল্পিতভোবে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে। ঠাণ্ডা মাথায় আবাসিক হোটেল কক্ষের মধ্যে প্রেমিক-প্রেমিকাকে খুন করা হয়। ভারতীয় স্যাটেলাইট চ্যানেল সনি টিভির ক্রাইম পেট্রোল দেখে খুনের পর স্বাভাবিক থাকার এই কৌশল রপ্ত করেছিল তারা। ভেবেছিল তাদের চতুরালি কেউ ধরতে পারবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর পুলিশের তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) টিমের ফাঁদে ধরা পড়ে তারা। এরপরই বের হয়ে আসে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক সব তথ্য। কেবল তাই নয়, পুলিশের এই সংস্থাটি মামলাটির তদন্ত কাজ শেষে আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করেছে। তবে, মামলাটির বিচার কাজ এখনও শুরু হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৯
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।