ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে আমরা রাজাকারের তালিকা দেইনি’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯
‘মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে আমরা রাজাকারের তালিকা দেইনি’

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে আমরা রাজাকার, আলবদর ও আলশামসের কোনো তালিকা দেইনি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

তিনি বলেছেন, আমাদের দেওয়া তালিকাটি দালাল আইনের অভিযুক্তদের তালিকা। তবে এর সঙ্গে একটি নোটে আলাদা করে ৯৯৬ জনের নাম আমরা দিয়েছি।

তারা যেন এই লিস্টের আওতায় না আসে। তারা এই মামলার আসামি কিংবা বিবাদী নয়। সে তালিকা যদি আলাদাভাবে করা হতো হয়তো এই ধরনের ভুলভ্রান্তি হতো না। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবিষয়ে আমি অবশ্যই আহত হয়েছি।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দালাল আইনে যারা অভিযুক্ত ও মামলা হয়েছে তাদের তালিকা দিয়েছি। তবে এর সঙ্গে আমরা একটি নোট দিয়েছি। আমাদের কোথাও ভুলভ্রান্তি থাকলে তা দেখা হবে। এই কাজে যারা ভুল করেছে তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।

একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের নামের তালিকা গত রোববার (১৫ ডিসেম্বর) প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ তালিকা প্রকাশ করেন।  

এ সময় মন্ত্রী বলেন, আমরা প্রথম পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের নামের তালিকা প্রকাশ করেছি। ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে।

এদিকে ওই তালিকা প্রকাশের পর এতে অনেক স্বীকৃত ও ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার নাম আসায় বিভিন্ন মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে বিষয়টি নিয়ে দুঃখও প্রকাশ করেছেন আ ক ম মোজাম্মেল হক।

আর মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কৃষক লীগ আয়োজিত সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো নোট ছাড়াই রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। আমি আশা করবো মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় আরও নিবিড়ভাবে যাচাই-বাছাই করে রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করবে।

 

মন্ত্রণালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা কোনো রাজাকার, আলবদরের তালিকা নয়। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালে দালাল আইনে সে সময় অভিযুক্ত হয়েছিলেন বা অনেকের নামে মামলা হয়েছিল সেই তালিকা। এর মধ্যে অনেকই দালাল ছিলেন, পিস কমিটির মেম্বার ছিলেন। আবার কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে অনেকের নামে মামলা করে দিয়েছিলেন, অনেকের জেলও হয়েছিল, তাদের নামও তালিকায় ছিল। কাজেই আমাদের কাছে যা ছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছিল আপনাদের কাছে যা আছে দিয়ে দেন। তাই আমরা দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকা হুবহু তাদের দিয়েছি। আমরা রাজাকার আলবদর বলে কোনো তালিকা দেইনি।  

মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হলো এর দায় কে নেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আমাদের দিক থেকে কোনো করণীয় ভুল হলে সেটার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত ৩০/৪০ বছর ধরে আমাদের এখানে লিস্ট ছিল সেটার কাগজ পাতলা হয়ে গেছে, নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে, এগুলো উদ্ধার করে আমাদের যে লিস্ট করা হয়েছে সেখানে কোনো করণীয় ভুল থাকলে খতিয়ে দেখবো।

কামাল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের তালিকা তৈরি করা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কাজ। এ কাজ আমাদের নয়। আমাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সহযোগিতা চেয়েছে, যে তথ্য চেয়েছে আমরা স্পষ্ট করে জানিয়েছি, আমাদের কাছে রাজাকার, আলবদর, আলশামসের কোনো তালিকা নেই। আমাদের কাছে রয়েছে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সালে যারা দালাল আইনে অভিযুক্ত হয়েছিলেন কিংবা যাদের নামে মামলা হয়েছিল তাদের তালিকা।

এই ভুলের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভুল যারা করেছেন তারা যদি ইচ্ছাকৃত করে থাকেন তাহলে তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে।  

আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে আবারও স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমার মন্ত্রণালয়ে আলবদর, আলশামস, রাজাকারের কোনো তালিকা নেই। আমাদের কাছে যেটি ছিল দালাল আইনে যারা অভিযুক্ত, কিংবা যাদের মামলা পেন্ডিং ছিল, ভুলবশত যাদের নামে মামলা হয়েছিল। এই আইনটি যখন স্থগিত করা হলো তখন এই মামলাগুলোর কি হবে, কীভাবে নিষ্পত্তি হবে। তখন আমাদের মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের মন্ত্রণালয় সেভাবেই ফাইলগুলো সংরক্ষণ করেছিল। ফলে আমরা যেই লিস্ট পাঠিয়েছি সেখানে করণীয় ভুল হলেও হতে পারে। আমরা এ বিষয়টি দেখবো। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে আমরা আবার জানিয়ে দিয়েছি। এখানে ৯৯৬ জনের কথা বলা হয়েছে সেটা ভুলবশত হোক কিংবা তাদের নাম যেহেতু আসছে সেখানে তাদের নাম মুল আসামি কিংবা বিবাদির জায়গায় যাবে না।  

এঘটনায় অভিযুক্ত মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমিতো আগেই বলেছি এটা কোনো রাজাকার বা আলবদরের লিস্ট নয়। এই লিস্টটা হলো সেই লিস্ট যারা দালাল আইনে আসামি বা বিবাদী হয়েছিল তাদের। সেখানে ৯৯৬ জনের নাম ভুলক্রমে এসেছিল সেই লিস্ট আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৯/আপডেট: ১৮১০ ঘণ্টা 
জিসিজি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।