ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

২৪ কোটির প্রকল্পে ১৮ কোটিই যাবে পরামর্শকের পেছনে!

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২০
২৪ কোটির প্রকল্পে ১৮ কোটিই যাবে পরামর্শকের পেছনে!

ঢাকা: এক প্রকল্পে মোট ব্যয়ের ৭৮ শতাংশই যাবে পরামর্শকদের পেছনে। ঢাকা শহরে বাস রুট যৌক্তিককরণ ও কোম্পানি বেজড বাস পরিচালনার জন্য প্রাথমিক ডিজাইন এবং বাস্তবায়ন পরিকল্পনার জন্য এই পরিমাণে ব্যয় করা হবে।

প্রকল্পের ৯০ জন অভিজ্ঞ পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে। এদের মধ্যে বিদেশি ৩৬ জন এবং দেশি ৫৪ জন।

এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ১১৮ জন অনভিজ্ঞ, ১৮ জন কারিগরি ও ৬ জন ক্রয় পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হবে। অর্থাৎ প্রকল্পের ৭৮ শতাংশই ব্যয় করা হবে এই খাতে।

‘প্রিপারেশন অব কনসেপ্ট ডিজাইন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টশন প্ল্যান ফর বাস রুট রেশিওনেলাইজেশন অ্যান্ড কোম্পানি বেজড অপারেশন অব বাস সার্ভিস ইন ঢাকা’ প্রকল্পের মোট ব্যয় ২৪ কোটি ৫০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। অথচ এর মধ্য থেকে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) পরামর্শক খাতে মোট ১৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা পরামর্শকদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৭৮ শতাংশ। জানুয়ারি ২০২০ থেকে ২০২১ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে এই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

পরামর্শকদের পেছনে এতো বেশি অযৌক্তিক ব্যয় না করে মূল কাজের পেছনে সিংহভাগ অর্থ বরাদ্দের পক্ষে অভিমত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটির আওতায় মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে কনসেপ্ট নেয়া হবে। প্রকল্পটি পরামর্শক বেজড হলেও ২৪ কোটি টাকার প্রকল্পে ১৮ কোটি একেবারেই যৌক্তিক নয়। পরামর্শক খাতে এতো বেশি ব্যয় ধরা হলে নানা প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক। ’


এমনকি মূল পরামর্শক সেবার জন্য কানসালটেন্সি ফার্মের নামও উল্লেখ করেনি ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)।

ডিটিসিএ সূত্র জানায়, ঢাকা শহরে বাস রুট যৌক্তিককরণ ও কোম্পানি বেজড বাস পরিচালনার জন্য প্রাথমিক ডিজাইন করা হবে। বেজ লাইন ইনভেনটরি প্রণয়ন, সার্ভিস প্ল্যান উন্নয়ন, বাস্তবায়ন পরিকল্পনা ও বাস ফ্লিট স্পেসিফিকেশন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস স্টপেজ, বাস লে ওভার, বাস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ঠিক করা হবে। ভাড়া সংগ্রহের স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি প্রণয়নের জন্য প্রাসঙ্গিক পরিবহন সার্ভে পরিচালনা করা হবে।

বিস্তারিত ব্যয় প্রাক্কলনের জন্য রেগুলেটরি অথরিটি ও বাস অপারেটর কোম্পানি গঠনের প্রস্তাব তৈরি করা হবে। বাস পরিচালন পদ্ধতি সংস্কার প্রস্তাবের জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা উন্নয়ন কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে।

প্রকল্পের আওতায় বাস ডিপো ও টার্মিনাল বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ৭ থেকে ৮ জন এশিয়ান কোনো দেশে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ নেবেন। এই খাতে ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। র্যাপিড পাস ও সফটওয়্যারের জন্যও ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

রাজধানীর পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বাস ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ইতিবাচক ও দৃশ্যমান পরিবর্তন আনার জন্য এমন উদ্যোগ নিয়েছে ডিটিসিএ। আধুনিক ব্যবস্থাপনায় উন্নত মানের বাস পরিচালনার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প।

ঢাকা শহরে বর্তমানে বিদ্যমান রুটের সংখ্যা ২৮৯। নতুন ব্যবস্থাপনায় রুটের সংখ্যা কমিয়ে ৯০-এ নামিয়ে আনা হবে। এসব রুটে বাসগুলো পরিচালিত হবে ১০টি প্যাকেজের আওতায়। সর্বোচ্চ ১০টি কোম্পানি বা অপারেটরের অধীনে বাসগুলো পরিচালিত হবে। এসব কোম্পানি পর্যবেক্ষণের জন্য আলাদা সরকারি কমিটি গঠনেরও সুপারিশ করেছে ডিটিসিএ। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ও ঢাকা বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) আদলে এ কোম্পানি গঠিত হবে।

এ পদ্ধতিতে কোম্পানির সঙ্গে অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তিবদ্ধ থাকবে। চুক্তিতে বাসের সেবার মান, ভাড়া ও কিলোমিটারপ্রতি অপারেটরদের নির্ধারিত পাওনার বিষয় উল্লেখ থাকবে। এতে করে রাস্তায় কোনো অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে না। ভাড়া আদায় হবে র্যাপিড পাসের মাধ্যমে। অথচ উদ্যোগটি বাস্তায়নের শুরুতেই পরামর্শক খাতে অযৌক্তিক ব্যয় আবদার করা হলো। পরিকল্পনা কমিশনও পরামর্শক খাতে অযৌক্তিক ব্যয় না করার পক্ষে অভিমত দিয়েছে। তারা এই ব্যয় ৭৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার পক্ষে মত দিয়েছে।

এই বিষয়ে ডিটিসিএ-এর ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আনিসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটাই পরামর্শকের জন্য। এটা একটা স্ট্যাডি প্রকল্প। প্রকল্পে অন্য কোন কম্পোনেন্ট নেই। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৯
এমআইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।