ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

মৃত্যুর মিছিল থামাতে পানি ছেড়ে কোয়ারি ভরাট!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২০
মৃত্যুর মিছিল থামাতে পানি ছেড়ে কোয়ারি ভরাট!

সিলেট: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের আলোচিত নাম শাহ আরেফিন টিলা। খনিজসম্পদ পাথর আহরণে গিয়ে এই স্থানে কোয়ারিতে প্রায়ই প্রাণ হারান শ্রমিকরা। এ যাবত পাথর কোয়ারিতে চাপা পড়ে প্রায় শ’খানেক লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শাহ আরেফিনেই মারা গেছেন অন্তত ২৮ জন। আর গত দুই সপ্তাহে মারা গেছেন দু’জন শ্রমিক।
 

সেই পাথর কোয়ারিতে মৃত্যুর মিছিল থামাতে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করলো উপজেলা প্রশাসন। হাওরের পানি ছেড়ে ভরাট করা হয়েছে কোয়ারি।


 
স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় দেড় মাস আগে শাহ আরেফিন টিলায় প্রবেশের সব রাস্তা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। উদ্দেশ্য ছিল ‘মানুষখেকো’ এ টিলায় অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন বন্ধ করা। কিন্তু তাতেও থামানো যায়নি পাথরখেকোদের। তারা রাতের আঁধারে বিকল্পপথে বিকল্প উত্তোলন করে আসছিল। ফলে রাতেই সরব হয় শত শত ট্রাক্টর।
 
প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতেই কোয়ারির নিয়ন্ত্রকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। পানি সেচের লিস্টার মেশিন দিয়ে গর্ত খুঁড়ে তাতে শ্রমিক নিযুক্ত করে পাথর উত্তোলন করে আসছিলেন।
 
এ অবস্থায় সোমবার স্থানীয় আইয়ূব আলীর গর্তে পড়ে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনায় ফের আলোচনায় এসেছে শাহ আরেফিন টিলা। ফলে টানা ৬ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে প্রশাসন বাঁধ কেটে কোয়ারিতে পানি ঢুকিয়ে দেয়। তাতে পাথর উত্তোলন করে সৃষ্ট বড় বড় গর্তগুলো ভরে যায় পানিতে।  
 
পুলিশ জানায়- শাহ আরেফিন টিলায় পাথর উত্তোলন করে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব গর্তে শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন আচার্যের নির্দেশে শাহ আরেফিন টিলার দু’টি স্থানে বাঁধ কেটে পানি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
 
শাহ আরেফিন টিলার উত্তর দিকে আইয়ূব আলীর গর্তের পাশেই ছিল বিলের পানি। সে পানি বাঁধ দিয়ে আটকিয়ে পাথর তোলা হতো। প্রশাসন শ্রমিক নিয়োগ করে বাঁধের দু’টি স্থান কেটে দেয়। এরপর পানি ঢুকে নিচু গর্ত পানিতে ভর্তি হয়ে যায়। এতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এছাড়াও শাহ আরেফিন বাজারের কাছাকাছি এলাকা বশরের বাড়ির পার্শ্ববর্তী স্থানেও পানি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
 
কোম্পানীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সজল কুমার কানু বলেন, যৌথ টাস্কফোর্সের অধীনে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বিজিবি, পুলিশ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও সুমন আচার্য বিকেল ৪টা পর্যন্ত অভিযান শেষে সাংবাদিকদের বলেন, শাহ আরেফিন টিলায় বাঁধ কেটে ২২টি কোয়ারি পানি দিয়ে সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযানে ২৮টি লিস্টার মেশিন, ৭ হাজার ফুট পাইপ ধ্বংস করা হয় এবং ৩টি ট্রাক্টরের চাকা পাংচার করে দেওয়া হয়। অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত অন্য সরঞ্জামাদিসহ মোট ৪ কোটি ৫১ লাখ টাকার মালামাল ধ্বংস করা হয়।  

সূত্রমতে, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত সিলেটের ৭টি পাথর কোয়ারিতে অন্তত ৭৬ পাথর শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। শুধু শাহ আরফিন টিলায় মারা গেছে অন্তত ২৮ জন, জাফলংয়ে ২১ জন, ভোলাগঞ্জে ১৩ জন, বিছনাকান্দিতে ৫ জন, লোভাছড়ায় ৮ জন এবং উৎমা ছড়া কোয়ারিতে এক পাথর শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছেন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০২০
এনইউ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।