ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

নবজাতক ফেরতসহ ঘর-ভাতা পাচ্ছেন সন্তান বিক্রি করা সেই হাসিনা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২০
নবজাতক ফেরতসহ ঘর-ভাতা পাচ্ছেন সন্তান বিক্রি করা সেই হাসিনা বিক্রি করা সন্তান ফেরত এনে হাসিনার হাতে তুলে দেন ইউএনও এবং ওসি। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: টাকার অভাবে নবজাতক বিক্রি করা লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার সেই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনা বেগম (৩৫) নবজাতক ফেরতসহ সরকারিভাবে পাচ্ছেন ঘর ও ভাতা।

শুক্রবার (৯ অক্টোবর) রাতে নবজাতককে ফেরত এনে হাসিনার হাতে তুলে দেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।

হাসিনা বেগম আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর স্ত্রী। তিনি একই এলাকার তালুক হরিদাস নয়াটারী গ্রামের মৃত আজিজার রহমানের মেয়ে।

জানা গেছে, ১৮/২০ বছর আগে একই গ্রামের টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর সঙ্গে বিয়ে হয় হাসিনার। হাসিনা ছিলেন জোকতারের দ্বিতীয় স্ত্রী। বিয়ের কিছু দিন স্বামীর বাড়িতে থাকলেও পরে হাসিনার ঠাঁই হয় তালুক হরিদাস নয়াটারী বাবার বাড়িতে।
সংসারের খরচ বহন না করলেও স্বামী জোকতার সম্পর্ক রেখেছিল হাসিনার সঙ্গে। এরই মধ্যে তার সংসারে এক মেয়ে ও দুই ছেলের জন্ম হয়। বড় মেয়ে রোসনার বিয়ে দেন।

ফুটো টিনের চালার উপর পলিথিন সাঁটানো একমাত্র ঝুপড়ি ঘরে দুই ছেলে হাসান ও রাসেলকে নিয়ে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান হাসিনা বেগম। করোনাকালে এবং মাঠে কাজ না থাকায় বেকার কৃষি শ্রমিক হাসিনা বেগম স্থানীয়ভাবে ঋণ করে অনাহারে/অর্ধাহারে সংসার চালান। দেনা হয়ে যায় প্রায় ১০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) সকালে হাসিনা বেগম একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। অভাবের মধ্যে সন্তানকে প্রতিপালনের চিন্তায় পড়ে যান হাসিনা। সেসময় তার ভাই নিঃসন্তান কেরামত আলী বোনের সন্তানকে নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু প্রতিবেশী অধির চন্দ্র তার শ্বশুরবাড়ি কুড়িগ্রামের রাজারহাট এলাকার জনৈক দম্পতিকে সন্তানটি দিতে বলেন। এতে বাধা দেন হাসিনা বেগম ও তার বড় ছেলে হাসান।

অধির চন্দ্র রাজারহাটের ওই দম্পতির হাতে নবজাতককে তুলে দিতে হাসিনার স্বামী জোকতার আলীকে ম্যানেজ করেন। এতে হাসিনা ও তার ছেলে রাজি না হলেও জোকতার ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে জোর করে সন্তানকে তুলে দেন রাজাহাটের দম্পতির হাতে। নবজাতক ভাইকে আটকানোর চেষ্টা করে বাবার গালমন্দের শিকার হয় হাসান। নবজাতক বিক্রির টাকায় ঋণের ১০ হাজার পরিশোধ করেন হাসিনা বেগম। কিন্তু নাড়িছেড়া ধন হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছোট ভাইকে রক্ষায় ব্যর্থ হয়ে বড় ভাই হাসান বাবা মায়ের সঙ্গে অভিমান করে ঘর ছেড়ে চলে যায়।

এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) মধ্যরাতে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকমে '২০ হাজারে নবজাতক বিক্রি করলেন মা হাসিনা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি দেখে জেলা প্রশাসক আবু জাফরের নির্দেশে শুক্রবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে ওই বাড়িতে যান আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম। এসময় বিক্রিত নবজাতককে ফেরত নিয়ে আসতে দাতাকে ফোনে জানানো হলে রাতে নবজাতককে ফেরত নিয়ে আসেন গ্রহণকারীরা। এরপর রাতে পুনরায় হাসিনার বাড়িতে যান ইউএনও এবং ওসি। তারা সেই নবজাতককে হাসিনার বেগমের হাতে তুলেন দেন।

এ সময় নবজাতকের জন্য সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহম্মেদের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা হাসিনাকে দেওয়া হয়। এছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় হাসিনাকে প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকাভুক্তসহ জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের আওতায় হাসিনা ও তার ভাই কেরামত আলীকে পৃথক দুইটি ঘর দেওয়ার ঘোষণা দেন ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন।
বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হাসিনা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, ছাওয়া (নবজাতক) ফেরতসহ নগদ টাকা পাইলাম এবং ভাতা ও ঘর দিবার চাইছে। যারা এসব দিল আল্লায় তাদের ভালো করবে।

মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রশাসনকে সহায়তা করায় বাংলানিউজকে ধন্যবাদ জানিয়ে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, প্রতিবেদন দেখে নবজাতককে ফেরত নিয়ে এসে হাসিনা বেগমের কোলে তুলে দিয়েছি। একই সঙ্গে সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহোদয়ের পক্ষে নবজাতকের জন্য ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হাসিনাকে প্রতিবন্ধী ভাতাভুক্তসহ তাকে এবং তার ভাই কেরামতকে ঘর করে দেওয়া হবে। নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরো কোনো প্রয়োজন হলে সরকারিভাবে সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি।

** ২০ হাজারে নবজাতক বিক্রি করলেন মা হাসিনা!

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।