ঢাকা: আমার বাবা আমাকে কালকে ৫০০ টাকা দিলো, সেই টাকা নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যানবাহনের ভাড়া দিয়ে হাসপাতালে এসে আমার বুকে ধন আমার একমাত্র ছেলেকে মৃত দেখলাম। আমার বাবা আমারে কইতো আমি এখন চাকরি নিয়েছি, তোমাকে দামি দামি শাড়ি কিনে দিবো মা।
হে আল্লাহ আমি আর সইতে পারছি না। আমার একমাত্র ছেলে শয়নকে তুমি ফিরিয়ে দাও।
কামরাঙ্গীরচর হাসান নগরে সহকর্মীর ছুরিকাঘাতে ছেলে শয়নের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে ঢামেকে এসে মা শেফালী বেগম বুকফাটা আর্তনাদ করে এইসব কথাই বলতে থাকে।
শেফালী বেগম আরো বলেন, আমার তিন মেয়ে একমাত্র ছেলে সন্তান শয়ন হাসান। স্বামী বিপুল আহমেদ ও তিন সন্তানকে নিয়ে কামরাঙ্গীরচর মুন্সিরহাটি এলাকায় একটি বাসায় ভাড়া থাকি। শয়নের বাবা যাত্রীবাহী বাস চালক। শয়ন হাসান নগর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় বুটিক হাউসে কাজ শিখছিলো।
গতকাল (৯ অক্টোবর) আমাকে বলেছে মা কাজ শেখার বেশি বাকি নেই, যখন আমি বেতন বেশি পাব, তখন তোমাকে আমি দামি দামি শাড়ি কিনে দিবো। তুমি দামি শাড়ি পড়ে থাকবা। ১০ থেকে ১৫ দিন হবে ওই কারখানায় কাজ নিয়েছে সে। কারখানার মালিক এক সপ্তাহের বিল দিয়েছি আমার ছেলেকে। সেখান থেকে আমাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বলেছে মা তুমি এই টাকা খরচ করবা। ঘটনার সংবাদ পেয়ে সেই টাকা নিয়ে যানবাহনে ভাড়া দিয়ে আমি হাসপাতাল এসে আমার ছেলের লাশ দেখলাম। শেফালী বেগম বুকফাটা আর্তনাদ করে বলতে থাকে, আল্লাহ আমার ছেলেকে তুমি ফিরিয়ে দাও।
এদিকে, শয়ন মৃত্যু সংবাদ শুনে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনসহ তার বন্ধুরা হাসপাতালে এসে বলে, খুনি সিরাজ ও শয়ন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। একসঙ্গে তারা চাকরি নিয়েছে। তারা এতোটাই ঘনিষ্ঠ ছিল যে উঠতে বসতে যেখানেই যাক দু’জনে একসঙ্গে যেত। সিরাজ তাকে কেন হত্যা করল কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না নিহতর বন্ধুরা।
কামরাঙ্গীরচর থানার (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, নিহত শয়ন ও সিরাজ দুইজন বন্ধু। দুজনই বুটিক হাউসে কাজ শিখছিল। কারখানার ভিতরে সিরাজ তার সহকর্মী ও বন্ধু শয়নকে বলে অমুক একজনকে ডেকে নিয়ে আসতে। শয়ন তার কথায় সারা না দেওয়ায় এই নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শয়ন সিরাজকে ধাক্কা দিয়ে কারখানায় ফেলে দেয়। এই কারণেই সিরাজ কারখানার সামনে শয়নকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
তিনি জানান, সিরাজকে ধরার জন্য পুলিশ কাজ করছেন। মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০২০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০২০
এজেডএস/ওএফবি