ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

যাত্রীবেশে বাসে থাকতো ডাকাত দলের সদস্য, কেড়ে নিতো সর্বস্ব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২০
যাত্রীবেশে বাসে থাকতো ডাকাত দলের সদস্য, কেড়ে নিতো সর্বস্ব সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।

ঢাকা: ভাড়া নেওয়া একটি বাসে চালক, হেলপার, কন্ডাক্টারসহ ২০ থেকে ২২ যাত্রী আছে। কিন্তু তারা সবাই যাত্রী নয়, ডাকাত দলের সদস্য।

চলতি মাসে ৪ তারিখে এমন একটি বাসে খুন হয়েছিলেন সাভারের লস্কর রবিউল ইসলাম (৪১)।  

এ হত্যাকাণ্ডের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ডাকাতির অভিনব ও ভয়ংকর তথ্য। এই ডাকাত দলের প্রধান পটুয়াখালীর বসির মোল্লা। তাকেসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।  

তারা হলেন-বসির মোল্লা (৪২), শেখ হাফিজ (৩৫), আনোয়ার হোসেন (৩৫), আমির হোসেন (২৮), আল আমিন (২৮), জুয়েল (৩২), নঈম (২২), তপন (২৮), নাজমুল (৩০)। এরইমধ্যে বসির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকিদের বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে বসির ডাকাতি করছেন। আশুলিয়ায় একটি মামলায় ২৬ মাস জেল খাটার পর তিন মাস আগে ছাড়া পেয়ে অভিনব পদ্ধতিতে ডাকাতি শুরু করে। পুরো বাস কয়েকদিনের জন্য ভাড়া নেয় বসির। এরপর তার দলের ৪ জন সদস্যকে ডেকে পাঠায়। তারা প্রত্যেকে আরও ৩-৪ জন করে নিয়ে আসে। এরপর পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী, নিজেদের ২০-২২ জন সদস্যকে বাসে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। অনেক যাত্রী দেখে সাধারণ যাত্রীরা বাসে উঠে। উঠার পর সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে সুবিধামতো স্থানে যাত্রীকে নামিয়ে দেয়।

গত ৪ অক্টোবর ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে নিরালা পরিবহনের একটি বাস ৩ দিনের জন্য ভাড়া করেন ডাকাত দলের প্রধান বসির। বাসটি ভাড়া নেওয়ার পর নিরালা পরিবহনের স্টিকার তুলে ঢাকা-দৌলদিয়া-খুলনা লিখে ডাকাত দলের অন্যদের নিয়ে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয় বসির। নিজেদের কেউ চালক, কেউ হেলপার, কেউ কন্ডাক্টার সেজে একজন দুইজন করে যাত্রী নিতো। পরে তাদের সব কেড়ে নিয়ে নামিয়ে দিতো। বাসটি ভাড়া নেওয়ার পর বসির ও তার দলের সদস্যরা মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী এলাকায় গরু ব্যবসায়ীসহ কয়েকজনকে ডাকাতি করে দৌলদিয়ায় সারা রাত অবস্থান করে। পরদিন ৫ অক্টোবর দৌলদিয়া থেকে ফেরার পথে লস্কর রবিউল ইসলামকে বাসে তুলেন তারা।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার বলেন, রাত ১০টার দিকে নবীনগর থেকে রবিউলকে বাসে তোলা হয়। বাসে উঠার পর তাকে ডাকাতির সময় তিনি বাধা দেন। ডাকাত দলের সদস্যরা কয়েকজন রবিউলকে চেপে ধরেন, কাপড় দিয়ে মুখ বাঁধেন। এতেও কাজ না হওয়ায় ডাকাত দলের নেতা বসির তার হাতে থাকা হুইল রেঞ্জ দিয়ে রবিউলকে আঘাত করেন। এতে বাসের মধ্যেই রবিউলের মৃত্যু হয়। এরপর নির্জন স্থান দেখে রবিউলের মরদেহ বলিয়ারপুর যমুনা ন্যাচারাল পার্কের পাশে ফেলে চলে যায় ডাকাতরা।

বাসায় ফিরতে দেরি হচ্ছিল দেখে রাত ১২টার দিকে রবিউলের মোবাইলের নাম্বারে তার মা কল করেন। অপরপ্রান্ত থেকে এক অপরিচিত ব্যক্তি ফোন রিসিভ করে জানায়, এই নাম্বারের মালিক খুন হয়েছেন। তার মরদেহ হেমায়েতপুরে রাখা হবে। এই বলে কল কেটে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা। এরপর রবিউলের মোবাইল ফোনটি ভেঙে ড্রেনে ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা।

৬ অক্টোবর রবিউলের মরদেহ উদ্ধারের পর অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। খবর পেয়ে রবিউলের পরিবারের সদস্যরা মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেন। এ হত্যায় ছায়া তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্ত করেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সালে ইমরান ও তার দলের সদস্যরা। গোয়েন্দা তৎপরতা ও প্রযুক্তির সহায়তায় ১৩ অক্টোবর ডাকাত দলের প্রধান বসিরকে সাভার থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এসআই সালে ইমরান জানান, ১৪ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বসির। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাভার, ধামরাই, ডেমরাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে জড়িত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জড়িত আরও বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত রবিউলের পরিবারের সদস্যরা। তারা জানায়, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি যেন মৃত্যুদণ্ড হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২০
এমএমআই/এএটি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।