খুলনা: বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের খেলা হরেক রকম পাগল দিয়া মিলাইছে মেলা, মালা কার লাগিয়া গাথিরে মালা/ কার লাগিয়া গাথি?/ অজানা কোন নদীর স্রোতে আমি হারাইয়াছি সাথীরে। একের পর এক মাইকে এ ধরনের গান চলে।
খুলনা মহানগরীর ব্যস্ততম ও বাণিজ্যিক এলাকা ৬ নম্বর ঘাটের শাহে আওলিয়া হযরত আশরাফ আলী মামার মাজারে বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) রাতে গিয়ে এমন গানের আসরের দেখা গেলো।
খুলনার কুখ্যাত খুনি এরশাদ শিকদারের এলাকা নামে পরিচিত ছিলো ঘাটটি। সেখানে রেলওয়ের সরকারি জমিতে আশরাফ মামার নামে মাজার গড়ে উঠেছে।
মাজারে প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে সকাল পর্যন্ত বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গানের আসর বসে। প্রতিটি আসরেই নানা শ্রেণী-পেশার শত শত গানপ্রেমী মানুষের সমাগম ঘটে। প্রতিবছর দুই বার ওরজ মাহফিলও হয় এখানে।
এ আসরের নিয়মিত শিল্পী শাহিদা বাংলানিউজকে বলেন, রাত ১০টার পর গান শুরু হয়। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভক্তদেরও ভিড় বাড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে গান শুনতে আসেন।
স্থানীয়রা জানান, ভৈরব নদের ৬ ও ৭ নম্বর ঘাটে বিশুদ্ধ বাতাস আর নদীর সৌন্দর্যের টানে ছুটে আসেন অনেকে। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এখানে আলো ও বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেউ আসেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে, কেউ আসেন পরিবার নিয়ে। তাদের কেউ নদীর পাড়ে বসে আড্ডা দেন, কেউবা মগ্ন প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে, আবার কেউ কেউ ভৈরবের বুকে বেড়ানোর জন্য নৌকায় উঠে পরেন। বৃহস্পতিবার রাতে যারা এখানে ঘুরতে আসেন তারা মামার মাজারে গানের আসরেও যান। মাজার এলাকার বাসিন্দা রবিউল বলেন, এখানে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আসেন। গান শুনে অনেকে শিল্পীদের খুশি হয়ে টাকা দেন। রাত ১০ থেকে ফজরের আজান পর্যন্ত এ আসরে চলে গান।
খাদেমরা বলেন, শাহে আওলিয়া হযরত আশরাফ আলী মামার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের রাজাপুর থানার ভাতকাঠি। বহুকাল আগে তিনি খুলনায় এসে এখানে বসবাস করেন। পুকুর খন করেন। মসজিদ নির্মাণ করেন। মানুষকে ঝাড়ফুঁক দিতেন। অনেকে উপকার পেতেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তার ভক্ত তৈরি হয়। তিনি খান জাহান আলীর (র.) মুরিদ ছিলেন। আশরাফ মামা ২০০২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর খান হাজান আলীর মাজারে মারা যান। তাকে বাগেরহাটের খানজাহান আলীর মাজারের ওখান থেকে এখানে ৬ নম্বর ঘাট এলাকায় তার মসজিদের পাশে কবর দেওয়া হয়। তার কবরকে কেন্দ্র করে এখানে মাজার গড়ে উঠে। তিনি জীবীত থাকা অবস্থায় এখানে আসর বসতো। তার ভক্তরা এখানে আধ্যাতিক, মারফতি, ভক্তিমূলক গান করতো।
মাজারে খাদেম নজরুল ইসলাম বলেন, অর্ধশত বছর ধরে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে এখানে গানের আসর বসে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্ত ও শিল্পীরা নারী-পুরুষ, দেবর-ভাবি, ননদ-ভাবি, শরিয়ত-মারফত, গুরু-শিষ্য, বউ-শাশুড়ি বিষয়ে বিভিন্ন গানসহ লালনগীতি, কবিগান, বিজয় বিচ্ছেদের গান পরিবেশন করেন।
এ মাজারের পাশের ভ্রাম্যমাণ দোকানি ইমাম হোসেন বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমি এখানে ব্যবসা করি। আমার দোকানে রাত ভর চলে বেচাকেনা। বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তরা এখানে আসেন। রাতব্যাপী চলে গানের আসর।
এ আসরে গান শুনতে আসা নগরীর ইকবাল নগর এলাকার বাসিন্দা নেয়ামুল বারি হুজাইফা ও খানজাহান নগর এলাকার বাসিন্দা রোবহান উদ্দিন জুয়েল বলেন, নদীর পাড়ে ঘুরতে আসছিলাম। দেখলাম এখানে জমজমাট গানের আসর হচ্ছে। তাই দেখতে এলাম।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২০
এমআরএম/এএটি