ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ছোঁ মেরেই দৌড়, গায়েব মোবাইল-মানিব্যাগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২০
ছোঁ মেরেই দৌড়, গায়েব মোবাইল-মানিব্যাগ

ঢাকা: বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন টিটু আহমেদ। টঙ্গী থেকে ঢাকায় ফিরতে এনা পরিবহনের একটি বাসে চেপে বসেন।

বাসটি যখন আব্দুল্লাহপুরে এসে যানজটে পড়ে, তখন দিনের আলো শেষ। সন্ধ্যা নেমেছে। সামান্য বৃষ্টিও হচ্ছিলো। জানালার পাশের সিটে বসা টিটু মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। হঠাৎ জানালা দিয়ে ঢুকে গেল কম বয়সী একটি হাতের থাবা, চোখের পলকেই ছোঁ মেরে দৌড়। টিটুর মোবাইল ফোনটি গায়েব। চিৎকার দিতেই ছেলেটি যানজটে থাকা পরিবহনের ফাঁক গলে মুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে গেল।  

গত ৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। টিটু আহমেদের মোবাইল ফোনটি টানা পার্টি বা ছিনতাই চক্রের এক সদস্য ছোঁ মেরে নিয়ে যায়।

গত ১১ অক্টোবর রাতে রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের ঢালে গোলাম রসুল নামে এক ব্যক্তি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। তার সখের মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় তারা। গোলাম রসুল ধানমন্ডির একটি ইনস্টিটউটে ভাষা বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত। ওই রাতে তিনি রিকশাযোগে রামপুরার বাসায় ফিরছিলেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, একটি মোটরসাইকেল আমার রিকশার সামনে এসে দাঁড়ায়। মোটরসাইকেলে ২ জন ছিলো। তারা আমার হাতে থাকা মোবাইল ফোনটি চোখের পলকেই ছিনিয়ে নেয় এবং দ্রুত পালিয়ে যায়।

সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হর মামেশাই ঘটছে এমন ঘটনা। সড়কে, পথে বা বাসে চলাচলের সময় শুধু টিটু আহমেদ বা গোলাম রসুলই নন, তাদের মতো অনেকেই প্রতিনিয়ত এমন বিপদে পড়ছেন। টানা পার্টি বা ছিনতাই চক্রের খপ্পরে পড়ে খোয়াচ্ছেন স্মার্ট ফোন, মানিব্যাগ, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিস।

থানায় অভিযোগ করে কোনো লাভ হয় না বলে এসব ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে বেশিরভাগ মানুষই থানায় অভিযোগ দিতে যাচ্ছেন না। ফলে প্রতিদিন কত ঘটনা ঘটছে, তার প্রকৃত চিত্রও পাওয়া যাচ্ছে না।  

সাধারণ মানুষ বলছেন, ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে। কিন্তু পুলিশ বলছে, কম।  

ভুক্তভোগী টিটু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে কী হবে। মোবাইল ফোন তো আর পাওয়া যাবে না।

উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে বলেন, উত্তরা এলাকায় টানা পার্টির বিষয়ে আমাদের উত্তরা পশ্চিম থানা, উত্তরা পূর্ব থানা, বিমানবন্দর থানা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। টানা পার্টি ও ছিনতাইকারী দলের সদস্য ধরাও পড়ছে। বিমানবন্দর এলাকায় যারা ধরা পড়ছে, তাদের সংশ্লিষ্ট থানায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় ধরা পড়া ছিনাতাইকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আমরা আদালতে পাঠাচ্ছি।  

তিনি বলেন, বর্তমানে টানা পার্টির তৎপরতা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে তা বলবো না, তবে আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে।  

ভুক্তভোগী ও যাত্রীরা জানান, প্রায়ই দেখা যায়, গণপরিবহনে যাত্রী ওঠার সময় গেটের সামনে একটা অহেতুক ভিড়। যাত্রীদের দুই পাশ থেকে ধাক্কাধাক্কি ও চাপাচাপির পর আবার স্বাভাবিক। মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন গায়েব করার জন্য ওই ভিড় সৃষ্টি করে টানা পার্টির সদস্যরা।

ভুক্তভোগীদের অনেকেই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেও খোয়া যাওয়া বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন খুব কমই উদ্ধার হয়। এ বিষয়ে থানা পুলিশও খুব বেশি তৎপরতা দেখায় না।  

পুলিশ বলছে, বর্তমানে রাজধানীতে টানা পার্টির দৌরাত্ম্য ও ছিনতাই তৎপরতা অনেকটাই আইশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি রয়েছে। প্রায় সময় টানা পার্টি ও ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।  

গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, এলাকা, পাড়া-মহল্লা বা রাস্তার পাশে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে থাকে টানা পার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। এদের কোনো ঘর বাড়ি নেই। এলাকাভিত্তিক এসব চক্রের স্থানীয় কিছু লিডার থাকে। যারা তাদের বিভিন্ন সময় শেলটার দিয়ে থাকে। রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, বিমানবন্দর, মহাখালী, রামপুরা বাড্ডা, নতুনবাজার, খিলক্ষেত কুড়িল, যাত্রাবাড়ী, নিউমার্কেট, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় এসব টানা পার্টির সদস্যরা ওঁৎ পেতে থাকে। সুযোগ বুঝে তারা ছিনতাই কর্ম চালায়।  

তিনি জানান, মোবাইল ফোন হারিয়ে গেলে অনেকেই সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু ছিনতাই হলে কেউ মামলা করতে চান না। জিডি করার পর অনেক ভুক্তভোগী পরে খোঁজও নেয় না। এতে হারানো বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনের উদ্ধার তুলনামুলক কম।  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ওয়ালিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, টানা পার্টি ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তৎপর রয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন বৈঠকে এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।  

তিনি বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন এলাকা থেকে টানা পার্টি ও ছিনতাই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দারাও নজরদারি করছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২০
এসজেএ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।