ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ব্যাপারীদের সিন্ডিকেটে সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা 

উত্তম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২০
ব্যাপারীদের সিন্ডিকেটে সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না চাষিরা  যশোরের পাইকারি সবজি বাজার। ছবি: বাংলানিউজ

যশোর: আসছে শীতকে সামনে রেখে প্রচুর সবজি উৎপাদন করছেন যশোরের চাষিরা। বাড়তি লাভের আশায় তিন মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে মাঠের পর মাঠে সবজির আবাদে ব্যস্ত তারা।

 

তবে প্রতিবছরের মতো এবারও পাইকারি বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে ভালো দাম পাচ্ছেন না চাষি। তবে বাজারে সবজির দামের ঊর্ধ্বগতি এমন বেসামাল হলেও কৃষকদের কাছ থেকে খুব অল্প দামেই এসব সবজি কিনছেন ফড়িয়ারা। আর ২০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে কেনা সবজি খুচরা বাজারে দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি চলছে। ফড়িয়া ব্যাপারীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছে মতো দামে সবজি কিনছেন চাষির কাছ থেকে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, শাক-সবজি উৎপাদনে হেক্টর প্রতি গড় ফলন সর্বোচ্চ ও দেশের সবজির চাহিদা পূরণে বিশেষ অবদান রাখায় জেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছে যশোর। সারা বছর যশোর জেলায় সবজির আবাদ হয়ে থাকে। বছরে ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষিরা বিভিন্ন ধরণের সবজির আবাদ করেন। যা থেকে উৎপাদন হয় প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন। এসব সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের মোট চাহিদার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সবজি উৎপাদন হয় যশোরে।  যশোরের পাইকারি সবজি বাজার।  ছবি: বাংলানিউজ

জেলায় সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়েছে শুধু সদরেই - দুই হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে রয়েছে বেগুন, ফুলকপি, পটল, করলা, লাউ, শসা, কুমড়াসহ নানান সবজি। আর যশোর সদর থেকে এসব সবজির ক্ষেতের কোনটারই দূরত্ব ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটারের বেশি নয়। তাই ক্ষেত থেকে শহরের বাজারে পরিবহন খরচ এত বেশি নয়, যে জন্য কৃষকদের কাছ থেকে কেনা সবজির দর দুই থেকে তিনগুণ হতে পারে।  

সরেজমিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, যশোরের শাকসবজির বাজার এতটাই চড়া, যার ফলে শুধু সবজি কিনতে হলেই কাড়ি কাড়ি টাকা গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের। দাম হু হু করে বেড়ে চলায় নাভিশ্বাস ওঠার দশায় সীমিত আয়ের মানুষরা। মাছ-মাংস কেনা তো দূরে থাক, সবজি কিনতে গিয়ে পকেট খালি হয়ে যাচ্ছে তাদের। বাজার ভর্তি শীতকালীন সবজি থাকলেও তাতে হাত দেওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে ৭০ টাকার নিচে কোনও সবজি নাই যশোরের বাজারে।  

সবজি চাষিদের অভিযোগ, খুচরা বাজারে সবজির আকাশ ছোঁয়া দাম থাকলেও পাইকারি বাজারে নামমাত্র দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।

ক্রেতারা বলছেন, দাম বাড়ার মতো যৌক্তিক কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না। তাদের দাবি, বাজারে শীতকালীন সবজির সরবরাহ অনেক দিন ধরেই। শীতকালের সবজিতে বাজার ভর্তি। তারপরও দামের কেন এমন ঊর্ধ্বগতি, সেটি কারোই বোধগম্য নয়।

বাজারে শীতকালীন সবজির দাম বেশি হলেও কৃষকরা তাতে খুব বেশি একটা লাভবান হচ্ছেন না। মাঠ থেকে কম দামে তরকারি কিনে বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে পকেট ভর্তি করছেন ফড়িয়ারা। আবার বাজারে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে যারা ফড়িয়াদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বাড়তি দামের এই মুনাফা লুটছেন। যশোর অঞ্চলের কয়েকজন কৃষক, খুচরা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে।  

শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) যশোরের বড় বাজারে খুচরা মুলা কেজি প্রতি ৪৫ টাকা, লাউ মান ভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পেঁপে কেজি প্রতি ৪৫ টাকা, কাঁচা কলা কেজি প্রতি ৬০ টাকা, বেগুন কেজি প্রতি ৮৫ টাকা, শিম কেজি প্রতি ১২০ টাকা, টমেটো কেজি প্রতি ৮৫ টাকা, পটল কেজি প্রতি ৬০ টাকা, করলা কেজি প্রতি ১১০ টাকা, ঢেঁড়স কেজি প্রতি ৬০ টাকা, ফুলকপি ১১০ টাকা, গাজর কেজি প্রতি ৮০ টাকা, বরবটি কেজি প্রতি ৮০ টাকা, ঝাল ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।  

কিন্তু যশোরের এসব সবজি সরবরাহ করে যশোরের দেশের অন্যতম সবজির বৃহৎ বাজার যশোরের সাতমাইল হাট। অথচ, বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) এই হাটে এসব সবজি বিক্রি হয়েছে অর্ধেকের দামে। এদিন পাইকারি দরে মুলা কেজি প্রতি ২৫ টাকা, লাউ মান ভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, কাঁচা কলা কেজি প্রতি ২০ টাকা, বেগুন কেজি প্রতি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, পটল ৪০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বরবটি ৪০ টাকা, ঝাল ১৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে।  

ঢাকার পাইকারি সবজি ব্যাপারী আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আগে ঢাকায় যেতে ট্রাক ভাড়া লাগতো ১৩-১৪ হাজার টাকা কিন্তু এখন ভাড়া নিচ্ছে ২০ হাজার টাকা। পরিবহন খরচ, শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক খরচ দিয়ে সবজির দাম বেড়ে যায় বলে জানান তিনি। তার পরেও এতে মালের দাম বেশি পড়লেও আমরা ঢাকায় সবজি নিয়ে দাম পাচ্ছি না। যশোরের খুচরা সবজি বাজার।  ছবি: বাংলানিউজ

যশোর সদরের চুড়ামন কাঠি গ্রামের সবজি চাষি আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন সকালে শহর থেকে পাইকারি সবজি ব্যবসায়ীরা আসেন সবজি কিনতে। এখানকার ক্ষেত থেকে তারা ১৫শ’ থেকে শুরু করে ১৮শ’ টাকা মণ দরে শিম কিনে নিয়ে যায় শহর থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, যশোর শহরের কাঁচা সবজির বাজারে প্রতি কেজি শিম ১২০ টাকা দরে বিক্রি করে। কিন্তু মাঠ থেকে ফড়িয়ারা এসব সবজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে কিনছেন।

যশোর বড় বাজারে সবজি কিনতে আসা শহরের তালতলা এলাকার বাসিন্দা আলফাজ হোসেন সবজির বাড়তি দাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে প্রচুর শীতের সবজি এসেছে। এমন নয় যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলছে। যার কারণে দাম বৃদ্ধি পেতে পারে।  

তবে ফাহিম হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, দেশের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা ও সবজি উৎপাদন ভালো না হওয়ায় সবজির দাম বেশি।

যশোর জেলা বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। ক্রেতা ও সবজি চাষির মধ্যে দামের এতো তফাতের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, মূলত স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে চাষিরা সবজির ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২০
ইউজি/জেআইএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।