চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফের কোষাধ্যক্ষ ও যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের ৬ বছর পূর্ণ হয়েছে শুক্রবার।
২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর শিবগঞ্জ স্টেডিয়ামের কাছে পরিকল্পিতভাবে মনিরুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করে তারই বন্ধু ও সহকর্মীরা।
বিচারকার্য শেষে ২০১৯ সালের ২০ জুন ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক। তবে উচ্চ আদালতে আসামিরা আপিল করায় রায় কার্যকর আদেশ অপেক্ষমান।
কিন্তু মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি মো. সিরাজুল ইসলাম মুন্সিকে এখনো তার চাকরি থেকে বহিষ্কার ও এমপিও বাতিল করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন নিহত মনিরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী রহিমা বেগম।
জানা গেছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি সিরাজুল ইসলাম মুন্সি বালিয়াদিঘী দারুস সুন্নাহ গোলিস্থীয়া দাখিল মাদ্রাসায় সহ-সুপার পদে চাকরিতরত। আর বালিয়াদিঘী দারুস সুন্নাহ গোলিস্থীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মালেকের দাবি আদালতের রায় ঘোষণার কিছুদিন পরেই সিরাজুল ইসলাম মুন্সিকে চাকরি থেকে বহিষ্কার আদেশ চেয়ে নীতিমালা অনুযায়ী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ডিজি বরাবর আবেদন পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে নিহত মনিরুল ইসলামের স্ত্রী ও মামলার বাদী রহিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমার স্বামীকে আসামিরা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আদালতও এর রায় ঘোষণা করেছেন। আমি এ রায়ে সন্তুষ্ট। তবে আসামিদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আপিল করায় রায় কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছি।
কিন্তু দুঃখজনক বালিয়াদিঘী দারুস সুন্নাহ গোলিস্থীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মালেক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সিরাজুল ইসলাম মুন্সিকে এখন পর্যন্ত চাকরিতে বহাল রেখেছেন। যা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, যেনো সিরাজুল ইসলাম মুন্সিকে দ্রুত তার চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বালিয়াদিঘী দারুস সুন্নাহ গোলিস্থীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল মালেক বলেন, আমি ও গভর্নিং বডি আদালতের রায় ঘোষণার কিছুদিন পরেই মো. সিরাজুল ইসলাম মুন্সিকে চাকরি থেকে বহিষ্কার আদেশ চেয়ে নীতিমালা অনুযায়ী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের ডিজি বরাবর আবেদন পাঠিয়েছি। তার বেতনভাতাও বন্ধ রয়েছে। কিন্তু এখনো তার এমপিও বন্ধ হয়নি। এই এমপিও বন্ধ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এমপিও বন্ধ করতে পারে একমাত্র মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মীর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার জানামতে বালিয়াদিঘী দারুস সুন্নাহ গোলিস্থীয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে এ বিষয়ে কেউ কিছু জানাননি। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড গঠন করা হয় এবং বোর্ড অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চাকরিচ্যুতসহ যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে। কিন্তু আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বালিয়াদীঘি দারুস সুন্নাহ গোলিস্থায়ী দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার সিরাজুল ইসলাম মুন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমাদের কাছে এখনো অভিযোগ আসেনি।
উল্লেখ্য ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর দুপুরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আখেরুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মুন্সিসহ আসামিরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ মনিরুল ইসলামকে তার শিয়ালমারা গ্রামের বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর সন্ধ্যায় শিবগঞ্জ স্টেডিয়ামের কাছে মনিরুলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মনিরুলের স্ত্রী রহিমা বেগম বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় ১৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বিচারকার্য শেষে ২০১৯ সালে ২০ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এর মধ্যে সিরাজুল ইসলাম মুন্সি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যতম আসামি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০২০
আরএ