সিলেট: সিলেট পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যুর ঘটনার মূলহোতা বরখাস্ত হওয়া উপ পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়া এখনও পলাতক।
লোমহর্ষক এ হত্যার ঘটনার পক্ষকাল পেরোলেও ধরা পড়েননি এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এ মামলায় পুলিশের আরো তিন সদস্যকেও যেকোনো মুহূর্তে গ্রেফতার দেখানো হতে পারে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্রমতে, আলোচিত এ মামলায় বন্দরবাজার ফাঁড়ির দুই কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস ও হারুনুর রশিদকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে বরখাস্তকৃত কনস্টেবল হারুনুর রশিদ ৫ দিনের রিমাণ্ডে আছেন। বরখাস্তকৃত অপর কনস্টেবল টিটুকেও দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের রিমাণ্ডে নিয়েছে পিবিআই। এর আগে তাকে প্রথম দফায় ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এছাড়া এসআই আকবরকে পালাতে সহায়তা করায় বন্দরবাজার ফাঁড়ির টু-আইসি এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাকে পুলিশ লাইন্সে কড়া হেফাজতে রাখা হয়েছে। ঘটনার পর বরখাস্ত হয়ে পুলিশ লাইন্সে থাকা এএসআই আশেকে এলাহী ও কনস্টেবল তৌহিদের বিরুদ্ধে রায়হান হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পিবিআই। যেকোনো মূহুর্তে তাদের এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে।
অপরদিকে সেই রাতে রায়হান উদ্দিনের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী সাইদুর রহমানকে রোববার (২৫ অক্টোবর) সকালে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পিবিআই।
পিবিআই এর ইন্সপেক্টর মাহিদুল ইসলাম জানান, রায়হানের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারী সাইদুর রহমান রোববার সকাল ১১টার দিকে পিবিআই অফিসে হাজির হলে সন্দেহজনক হিসেবে তাকে আটক করা হয়।
গত ১১ অক্টোবর সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে গুরুতর আহত হন রায়হান। ওইদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহীসহ পুলিশ সদস্যরা। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে মারা যান রায়হান।
পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নগরের কাস্টঘরে গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় সিলেট কোতোয়ালি থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশী নির্যাতনে প্রাণ হারান রায়হান। নিহত রায়হান নগরের আখালিয়া নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে সহকারী হিসেবে কাজ করতেন।
এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ এনে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিতে থাকে। মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পেয়ে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত ও তিন জনকে প্রত্যাহার করেন।
মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে পিবিআই তদন্ত কার্যক্রম চালায়। নিহতের মরদেহ কবর থেকে তুলে পুনঃময়নাতদন্ত করা হয়। তাতে রায়হানের দেহে ১১১টি আঘাতের চিহ্ন মেলে ফরেনসিক রিপোর্টে।
এরইমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই আকবর পলাতক থাকলেও পুলিশ হেফাজতে থাকা কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে ২০ অক্টোবর ও হারুনুর রশিদকে ২৪ অক্টোবর গ্রেফতার দেখিয়ে ৫ দিনের রিমাণ্ডে নেওয়া হয়। ২২ অক্টোবর এসএমপি কমিশনার গোলাম কিবরিয়াকে বদলি করা হয়। এছাড়া রোববার নিহত রায়হানকে ছিনতাইকারী হিসেবে অভিযোগকারী শেখ সাইদুর রহমানকে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই।
রায়হান নিহতের ঘটনায় 'বৃহত্তর আখালিয়া (বারো হামছায়া) সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে এলাকাবাসী বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে তৎপর রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৭, ২০২০
এনইউ/আরএ