ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

৮০ বছর বয়সেও জীবনচাকা রিকশার প্যাডেলে

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২০
৮০ বছর বয়সেও জীবনচাকা রিকশার প্যাডেলে

ঢাকা: বাংলাদেশের গড় আয়ু বিবেচনায় কিছুটা ভাগ্যবান মো. আবুল কাশেম। তবে ভাগ্য তার সুপ্রসন্ন নয়।

বয়স ৮০ বছর। শরীর এই বয়সে চলে না মানুষের। তবু জীবিকার তাগিদে রিকশার প্যাডেলে জীবনের চাকা ঘোরান কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার জতীনের হাট গ্রামের এই বৃদ্ধ।  

আবুল কাশেমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বয়স ৮০ বছর ৫ দিন। তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, আদাবর, শ্যামলী ও আশপাশের এলাকায় রিকশা চালান। বয়সের কারণে খুব বেশি দূরের ভাড়ার যাত্রী তিনি নিতে পারেন না। যে বয়সী একজন মানুষের পরিবারের সদস্যদের আদর-যত্ন, ধর্ম-কর্ম করে সময় অতিবাহিত করার কথা, সেই বয়সেও আবুল কাশেম তপ্ত রোদ অথবা বৃষ্টির মধ্যেই রিকশা নিয়ে ছুটে চলেন পথে পথে।  

কারণ এই বয়সেও রিকশার চাকা থামলেই স্ত্রী-পুত্রসহ নিজেকেও না খেয়ে থাকতে হবে তার।  

এই বয়সেও কেন রিকশা চালান- এই প্রশ্নে কিছুটা দুঃখ ও বিব্রতবোধ করে তিনি বলেন, রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয়। অনেক সময় একদিন রিকশা চালালে তার পরের দিন অসুস্থতার কারণে চালাতে পারি না। সারা শরীর এবং হাড্ডিতেও ব্যথা করে। কিন্তু রিকশা না চালিয়ে উপায় নেই। বাড়িতে টাকা না পাঠালে বউ ছেলে কী খাবে? 

তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামের বাড়ির পাঁচ শতক জায়গার মধ্যে থেকে তিন শতক জায়গা দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য খরচ করেছেন। বর্তমানে তার দুই শতক জায়গা ছাড়া আর কোনো সহায় সম্বল নেই। তার চার মেয়ে ও একটি ছেলে। আরও তিন মেয়ে মারা গেছেন। মেয়েদের সবার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর তারা যার যার সংসার নিয়ে আলাদা থাকেন। ছোট ও একমাত্র ছেলে দবির উদ্দিন পড়াশোনা করেন। তাই বর্তমানে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি।

প্রতিদিন জোহরের নামাজের পর রিকশা চালানো শুরু করেন। কোনোদিন রাত ১০টা, কোনোদিন ১২টা পর্যন্ত চালিয়ে রোজগার হয় ৪শ থেকে ৫শ টাকার মতো। এরমধ্যে রিকশার জন্য মালিককে ১শ টাকা জমা দিতে হয়। নিজের খাবার খরচ রেখে বাকি টাকা তিনি বাড়িতে পাঠিয়ে দেন স্ত্রী ও সন্তানের জন্য।  

আবুল কাশেম অনেকটা আক্ষেপ করে বাংলানিউজকে বলেন, আমি বুড়া বলে অনেকে আমার রিকশায় চড়তে চায় না। আবার অনেক যাত্রী তাড়াতাড়ি বা জোরে চালাতে বললে পারি না, অনেক যাত্রী তখন রাগ করেন, অনেক সময় রিকশা থেকে নেমেও যান। তখন আমার অনেক কষ্ট লাগে। আমিতো সব যাত্রীকেই তাড়াতাড়ি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতেই চাই, কিন্তু বয়সের কারণে পারি না।
 
রিকশা চালানোর মতো এমন পরিশ্রমের কাজ না করে যেসব কাজে কম পরিশ্রম তেমন কাজ করেন না কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমারতো এখন শেষ বয়স। কখন কী হয় জানি না। একা একা ঢাকায় থাকতেও কষ্ট হয়। মাঝে মধ্যে কষ্টে আমার চোখের পানি চলে আসে, অসুখ-বিসুখ হলেও দেখার কেউ নেই। গ্রামের বাড়িতে ছোট একটা দোকান করতেও কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা লাগবে, সেই টাকাওতো আমার কাছে নেই। তাই বাধ্য হয়ে রিকশা চালাই।

তিনিও আরও বলেন, আমার যদি বড় কোনো ছেলে থাকতো, কাজ-কাম করে আমাদের দেখাশোনা করতো তাহলে আমি নামাজ-কালাম পড়তাম, আল্লার নাম নিয়ে সময় কাটাতাম। কিন্তু সেটা আমার ভাগ্যে নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০২০
আরকেআর/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।