ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০৬ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

স্বাধীনতার বছরে দেশে বৈদেশিক অনুদান ৮৫%, বর্তমানে ২-৩%

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২০
স্বাধীনতার বছরে দেশে বৈদেশিক অনুদান ৮৫%, বর্তমানে ২-৩%

ঢাকা: স্বাধীনতার পরপরই দেশে বৈদেশিক অনুদান ছিল ৮৫ শতাংশ, আর চলতি অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ২-৩ শতাংশ। বৈদেশিক সহায়তা সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা তথ্য থেকে এ পরিসংখ্যান জানা যায়।


 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (২৩ নভেম্বর) ভার্চ্যুয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বৈদেশিক সহায়তা সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়।
 
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৭১-৭২ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত যদি একটা তুলনা করি দেখা যাবে, ১৯৭১-৭২ সালে আমাদের বৈদেশিক সহায়তার মধ্যে গ্র্যান্ট (অনুদান) ছিল সর্বোচ্চ ৮৪/৮৫/৮৬ শতাংশ, ঋণ ছিল ৬-৮ শতাংশ। ম্যাক্সিমামটাই দান হিসেবে আসতো।
 
২০০৯-১০ সালের দিকে গিয়ে অনুদান এসেছে ৩০ শতাংশের মতো, ৭০ শতাংশের মতো আসল ঋণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অনুদান এসেছে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশের মতো, আর ৯৫ শতাংশই ঋণ হিসেবে।
 
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কিন্তু এটা থেকে বোঝা যাচ্ছে, কীভাবে শিফট হয়ে যাচ্ছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে অনুদান আরও কমে গেছে, ২/৩ শতাংশের মধ্যে রয়েছে, ৯৭ শতাংশই এসে‌ছে লোন হিসেবে। আমরা আর দানের উপর নির্ভর করছি না। আমরা আমাদের নিজস্ব দক্ষতার উপর নির্ভরশীল।
 
‘সবচেয়ে মজার বিষয় হলো আমরা কখনো রি-পেমেন্টের ক্ষেত্রে কোনো দিনই ডিফল্ডার হইনি। এটা একটা বড় সাকসেস। ’
 
তিনি বলেন, ১৯৯৭-৯৮ সালে আমাদের ডিসবার্সমেন্ট (অর্থ ছাড়) ছিল ৭৪৮ মিলিয়ন ডলার তখন আমাদের জিডিপির ৩০ দশমিক ৪৭ শতাংশ ছিল ঋণের পরিমাণ। ২০১৯-২০ সালে আমাদের ডিসবার্সমেন্ট হচ্ছে ৭ হাজার ১২১ মিলিয়ন ডলার কিন্তু এটা আমাদের জিডিপির মাত্রা ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এর মধ্যে আমাদের ডমেস্টিক ইনভেস্টমেন্ট অনেক বেড়ে গেছে। তাই এত টাকা বাড়ার ফলেও কিন্তু সেই সঙ্গে জিডিপির সঙ্গে এর অনুপাতটা অনেক কমে এসেছে।
 
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের বৈদেশিক ঋণ ৪৪ হাজার ২৩ মিলিয়ন ডলার। এটা জিডিপির ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এরমধ্যে ৩৭ শতাংশ বিশ্ব ব্যাংকের, ২৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ এডিবি, জাইকার ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ, চীনের ৬ দশমিক ৮১, রাশিয়ার ৬ দশমিক ১৪, ভারতের এক দশমিক ৩ এবং অন্যান্য ৬ দশমিক ৪ শতাংশ- এই হচ্ছে আমাদের বৈদেশিক ঋণ।
 
তিনি জানান, ১৯৮৯-৯০ অর্থবছরে আমাদের এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) ছিল ৫ হাজার ১০৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে বৈদেশিক সাহায্য ছিল ৩ হাজার ২৫৬ কোটি টাকা। এর মানে এডিপির ৬৩ শতাংশ ছিল বৈদেশিক সহায়তা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এডিপির বরাদ্দ ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এডিপিতে ফরেন এইডের কন্ট্রিবিউশন ছিল ৩৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমাদের এডিপি হয়ে গেছে এক লাখ ৭৬ হাজার ৬২০ কোটি টাকা, বৈদেশিক সাহায্য আসছে ৫১ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। বৈদেশিক সাহায্য বেড়েছে কিন্তু শতকরা নেমে এসেছে ২৯ দশমিক ২৫-এ। আমাদের নিজস্ব বিনিয়োগ এত বেড়ে গেছে যে, বাইরের লোন এলেও এটা শতাংশের হারে অনেক নিচে।
 
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের ঝুঁকি নেই। বৈদেশিক ঋণ যখন জিডিপির ৪০ শতাংশ বা এর বেশি হয়ে যায় তখন ঝুঁকি থাকে। আমাদের জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণ হলো ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আমরা অনেক সেফটিতে আছি আল্লাহর রহমতে। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করছি জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ২০ শতাংশ পর্যন্ত সেইফটি রেঞ্জ। আমরা অনেক নিচে আছি।
 
কী কী দেওয়া হয়েছে এবং এরপর আবার অসুবিধা হলে কী করবে সে বিষয়ে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
 
করোনাকালে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম অবহিতকরণ
ত্রাণ মন্ত্রণালয় করোনা ভাইরাস মোকাবিলার সময় বেশকিছু নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এসময় দুই লাখ ৩৫ হাজার ৪২৭ মেট্রিক টন চাল বিতরণ এবং এক কোটি ৯৬ লাখ ৭২ হাজার ২৬৪ টাকার ত্রাণ দিয়েছে। শিশুখাদ্য কিনতে ২৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা দিয়েছে। গো-খাদ্য কিনতে তিন কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ঢেউটিন কিনতে পাঁচ হাজার ৯০০ বান্ডিল। গৃহ নির্মাণের জন্য এক কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এক লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন ভিজিএফ চাল এক কোটি ছয় হাজার ৮৬৯টি পরিবারের মধ্যে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে এক লাখ ৯৮ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। কোভিড ও আম্পান মিলিয়ে এসব বিতরণ করা হয়েছে। তবে ৯০ শতাংশই কোভিডের ক্ষেত্রে দিয়েছে।
 
তিনি জানান, গত ১৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ১৭ হাজার পাঁচটি দুর্যোগ সহনীয় গৃহ উদ্বোধন করেছেন, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে দেওয়া হয়েছে।
 
এছাড়া রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে ৩২ হাজার ২০০টি দুর্যোগ সহনীয় গৃহ বাবদ ৫৫০ কোটি ৬২ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২০
এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।