ঢাকা: তামাক মৃত্যুর জন্য অপরিহার্য, জীবন ও জীবিকার জন্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন সংসদ সদস্য, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) অনারারি প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘এফসিটিসি’ আর্টিকেল ৫.৩ বাস্তবায়ন বিষয়ক ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, বাংলাদেশ ২০২০’ গবেষণা শীর্ষক ওয়েবিনারে ফলাফল প্রকাশ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘যে পণ্যগুলো আমাদের জীবন ও জীবিকার জন্য অপরিহার্য, সেগুলো অপরিহার্য পণ্য হিসেবে আমাদের আইনের মধ্যে নিয়ে এসেছি। সেখানে তামাক কোনোভাবেই থাকতে পারে না। তামাক অপরিহার্য শব্দটা ঠিক, তবে তামাক মৃত্যুর জন্য অপরিহার্য, তামাক জীবন ও জীবিকার জন্য অপরিহার্য হতে পারে না। আমাদের সংবিধানে যে বাঁচার অধিকারের কথা বলা আছে, এটা সেই বাঁচার অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। ’
তিনি বলেন, ‘আপনারা জেনে কিছুটা খুশি হবেন যে, আমি ইতোমধ্যে সংসদে একটা বেসরকারি সদস্য বিল উপস্থাপন করেছি। অপরিহার্য পণ্যের তালিকা থেকে যেন তামাক বাদ দেওয়া হয়। আমার মনে হয়, এটা একটা বড় কাজ হবে। করোনা মহামারির সময় তামাক কোম্পানিগুলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুনির্দিষ্ট সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও, তামাক অপরিহার্য পণ্য— এ কথা বলে তারা পুরোদমে তাদের উৎপাদন এবং বিপণন কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। শত শত কোটি টাকা প্রণোদনা হিসেবে তামাক কোম্পানিগুলোকে দেওয়া হয়েছে। এটা হতে পারে না। ’
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘২০০৫ সালে আমরা তামাক আইন করেছি। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘ফ্রেম ওয়ার্ক কনভেনশন টোবাকো কন্ট্রোল’ যদি সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের আইনের আওতায় না আনতে পারি তাহলে এ আইনের অস্পষ্টতা থেকে যাবে। আমাদের প্রথম কাজ হচ্ছে তামাককে অপরিহার্য পণ্যের তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলা, দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে ৫.৩ সহ অন্য আর্টিক্যালগুলো অবশ্যই আইনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। নাহলে আমরা যে লক্ষ্যে কাজ করছি, সেখানে পৌঁছাতে পারবো না। ’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা ভাইরাস মানুষের জীবন ও জীবিকাকে ধ্বংস করেছে, তার মধ্যেও দেখেন আশার কথা হচ্ছে আমরা এখন পাবলিক হেলথ নিয়ে আলোচনা করছি। স্বাস্থ্যটাকে সবসময় আমরা ব্যক্তি পর্যায়ে দেখি, কিন্তু এখন করোনাকালে পাবলিক হেলথ বিষয়টা জাতীয় আলোচনায় উঠে এসেছে। কোভিড প্রেক্ষাপট পাবলিক হেলথ বিষয়ে সক্রিয়ও আলোচনার সুযোগ দিচ্ছে। কোভিডের সময় পাবলিক হেলথ পলিসিতে যে দুর্বলতাগুলো দেখা দিয়েছে, সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করা উচিত। আমাদের আইনের কোথায় ঘাটতি আছে, আইন আমরা কীভাবে আরও কার্যকর করতে পারি সেটা দেখা উচিত। ’
ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘করোনা ভাইরাস আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছে তামাক ব্যবহার কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। এটা এমন একটা সমস্যা যার সমাধানে শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নয় বরং সব মন্ত্রণালয় মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ’
বিশেষ অতিথি বিশেষ উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের প্রাক্তন সমন্বয়ক মুহাম্মদ রূহুল কুদ্দুস।
এটিএন বাংলার বার্তা সম্পাদক নাদিরা কিরণের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞার হেড অব টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম হাসান শাহরিয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২০
আরকেআর/এফএম