ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হবে নতুন প্রজন্মের জন্যই

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হবে নতুন প্রজন্মের জন্যই গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হবে নতুন প্রজন্মের জন্যই

মেহেরপুর: সময়ের নিষ্ঠুর স্রোতে হারিয়ে গেছে দাদা-দাদি, নানা-নানি আর নাতি-নাতনির সেই মধুর সম্পর্ক।  আগেকার দিনে দাদা-দাদি বা নানা-নানির বুকে শুয়ে রূপকথা বা ভূত-পেত্নির গল্প শুনেই ঘুমাতে যেত নাতি নাতনিরা।

আর দিনের বেলা কখনো কখনো নারিকেল বা তালের ডেইগু’র (ডাল) দিয়ে কৃত্তিম ঠেলাগাড়ি ও বাঁশ এবং বাইসাইকেলের বিয়ারিং দিয়ে বানানো ঠেলাগাড়িতে চড়ে মজা পেত নাতি-নাতনিরা। গ্রামীণ রাস্তায় প্রায় এসব দৃশ্য দেখা যেত।

বর্তমানে গ্রামীণ জীবনেও ছোঁয়া লেগেছে শহরের আধুনিকতার। এখন গ্রামের মানুষের মধ্যে চলে এসেছে যান্ত্রিকতা। সবাই সন্তানদের এনে দেয় বিভিন্ন আধুনিক খেলনা। আধুনিক বাবা-মা’রা শিশুদের এখন ইন্টারনেটের দুনিয়ায় প্রবেশ করিয়ে সব কাজই সেরে ফেলছেন।

মোবাইল ফোনে কার্টুন আর গেম খেলা দেখিয়ে খাওয়া থেকে শুরু করে আনন্দ বিনোদন সব কিছুই করছেন তারা। গ্রামের সেই নিত্য চেনা দৃশ্য

চোখে পড়লো মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার নওপাড়া গ্রামে। গ্রামের এই চিরচেনা দৃশ্যটি এখন খুব একটা দেখা না গেলেও নওপাড়া গ্রামের দাদা মোফাজ্জেল হোসেন তার নাতি মোছায়েমকে (১ বছর) নিয়ে ঠেলাগাড়িতে ঘুরছেন গ্রামের ভেতরে। তার বড় ছেলে ও বৌমা দুজনেই পেশায় শিক্ষক। তিনি একজন কৃষক। কৃষিকাজ শেষে বিকেলে এভাবেই নাতি-নাতনিদের নিয়ে ঘুরে বেড়ান মোফাজ্জল হোসেন।

তিনি জানালেন, নাতি নাতনিদের সময় দিতেই তিনি বাঁশ ও বিয়ারিং দিয়ে ঠেলাগাড়ি বানিয়েছেন। গ্রামের মানুষের মধ্যে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং পুরানো ঐতিহ্যের সঙ্গে নাতি-নাতনিদের পরিচয় করিয়ে দিতেই এসব করছেন তিনি।

মোফাজ্জল হোসেন আরো বলেন, আমার ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের ছেলে-মেয়েদের জন্য এই গাড়ি বানিয়েছি। নাতি নাতনিরাও এসব গাড়িতে চড়ে খুব মজা পায়।

স্থানীয় শিক্ষক শাহিনুজ্জামান শাহিন জানান, আমাদের গ্রামীণ ঐতিহ্যগুলোর ওপর আধুনিক কলকব্জা ও মোবাইল সংস্কৃতি চেপে বসার কারণেই আজ সমাজে অধঃপতন ঘটছে।  আসলে আমাদের অভিভাবকদের উচিত আধুনিকতার স্রোতে গা না ভাসিয়ে সন্তানদের নিজস্ব গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটানো। কারণ নিজস্ব সংস্কৃতি আর গ্রামীণ পরিবেশের সঙ্গেই মানুষের নাড়ির যোগ রয়েছে।

বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিশু সংগঠক সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, আমরাই আমাদের শিশুদের ধ্বংস করে দিচ্ছি। তাদের দেশি সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় না করিয়ে ভিনদেশি সংস্কৃতির মাঝে ডুবিয়ে দিচ্ছি। ফলে আমাদের শিশুরা নৈতিক চরিত্র যেমন হারাচ্ছে তেমনি আমরা হারিয়ে ফেলছি আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য। যা আমরা লালন পালন করে এসেছি হাজার বছর ধরে। গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে হবে নতুন প্রজন্মের জন্যই। শিশুদের মানসিক বিকাশ, নিজেদের ঐতিহ্য এবং নিজেদের সংস্কৃতির বলয়কে ধরে রাখার জন্য অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।