ঢাকা, বুধবার, ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০৫ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রস্তুতি 

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
ডিসেম্বরের ১ম সপ্তাহেই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রস্তুতি 

কক্সবাজার:জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরোধিতার মুখেও পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানোর সিদ্ধান্তে অটল সরকার। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রথম দফায় রোহিঙ্গাদের একটি দল ভাসানচরে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে।

তবে এ সংখ্যা কত হবে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, প্রাথমিকভাবে প্রথম দফায় এক হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।

কক্সবাজারের ঘিঞ্জি শরণার্থী শিবির থেকে এক লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচরে পাঠানোর উদ্যোগ বাস্তবায়নের বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন স্থানীয়রা।

রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ওসরকারের অতিরিক্ত সচিব শাহ রেজওয়ান হায়াত বাংলানিউজকে বলেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের প্রথম দফায় স্থানান্তরের দিনক্ষণ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

তিনি বলেন, জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পাঠানো হবে না। যারা স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী তাদের পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রথম দফায় স্বল্পসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নেওয়া হবে ভাসানচরে। এভাবে দফায় দফায় ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের পাঠানো হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন উখিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি ও কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুর মোহাম্মদ সিকদার বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত আমরা স্বাগত জানাই। এ উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে উখিয়া-টেকনাফের মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে। চাপমুক্ত হবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো কেবল নিজেদের সুযোগ-সুবিধার জন্যই দীর্ঘদিন ধরে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরে বিরোধিতা করে আসছে। তাদের বিরোধিতার কারণে ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর বিলম্বিত হচ্ছে। কারণ তারা স্থানীয়দের স্বার্থ দেখছে না।

ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্পবাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়া জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস থেকে সেখানকার ৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা রক্ষা করতে ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ১৯ ফুট উঁচু বাঁধ এবং জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের জন্য ভবন ও জেটি নির্মাণ করা হচ্ছে ভাসানচরে।

এদিকে ভাসানচর বসবাস উপযোগী করার পর ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, রোহিঙ্গা নেতা এবং সবশেষ গত ১৬ নভেম্বর রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট ২২টি দেশিবেসরকারি সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধিদেরও ভাসানচর পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়।

এছাড়াও অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করা ৩০৬ রোহিঙ্গাকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে গত মে মাসে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা বর্তমানে ওই দ্বীপটিতে বসবাস করছে। এদের মধ্যে ১৮৬ জন নারী, ৯৬ জন পুরুষ এবং ২৪ জন শিশু।

ভাসানচর পরিদর্শনকারী স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) পালস-বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুল ইসলাম কলিম বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না যেতে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অথচ রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য সেখানে অনেক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে। যা সরেজমিনে ভাসানচর না গেলে বুঝতে পারতাম না।

আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল ইউনিয়নের সেক্রেটারি মাস্টার মো. ইলিয়াছ বাংলানিউজকে বলেন, অনেক রোহিঙ্গা নেতাভাসানচর ঘুরে এলেও তারা দ্বীপটি বসবাস উপযোগ কিনা সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছে না। তারা দ্বীপের বাইরের সৌন্দর্য দেখেছে। সুযোগ-সুবিধা কী কী আছে,তাদের এসব দেখানো হয়েছে। তাই জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামত নিয়েই রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া উচিত।

তবে এই রোহিঙ্গা নেতা বলেন,কেউ স্বেচ্ছায় ওই দ্বীপে যেতে চাইলে আমাদের আপত্তি নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩০, ২০২০
 এসবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।