ঢাকা: পরিকল্পনা বিভাগ-কমিশনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয়েছে ২২৪টি ফ্ল্যাট। সরকারের বিধি অনুযায়ী এসব ফ্ল্যাট কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বছর না ঘুরতেই ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাথায় হাত পড়েছে। বিকল হয়ে গেছে কোনো কোনো ভবনের লিফট। বাসার ভেতরে জমা হচ্ছে স্যুয়ারেজের পানি। ফলে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন ২২৪টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আগারগাঁও এলাকায় জুঁই ভবনের ৫০২ নম্বর ফ্ল্যাট বরাদ্দ পেয়েছেন মোশারফ হোসেন। বছর না ঘুরতেই বাসার ভেতরে স্যুয়ারেজ লাইনের পানি জমা শুরু হয়েছে। পানি সরাতে তাদের রাতের ঘুম চলে গেছে। ফ্ল্যাট নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। বাসার ভেতরে দেয়ালের পলেস্তারা খসে খসে পড়ছে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধেই সাবেক পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তারপরও ফ্ল্যাটগুলোর সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। নকশা অনুযায়ী ফ্ল্যাটগুলো নির্মিত হয়নি। ফলে পানি ও বিদ্যুতের লাইন এক সঙ্গে টানা হয়েছে। ফলে অনেক সময় বিদ্যুতের লাইন দিয়ে বাসায় পানি প্রবেশ করছে। মোশারফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ফ্ল্যাট বরাদ্দের এক বছর না যেতেই বাসায় পানি জমে যাচ্ছে। প্রতিদিন আমরা সমস্যায় পড়ছি। রাতে ঘুমাতে পারছি না। দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়ছে। পানি ও বিদ্যুতের লাইন এক হয়ে আছে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আবাসিক এলাকার চারটি ভবনে ২২৪টা ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটা ভবনে ৫৬টি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। এগুলো ৬৫০ ও ৮০০ বর্গফুটের। আবাসিক এলাকায় জুঁই, বেলি, কামিনী ও চামেলি। প্রতিটা ভবন ১৫তলা বিশিষ্ট। জুঁই ভবনের দুটি লিফট বিকল। বেলি, কামিনী ও চামেলি ভবনের একটা করে লিফট বিকল ও একটা খুঁড়িয়ে চলছে।
জুঁই ভবনের ১৫তলার এক বাসিন্দা বৃদ্ধ বাবা ও পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। ডাক্তার দেখানোসহ নানা কারণে ৭০ বছরের বেশি বয়সী বাবাকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে হয়। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, জার্মানির তৈরি লিফট দেওয়ার কথা থাকলেও চীনা লিফট দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফ্ল্যাটের ওই বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, ফ্ল্যাটে ওঠার পর থেকেই লিফট নষ্ট। কমদামি চীনা লিফট দেওয়া হয়েছে। প্রথমে মেরামত করে কোনো রকম লিফটগুলো চলতো। এখন একাবারেই বিকল হয়ে গেছে। ১৫তলায় পায়ে হেঁটে ওঠা নামা করতে হয়। আমার বাসায় বৃদ্ধ বাবা উনাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছি। জরুরি কাজ ছাড়া ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা নিচে নামে না। সরেজমিন ঘুরে আরও দেখা গেছে, ভবনগুলোতে যে পানির লাইন ব্যবহার করা হয়েছে তা সরু। পানি নিষ্কাশনের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে অনেক সময় লাইন লিক হয়ে ফ্ল্যাটের ভেতরে পানি প্রবেশ করছে। বাথরুম নিয়েও বিপাকে সংশ্লিষ্টরা। কারণ কলাম বরাবর নির্মাণ করা হয়েছে টয়লেট। দরজা ও জানালাগুলো নকশা অনুযায়ী করা হয়নি। কারণ জানালার এক পাশ ফিক্সট। জানালা দিয়ে ভবনের মধ্যে পানি প্রবেশ করে থাকে।
ভবনগুলোর হলরুম অনেক সময় পানি জমা হয়ে থাকে। বেসিন-সিংকের নিচে সরু পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে সিংক চুয়ে মেঝতো পানি ভর্তি হয়ে যায়। অনেক সময় দরজা লক হয় না। ভবনের টাইলস ফিটিং ও টয়লেটের টিসু হোল্ডার নিম্ন মানের।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসন (প্রশাসন ১,২,৩, প্রটোকল এবং আইসিটি) মো. মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, এর আগে ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা আমাদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা সমস্যা সমাধান করেছি। আবারও ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা যদি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তবে আমরা ব্যবস্থা নেবো। ফ্ল্যাটের সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে সংশ্লিষ্টদের লিখিত অভিযোগ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৭ ঘণ্টা, ডিসম্বের ২১, ২০২০
এমআইএস/নিউজ ডেস্ক