ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

উদ্বোধনের অপেক্ষায় ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত ৪৩৩ ঘর

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২১
উদ্বোধনের অপেক্ষায় ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত ৪৩৩ ঘর ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত ঘর। ছবি: বাংলানিউজ

বাগেরহাট: মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে বাগেরহাটে ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত ৪৩৩টি ঘর উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।  

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরেই এই ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে উপকারভোগীদের মাঝে।

ঘরে বসবাস করার আগেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্বাচিত ভূমিহীন পরিবারগুলো। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যত দ্রুত সম্ভব তারা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে বসবাস করতে চান।

“আশ্রয়নের অধিকার-শেখ হাসিনার উপহার” এই স্লোগান নিয়ে আশ্র্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলায় ৪৩৩টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলায় ৫২, কচুয়ায় ৩০, চিতলমারী ১৭, মোল্লাহাটে ৩৫, ফকিরহাটে ৩০, রামপালে ১০, মোংলায় ৫০, মোরেলগঞ্জে ৬ এবং শরণখোলা উপজেলায় ১৯৭টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩১৫টি ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ঘরগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রতিটি বাড়ি নির্মাণ করা হবে। ৪৩৫ বর্গফুটের প্রতিটি ঘরে রয়েছে দুটি বেড রুম, টয়লেট, রান্নাঘর, নামাজের জায়গা ও একটি বারান্দা। ঘর ও আশপাশের জমি মিলিয়ে দুই শতক জমি দেওয়া হবে উপকারভোগী প্রতিটি পরিবারকে। টিনসেডের এই ঘরে একটি পরিবার স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারবে।

এই প্রকল্পের আওতায় মোল্লাহাট উপজেলার গাংনী ইউনিয়নের আঠারোবাকী নদীর পাশে নির্মাণ করা হয়েছে ৩৫টি ঘর। নদীর পাশে এক সাড়িতে তৈরি লাল টিন সেডের আধা পাকা ঘরগুলো একটি সৌন্দর্যের আধারে পরিণত হয়েছে। ৩৫টি পরিবারের সুপেয় পানির জন্য বসানো হয়েছে দুটি গভীর নলকুপ। বিদ্যুৎ সংযোগের কাজও চলমান রয়েছে।

এছাড়া ভূমিহীন পরিবারের সন্তানদের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে খেলার মাঠ। তার পাশেই থাকবে প্রশস্ত রাস্তা। নদীর পাশে লাগানো হবে গাছ, সবুজ বেষ্টনীতে বসবাস করবেন হতদরিদ্র এই জনগণ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচিত ভূমিহীনদের মাঝে ঘরের চাবি ও জমির দলিল হস্তান্তর করা হবে। ইতোমধ্যে এই উপকারভোগীদের নামে জমির দলিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. মাফফারা তাসনীন।

মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. মাফফারা তাসনীন বলেন, আমরা হতদরিদ্রদের জন্য প্রাপ্ত ঘর নির্মাণের জন্য আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করেছি। ঘরগুলো নির্মাণ শেষ হয়েছে। ঘর প্রদানের ক্ষেত্রে   উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আমরা সঠিকভাবে যাচাইবাছাই করেছি। যারা আসল ভূমিহীন তারাই এই সুবিধার আওতায় এসেছেন। এই আশ্রয়ন প্রকল্পের ভূমিহীনদের জন্য খেলার মাঠ, সুপেয় পানি, বিদ্যুৎ, খোলা জায়গা, নদীর পাড়ে বৃক্ষরোপণ করে সবুজ বেষ্টনী তৈরিসহ সব ধরনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।

উপকারভোগী হালিমা বেগম বলেন, কোনো জমিজমা না থাকায় স্বামীর মৃত্যুর পরে দুই সন্তান ও স্বামী পরিত্যক্তা মেয়েকে নিয়ে রাস্তার পাশে, বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে থাকতাম। আজ এ জায়গায়, কাল আরেক জায়গায় থাকতাম। বিভিন্ন সময় মেম্বর-চেয়ারম্যানদের কাছে থাকার জন্য একটু জায়গা চেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে এই ঘর পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি।

মো. তারা মিয়া মোল্লা বলেন, বিয়ের পরে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভাড়ায় থাকতাম। মাঝে মাঝে বিভিন্ন মানুষের দোকানের পেছনে শিয়াল কুকুরের মত থাকতাম। এখন একটি পাকা ঘর পেয়েছি। এরকম ঘরে বসবাস করব তা কখনও ভাবিনি।

দিন মোহাম্মাদ বলেন, কোনোদিন ভাবিনি পাকা ঘরে বসবাস করব। প্রধানমন্ত্রী আমাকে যে ঘর দিল এতে আমি খুব খুশি। দুই রুমের এই ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে পারব। বৃষ্টি আসলে এখন আর পলিথিন ঠিক করতে হবে না। না ঘুমিয়ে এক জায়গায় বসে থাকতে হবে না। একই ধরনের অনুভূতি ভূমিহীন বিধবা স্বরুপ জান বেগমেরও।

ভূমিহীনরা ঘর পাওয়ায় খুশি স্থানীয়রাও। স্থানীয় শহিদুল ইসলাম, দিদারুল ইসলাম, শেখ নওশের আল, শেখ শাহিনসহ কয়েকজন বলেন, এখানে যারা ঘর পেয়েছে, তাদের কোনো ঘর ছিল না। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে ও মানুষের বাড়িতে ছিন্নমূল হিসেবে বসবাস করতেন। তারা এখন শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন। এই ভেবে আমরাও খুশি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য হুমায়ুন শেখ ও জুয়েল শেখ বলেন, আমার এলাকায় যে আশ্রয়ন প্রকল্প হয়েছে তাতে আমরা খুব খুশি। বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে এলাকার ভূমিহীনরাও খুব খুশি। এই
ঘরে তারা খুব শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন।

মোল্লাহাট উপজেলার গাংনী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শিকদার উজির আলী বলেন, আমাদের এলাকায় ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এলাকায় আরও অনেক ভূমিহীন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মহোদয় যদি আরও কিছু ঘর বরাদ্দ দিতেন তাহলে, অন্য ভূমিহীনদেরও দিতে পারতাম।

বাগেরহাট সদর উপজেলার শ্রীঘাট এলাকায় ভূমিহীনদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৫২টি ঘর। এই ঘরগুলোও রয়েছে উদ্বোধনের অপেক্ষায়।

বাগেরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোছাব্বেরুল ইসলাম বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ৫২টি ঘর আমরা নির্মাণ শেষ করেছি। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরেই নির্বাচিত ভূমিহীনদের কাছে জমির দলিল ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হবে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক আনম ফয়জুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য ৯ উপজেলায় ৪৩৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩১৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন শেষে আমরা উপকারভোগীদের মধ্যে জমির দলিল ও ঘরের চাবি হস্তান্তর করব।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।