ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অপুষ্টি বাড়াবে করোনা 

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অপুষ্টি বাড়াবে করোনা 

ঢাকা: জাতিসংঘের চারটি বিশেষায়িত সংস্থার প্রকাশ করা নতুন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায় ২০০ কোটি মানুষের খাবার ও পুষ্টিমান উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে ম্লান করার হুমকি তৈরি করছে কোভিড-১৯ এর অর্থনৈতিক প্রভাব।

বুধবার (২০ জানুয়ারি) বেলা ২টায় ইউনিসেফের ব্যাংকক অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের আগে থেকে এবং এই মহামারি শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে ও ব্যক্তিগতভাবে মানুষের জীবিকায় যে ক্ষতি হয়েছে, সে কারণে ১৯০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যকর খাবার যোগাড় করতে অক্ষম ছিল।

ফলমূল, শাকসবজি এবং দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বেশি হওয়ার কারণে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের পক্ষে স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে, যার সাশ্রয়িতা সবার জন্য খাদ্য সুরক্ষা এবং পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে মা ও শিশুদের জন্য।

২০১৯ সালে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৩৫ কোটিরও বেশি মানুষ অপুষ্টিতে আক্রান্ত ছিল, যা আনুমানিকভাবে বিশ্বজুড়ে অপুষ্টি আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেক। এই অঞ্চলজুড়ে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৭ কোটি ৪৫ লাখ শিশু ছিল খর্বকায় (বয়সের তুলনায় বেশি খাটো) এবং ৩ কোটি ১৫ লাখ শিশু ছিল শীর্ণকায় (উচ্চতার তুলনায় বেশি চিকন)। এই শিশুদের বেশিরভাগই দক্ষিণাঞ্চলীয় এশিয়ায় বসবাস করে, যাদের মধ্যে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ খর্বকায় এবং আড়াই কোটিরও বেশি শীর্ণকায়। একই সময়ে, অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতাও দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে, যেখানে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ শিশুর ওজন বেশি বা স্থূলতায় আক্রান্ত।

নিম্নমানের খাবার এবং পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব একটি চলমান সমস্যা। পর্যাপ্ত ক্যালোরির যোগান দেয়– এমন খাবারের তুলনায় স্বাস্থ্যকর খাবারের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বেশি, তবে ক্যালোরি নির্ভর এসব খাবারে পুষ্টিগুণের অভাব থাকে, যা সাশ্রয়ী মূল্যে সবার কাছে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে খাদ্য ব্যবস্থায় বিদ্যমান উল্লেখযোগ্য ঘাটতির বিষয়টি তুলে ধরেছে। যেহেতু নারী ও শিশুদের বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন হয়, তাই তাদের ক্ষেত্রে দামের এই পার্থক্য আরও বড় হয়ে দেখা দেয়।

প্রতিবেদনে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পরিবারগুলোর জন্য পুষ্টিকর, নিরাপদ ও টেকসই খাবার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে তাদের সামর্থ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে খাদ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। সর্বত্র, সবার জন্য পুষ্টিসমৃদ্ধ ও স্বাস্থ্যকর খাবার সহজলভ্য করতে হবে। এটি নিশ্চিত করার জন্য প্রতিবেদনে সমন্বিত পদ্ধতি ও নীতিমালার প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়। সামর্থ্যহীনতার বিষয়গুলো কাটিয়ে উঠতে এবং মা ও শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পুষ্টি একজন ব্যক্তির সারাজীবন জুড়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মানহীন খাবারের প্রভাব সবচেয়ে মারাত্মক হয় মানবজীবনের প্রথম ১০০০ দিনে, গর্ভধারণ থেকে শুরু করে একটি শিশুর বয়স ২ বছর হওয়া পর্যন্ত। ছোট শিশুরা, বিশেষ করে যখন তারা ৬ মাস বয়স থেকে তাদের ‘প্রথম খাবার’ খেতে শুরু করে, তখন ভালোভাবে বেড়ে ওঠার জন্য তাদের উচ্চমানের পুষ্টির প্রয়োজন হয় এবং এ সময়ে প্রতিটি খাবারই গুরুত্বপূর্ণ।

এসব ব্যবস্থাজুড়ে পুষ্টি-কেন্দ্রিক আচরণ পরিবর্তনের জন্য প্রচারণাকে মূলধারায় আনা হলে তা বৃহত্তর পরিসরে জ্ঞানের ব্যাপ্তি বাড়ানো এবং আচরণের স্থায়িত্বের দিকে ধাবিত করতে পারে, যা মানুষের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার পেতে সহায়ক হবে।

মেয়েদের পড়াশোনা এবং ভালো পানি, স্যানিটেশন এবং স্বাস্থ্যবিধি চর্চার অন্তর্গত অবকাঠামোতে বিনিয়োগের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবারে কী থাকে এবং বাড়িতে, বিদ্যালয়ে ও কমিউনিটিতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কীভাবে তৈরি করা যায় সে বিষয়ক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং, সবার জন্য পুষ্টিকর, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও টেকসই খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য সম্মিলিতভাবে একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরি করার জন্য খাদ্য, পানি ও স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয় প্রয়োজন।

মা ও শিশুদের খাবার এবং ভালো পুষ্টির জন্য স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মান উন্নয়নে জাতীয় নীতিমালাসমূহ ও পরিকল্পনাগুলো কার্যকর করতে আরও বৃহত্তর পরিসরে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। অপুষ্টি, অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতার সমস্যা মোকাবিলা করতে এবং সবারই স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবাগুলোর অপরিহার্য প্যাকেজের অংশ হিসেবে মা ও ছোট শিশুদের খাবারের মান উন্নত করার জন্য পরিষেবাগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি ২০২০ এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক সংক্ষিপ্তসার: পুষ্টিমান উন্নয়নের কেন্দ্রে মা ও শিশুদের খাবার— শীর্ষক প্রতিবেদনটি ব্যাংককে প্রকাশ করা হয়েছে। যৌথভাবে প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা, জাতিসংঘের শিশুদের তহবিল, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২১
টিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।