ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

টাঙ্গাইলে মেডিনোভার ভুল রিপোর্টে রোগীর ভোগান্তি 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২১
টাঙ্গাইলে মেডিনোভার ভুল রিপোর্টে রোগীর ভোগান্তি 

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেডের ভুল রিপোর্টে আব্দুল্লাহ আল নোমান নামে এক রোগীকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।  

এ ঘটনায় তিনি চরম আতঙ্কিত ও বিপাকে পড়েছিলেন।

ওই ভুলের বিপরীতে সঠিক রিপোর্টের জন্য একই রোগীকে আরো তিনটি হাসপাতালে পরীক্ষা করতে হয়েছে। এতে অতিরিক্ত খরচ ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে তাকে। আব্দুল্লাহ আল নোমান ঢাকা ট্রিবিউনের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি।

ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, গত মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) শারীরিক সমস্যা অনুভব করাতে তিনি মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেড টাঙ্গাইল শাখায় বুকের এক্সরে করান। ওই এক্সরে রিপোর্টে তার ফুসফুসে পানি জমেছে বলে দেখানো হয়। পরদিন বুধবার (৭ এপ্রিল) বিকেলে নোমান রিপোর্টটি সোনিয়া ক্লিনিকে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নুরুল আমিন মিঞাকে দেখান। ডা. নুরুল আমিন মিঞা ওই রিপোর্ট দেখে ফুসফুসে পানি জমার বিষয়টি নোমানকে জানান। তিনি নোমানের ফুসফুস থেকে পানি বের করার সিদ্ধান্ত নেন। পরদিন বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) নোমান সোনিয়া ক্লিনিকে ভর্তি হন। সেখানে এনেস্থেশিয়া, পেইন এবং ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সোনিয়া নার্সিং হোমের কনসালটেন্ট ডা. এন কে আলম তার ফুসফুস  থেকে ইনজেকশনের মাধ্যমে পানি বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু একাধিকবার পুশ করেও কোনো পানি বের হয়নি। চিকিৎসক এন কে আলম নোমানের ফুসফুসে পানি না পেয়ে হতবাক হয়ে যান। চিকিৎসক এন কে আলম আরও নিশ্চিত হবার জন্য সোনিয়া ক্লিনিকে নোমানের আল্ট্রাসনোগ্রাফি করান। আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে ফুসফুসে কোনো পানি ধরা পড়েনি। পরে বিষয়টি চিকিৎসক এন কে আলম ডা. নুরুল আমিনকে জানালে তিনি সোনিয়া ক্লিনিকে শুধু ডান কাত করে এক্সরে করতে বলেন। পরে সেই এক্সরে রিপোর্টেও তার ফুসফুসে কোনো পানি ধরা পড়েনি। এতে করে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নুরুল আমিন মিঞা অবাক হন।  

এরপর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য গত শনিবার (১০ এপ্রিল) আবার জাতীয় যক্ষ্মা হাসপাতালে এক্সরে করালে সে রিপোর্টেও পানি ধরা পড়েনি। কিন্তু মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেড টাঙ্গাইল শাখার রিপোর্টে তার ফুসফুসে পানি থাকার বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই জানানো হয়।  

বিষয়টি আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য নোমান বুধবার (১৩ এপ্রিল) আরেকটি ক্লিনিকে এক্সরে করান। সেই রিপোর্টেও কোনো পানি পাওয়া যায়নি।  

মেডিনোভা হাসপাতালে কর্মরত রিপোর্ট দাতার ভুলের কারণে সাংবাদিক নোমান বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হয়েছিলেন। এই রিপোর্টের কারণে তিনি ও তার পরিবার চরম ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হন।  

এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, মেডিনোভা হাসপাতালের ভুল রিপোর্টের কারণে আমি চরম দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ভুল রিপোর্টের কারণে আমার শারীরিক, মানসিক এবং আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে। এমন ভুলের কারণে আমার বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারতো। এ ঘটনায় মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেড টাঙ্গাইল শাখার কর্তৃপক্ষ ও ভুল রিপোর্ট দাতার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, সোমবার (২০ এপ্রিল) টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নুরুল আমিন মিঞা সর্বশেষ রির্পোটগুলো দেখে জানান, ‘আপনার ফুসফুসে কোনো পানি নেই। আপনার সব কিছু ঠিক আছে। ’

সোনিয়া ক্লিনিকের চিকিৎসক এনকে আলম বলেন, যথারীতি নিয়মে ওইদিন নোমানের ফুসফুস থেকে পানি বের করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ফুসফুস থেকে কোনো পানি বের হয়নি। কিন্তু মেডিনোভার রিপোর্টে পানি রয়েছে বলে স্পষ্ট দেখানো হয়। পরে আমরা তার আল্ট্রাসনো করাই। আল্ট্রাসনোর রিপোর্টে কোনো পানি পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ও মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. নুরুল আমিন মিঞা বলেন, আমার কাছে আসা রোগীর মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে করানো এক্সরেতে সুস্পষ্টভাবেই পানি দেখানো হয়েছিল। কিন্তু এই রিপোর্টের  বিষয়ে মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেডের উপযুক্ত জবাবদিহিতা থাকলেও থাকতে পারে।  

এ ব্যাপারে মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেড টাঙ্গাইল শাখার ম্যানেজার হায়দার বলেন, বিষয়টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তার রিপোর্টটি কয়েকজন প্রফেসরকে দেখানো হয়েছে। তারা রিপোর্টে কোনো ভুল পাননি। রিপোর্টটি সঠিক বলেও তিনি দাবি করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।