ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হেফাজতের সঙ্গে আবার সমঝোতা হলে খেসারত দিতে হবে

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২১
হেফাজতের সঙ্গে আবার সমঝোতা হলে খেসারত দিতে হবে ...

ঢাকা: ধ্বংসাত্মক ঘটনার দায়ে গ্রেফতার অভিযানের মুখে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয়টি আবারও সমঝোতার চেষ্টা কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতারা। হেফাজতের সঙ্গে আবারও কোনো সমঝোতা হলে আরও বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে বলে তারা মনে করেছেন।

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতা করে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচি থেকে ব্যাপক সংহিসতা ও ধ্বাংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানো হয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিন থেকে টানা তিন দিন চট্টগ্রাম, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনায় যে সব মামলা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী।

এই প্রেক্ষাপটে সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাতে হেফাজতের কয়েকজন নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তার বাসায় বৈঠক করেছেন। তবে কী আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো পক্ষ থেকেই বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিষয়টি আবারও হেফাজতের সঙ্গে কোনো সমঝোতা কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করছেন ১৪ দলের নেতারা।

১৪ দলের নেতারা জানান, এর আগে ২০১৩ সালে ৫ মে হেফাজতে ইসলাম সরকার উৎখাত করতে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছিলো। তারপর সরকার তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেছে। সমঝোতার মাধ্যমে পাঠ্যাপুস্তক সংশোধন, কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি, সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ন্যায়বিচারের প্রতীক থেমিসের ভাস্কর্য প্রত্যাহারসহ তাদের বিভিন্ন দাবি মেনে নেয় সরকার। সেই সময়ের সমঝোতার কারণেই হেফাজত আজকের অবস্থানে আসতে সাহস পেয়েছে এবং গত ২৬ মার্চ এই ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক তাণ্ডব চালিয়েছে বলে ১৪ দলের নেতারা মনে করেন।

১৪ দল নেতারা বলেন, হেফাজত রাষ্ট্র, সংবিধান এবং নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। রাষ্ট্র ও জনগণের সম্পদে আগুন দিয়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে তারা ফৌজদারি অপরাধ করেছে। সেই অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী আসামিদের গ্রেফতার করছে। আইনগতভাবে ফেঁসে যাওয়ায় হেফাজত নেতারা এখন আবার সমঝোতার চেষ্টা করছেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার পর এখন তারা নত হয়ে নরম সুরে বিবৃতি দিচ্ছেন। এখন তাদের সঙ্গে সরকারের সঝোতার কোনো সুযোগ নেই। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে। আলোচনার নামে কোনো সমঝোতা বা নমনীয় হলে এর জন্য আরও বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে বলেও তারা সতর্ক করেন।

১৪ দল নেতাদের মতে, হেফাজত নেতাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই আলোচনাকে কেন্দ্র করে জনমনে আবার একটা সমঝোতা বা সমঝোতা চেষ্টার সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এ জন্য হেফাজতের সাথে আলোচনার বিষয় প্রকাশ ও সরকারের পক্ষ থেকে এর একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার কথা বলেন তারা। এটা করা হলে জনমনে যে সন্দেহ তা দূর হবে বলে মনে করেন নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বাংলাানিউজকে বলেন, হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে কী কথা হয়েছে কেউ কিছু প্রকাশ করেনি। সরকারের দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে বিষয়টি পরিষ্কার করা দরকার। হেফাজত যে ঘটনা ঘটিয়েছে তা সশস্ত্র কর্মকাণ্ড হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। দেরিতে হলেও সরকার এর বিরুদ্ধে সঠিক পথে এগুচ্ছে। হেফাজত রাষ্ট্র ও সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, নির্বাচিত সরকার উৎখাতের চক্রান্ত করেছিলো। আগুন দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ পুড়িয়ে দিয়েছে। তদন্তে তারা ফৌজদারি বিধিতে অভিযুক্ত। রাষ্ট্র, সংবিধান ও নির্বাচিত সরকার উৎখাতের এ ষড়যন্ত্রের বিচার করতে হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে কিন্তু যারা রাষ্ট্র, সংবিধান এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধ ঘোষণা করে তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। আলোচনার নামে সমঝোতার কোনো সুযোগ খুঁজবেন না। যে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে সেগুলোর সাথে আলোচনার কোনো সম্পর্ক নেই বলে করি। এখানে নরম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এ বিষয়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আইনগতভাবে মামলা হয়েছে। নিষ্পত্তিও হবে আইনগতভাবে। তারা যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তাদের তাণ্ডবের জঘন্যতম রূপ মানুষ দেখেছে। তারা সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করতে চাইছে। তাদের বর্তমান বক্তব্য এবং এই সাক্ষাৎ তারই বহিপ্রকাশ। সরকারের সঙ্গে হেফাজতের সমঝোতার অভিযোগ আছে। এখন যদি আপসরফা করা হয় তাহলে মানুষের সেই ধারণাই প্রমাণ হবে। অপরাধী আলেম হোক আর যেই হোক আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। এখানে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের একটা সমঝোতা ছিলো, সেটা যদি অব্যাহত রাখে তাহলে এর জন্য বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজত নেতাদের বৈঠক নিয়ে দেশের মানুষ সন্দেহ পোষণ করছে। সরকার যদি এর ব্যাখ্যা দেয় তাহলে সন্দেহ দূর হবে। স্বচ্ছভাবেই হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আশা করি সরকার সেটাই করবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২১
এসকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।