ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

লকডাউনে মুখ ভার পশু-পাখির

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২১
লকডাউনে মুখ ভার পশু-পাখির

ঢাকা: আর কিছু হোক না হোক, দোকানে খদ্দের এলে দেখিয়ে দেখিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে খুনসুটি করা তাদের স্বভাব। তবে, এখন তার মন ভালো নেই।

খাঁচার পাশে গিয়ে দাঁড়ালে ফিরেও তাকায় না লাল বৃত্ত চোখ আর হলুদ ঠোঁটের সবুজ তোতাপাখিজোড়া।

পশুপাখির খুনসুটি দেখে মন ভালো হয় না, এমন মানুষ খুব কমই আছে দুনিয়ায়। কিন্তু যখন সেই পশু-পাখিরই মন খারাপ হয়, তখন আনন্দের উৎস কোথায়? বিষয়টা কিন্তু অবশ্যই ভাবনায় ফেলে সবাইকে।
সোমবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর কাঁটাবনের পোষা প্রাণীর মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে তেমন চিত্রই।

এই মার্কেটের ‘বার্ডস প্যালেস’ দোকানের শুধু তোতাপাখি জোড়াই নয়, লকডাউনের প্রভাব যেন পড়েছে মন হরণ করা সব দোকানের পশুপাখিগুলো মনেই। মার্কেটের একাধিক দোকান ঘুরে দেখা যায়, একদিকে যেমন পোষা বিড়ালগুলো দুরন্তপনার বিপরীতে নিশ্চুপ শুয়ে-বসে দিন কাটাচ্ছে, তেমনি ভোজনপ্রিয় কুকুরগুলোরও অনীহা দেখা গেছে খাবারের ওপর। আর সবসময় কিচিরমিচির করা বা খুনসুটিতে ব্যস্ত থাকা পাখিগুলো দোলনায় দুলছে মুখ ভার করে।
লকডাউনের মধ্যে বিভিন্ন দোকান বন্ধ থাকলেও পশু-পাখিদের স্বার্থে প্রতিদিনই খোলা হয় এই দোকানগুলো। তবে, একদিকে যেমন ব্যবসা মন্দা, তেমনি মহামারি কোভিড চলাকালীন বন্দিত্বে একটা বিরূপ প্রভাবও পড়েছে এই প্রাণীগুলোর ওপর।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলো-বাতাস না পেলে, নিয়মিত খাবার না দিলে, খাঁচা পরিষ্কার না করলে একটা পর্যায়ে মারা যায় পশু-পাখিগুলো। তাই দোকান খোলা হয় নিয়মিতই। কিন্তু যেসব বিড়াল আর কুকুর সবসময় সবসময় দোকানে আগত দর্শনার্থী আর ক্রেতাদের সঙ্গে খেলা করে সময় কাটায়, তারা এখন অলস সময় পার করছে।

এ বিষয়ে ‘মিনি হবি জু’ দোকানের মালিক মো. জামাল হোসেন বলেন, মন ভালো রাখার জন্য পশুপাখির মতো নির্মল আনন্দের কিছুই নেই। এমনকি গবেষণাতেও বলা হয়েছে পশুপাখি দেখা কেবল সময় কাটানোর ভালো উপায়ই নয় এটি মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। সেদিক থেকে আমাদের এই পোষা প্রাণীগুলোও মানুষের সঙ্গ পেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তবে লকডানের ফলে এখন মানুষ না আসায় তারা যেমন শুয়ে বসে দিন পার করছে, তেমনি আচরণেও হয়েছে পরিবর্তন। কেমন যেন মন মরা আর অলসে অলসে ভাব!

তিনি বলেন, বিড়াল, কুকুর, খরগোশ, পাখি এবং অন্যান্য পোষা প্রাণীদের পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর ভাইরাল হয়। সেলিব্রিটিরাও তাদের পোষা প্রাণী সম্পর্কে আপডেট শেয়ার করেন। সেগুলো আমাদের মুখে হাসি ফোটাবে নিশ্চিত। কিন্তু এই অলস সময়ে আলাদা মানুষ না পেয়ে, খেলার সঙ্গী সেভাবে না পেয়ে তাদের মুখেই যেন হাসি নেই।

মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, যেসব তোতা পাখি, কাকাতুয়া নিজেদের খেলায়, খুনসুটিতে মন ভরিয়ে রাখে দর্শক-ক্রেতাদের; তারাও এখন বসে আছে মুখ ভার করে। খুব কাছে গেলেও যেন তাদের এখন সাড়া পাওয়া দায়। এরপর আবার উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে দেখেন অনেকক্ষণ কাছে আশা মানুষটিকে। সবসময়ের চেনা ভঙ্গি ফেলে রেখে দেখান আলাদা রূপ। যেন কোথাও কোনো তাড়া নেই, কোনো চঞ্চলতা নেই। অপরদিকে কিছু পশুপাখি আবার এই ছুটির দিনে জিরিয়ে নিচ্ছে বেশ আয়েশ করে। অন্য সময় মানুষের সমাগম বেশি থাকায় যে বিশ্রামটুকু তাদের হয় না, এখন নিরিবিলি সময়ে খাওয়া আর ঘুমের মধ্য দিয়েই শোধ নিচ্ছে তার।

এ বিষয়ে মার্কেটের বার্ডস প্যালেস, নিউ বার্ডস প্যারাডাইজ, পেটস ওয়ার্ল্ডের ব্যবসায়ীরা বলছেন, লকডাউনের ফলে আমাদের ওপর যেমন প্রভাব পড়েছে, তেমনি পশুপাখিগুলোর প্রায় একই অবস্থা। প্রাণীগুলো সবসময় মানুষ দেখে, মানুষের সঙ্গে খেলে অভ্যস্ত। হুট করে সেটা বন্ধ হয়ে গেলে একটা প্রভাব পড়ে। আবার অনেকে সময় এটি ভালো দিক হিসেবেও উঠে আসে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিতে পড়লে তার প্রভাব পড়ে পশু-পাখির খাবারের ওপরও। সবমিলিয়ে ভালো মন্দ দুটো দিকই আছে।

তবে, দেখিয়ে দেখিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে খুনসুটি করা পশুপাখিগুলো আবারও দ্রুতই ফিরবে মানুষের ভিড়ের সঙ্গে, মিশবে খুনসুটিতে, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এমন অপেক্ষা যেন একই পশু-পাখিগুলোরও।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২১
এইচএমএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।