বরিশাল: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের বর্জ্য নিয়ে যখন বিপাকে পরেছেন কর্তৃপক্ষ, তখন সেই বর্জ্য থেকেই সংগ্রহ করে কাগজ ও প্লাস্টিকের ব্যবহৃত বহু মালামাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভাঙারির দোকানে। আর ভাঙারির দোকান থেকে সেসব মালামাল হাতবদল হয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গার নিয়ে যাচ্ছেন এর ক্রেতারা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এই মহামারি করোনাকালে গড়ে সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা বর্জ্য বের হচ্ছে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড ও উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে।
আর জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে এ ওয়ার্ডের বর্জ্যগুলো অপসারণ করতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। তাই এ ওয়ার্ডসহ গোটা হাসপাতালের বর্জ্যগুলো হাসপাতাল ক্যাম্পাসের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় মাটি খুঁড়ে ফেলা হয়। গর্তগুলো ভরে গেলে তা মাটি দিয়ে চাপা দেওয়া হয়।
তবে সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে, করোনা ওয়ার্ডের বর্জ্যগুলো সংশ্লিষ্ট ভবনের সামনের অংশেই মাটি খুরে করা গর্তে ও তার আশপাশে ফেলা হচ্ছে। সেখান থেকে প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম বাটি, গ্লাস, স্যালাইনের ব্যাগ, সিরিঞ্জ, পানির বোতল, ওষুধের খালি (প্লাস্টিক ও কাগজের) প্যাকেটসহ ব্যবহৃত নানান চিকিৎসা বর্জ্য বস্তায় ভরে ভ্যানে বা রিকশায় করে যাওয়া হচ্ছে।
এছাড়া মূল হাসপাতাল ভবনের বর্জ্যগুলো স্টাফ ক্যান্টিনের পেছনে ফেলা হচ্ছে, সেখান থেকেও একইভাবে ব্যবহৃত চিকিৎসা বর্জ্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যে কাজ বহু আগে থেকেই চলে আসছে ।
হাসপাতালের পুরাতন স্টাফরা বলছেন, এসব ভাঙারি পণ্য কাগজ ও প্লাস্টিকের ব্যবহৃত মালামাল বহু আগে থেকেই হাসপাতাল ক্যাম্পাস থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে কিছু লোক। তবে করোনাকালে সবচেয়ে বেশি স্যালাইনের ব্যাগ, সিরিঞ্চ, ওষুধের খোসাসহ একবার ব্যবহৃত সামগ্রী বর্জ্য হিসেবে হাসপাতাল থেকে ফেলা হচ্ছে। আবার এর মধ্যে বেশিরভাগই করোনা ওয়ার্ড থেকে বের হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কখনো দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে, আবার কখনো সন্ধ্যা বেলা এখান থেকে প্লাস্টিকের এসব মেডিক্যাল সামগ্রী সংগ্রহের কাজটি কিছু মানুষ কোনো ধরনের নিরাপত্তা সামগ্রীর ব্যবহার ছাড়াই খালি হাতে করছেন। ময়লার স্তুপের নীচ থেকে তার প্রয়োজনীয় জিনিসটি বের করে আনতে লাঠির ব্যবহারও করছেন কেউ। এরপর তা প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে ভ্যান ও রিকশায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সংগ্রহকারীদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানান, এগুলো এখান থেকে সংগ্রহ করে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করেন তারা। আর সেই বিক্রির টাকা দিয়েই চলে তাদের সংসার।
ভাঙারির দোকানের কর্মচারীরা জানান, এসব জিনিসের ক্রেতা বরিশালের থেকে ঢাকাতেই বেশি রয়েছে।
তবে করোনা ওয়ার্ডে ব্যবহৃত প্লাস্টিক ও কাগজের সামগ্রীগুলো এভাবে সংগ্রহ করে নগরের বিভিন্ন ভাঙারির দোকানে নিয়ে বিক্রি করা যে কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ সেই সম্পর্কে তারা অবগতই নন।
শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সৌরভ সুতার বাংলানিউজকে জানান, সাধারণত হাসপাতালের বর্জ্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আর তা যদি হয় সংক্রমিত ব্যাধি করোনায় আক্রান্ত রোগীর, সেগুলো আরও মারত্মক ক্ষতিকর হবে এটাই স্বাভাবিক। এসব বর্জ্যের ক্ষেত্রে পুড়িয়ে ফেলা নয়তো মাটি চাপা দেওয়াই উত্তম। নয়তো যে কেউ সংক্রমিত হতে পারে।
সদ্য যোগদান করা হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বর্জ্যগুলো আগে সিটি করপোরেশন নিয়ে যেতো। তবে তারা নেওয়া বন্ধ করে দিলে মাটি খুঁড়ে এই বর্জ্যগুলো চাপা দেওয়া হচ্ছে।
কাগজে কলমে হাজার শয্যার এ হাসপাতালটিতে দ্বিগুণ রোগী থাকছে বলে জানিয়ে তিনি আরও জানান, জনবল সংকটের কারণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজসহ বর্জ্য অপসারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে সম্প্রতি বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার হাসপাতাল পরিদর্শন শেষে জানান, বর্জ্য অপসারণের বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন দ্রুত হাসপাতাল থেকে ময়লা-আবর্জনা নেওয়ার কাজটি শুরু করবেন।
উল্লেখ্য চিকিৎসা-বর্জ্য (ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ) বিধিমালা, ২০০৮ এ- চিকিৎসা-বর্জ্যকে ১১টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে সংক্রামক/জীবাণুযুক্ত শ্রেণির বর্জ্যকে প্রথমত প্রাঙ্গন/নিরাপদ স্থানে কংক্রিটের পিট পদ্ধতিতে শোধন/বিনষ্টকরণ করতে বলা হয়েছে। আর পরিমাণে অল্প হলে গভীর মাটি চাপা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বাষ্প অটোক্লেভিং/মাইক্রোওয়েভ ট্রিটমেন্ট/ইনসাইনেরেটরের ব্যবহার করতেও বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২১
এমএস/কেএআর