ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

অনাবৃষ্টিতে ইলিশ আহরণে পড়বে বিরূপ প্রভাব

সোলায়মান ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, মে ১, ২০২১
অনাবৃষ্টিতে ইলিশ আহরণে পড়বে বিরূপ প্রভাব

ফেনী: দুই মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে ইলিশ আহরণে নদীতে নৌকা ভাসিয়েছেন জেলেরা। ঋণ-দাদনে জর্জরিত এসব মৎস্যজীবীরা আশা করে আছেন তাদের জাল ভরে আসবে ইলিশে, দূর হবে তাদের দুঃখ-কষ্ট।

অন্যদিকে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন মৎস্য গবেষকরা, দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টির কারণে ইলিশ উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। পানির প্রবাহ ঠিক না থাকলে নদীতে মাছ থাকলে জেলেদের জালে তা আশানুরুপ না আসা নিয়ে চিন্তিত তারা।  

শনিবার (১ মে) নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া কয়েকজন জেলে জানান, নদীর পানিতে লবণ বেড়ে গেছে। বৃষ্টিও নেই, আশানুরুপ মিলছে না ইলিশ।  

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, যেভাবে অনাবৃষ্টির অবস্থা তৈরি হয়েছে এটা চলতে থাকলে চলতি মৌসুমে ইলিশ উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। পড়বে বিরুপ প্রভাব, ব্যাপক ক্ষতি না হলেও এটা নিয়ে আমরা চিন্তিত।

তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে ইলিশের প্রজনন সক্ষমতা ভালো। সরকার প্রদত্ত বিধিনিষেধ জেলেরা মানার কারণে মা মাছ ভালোভাবে ডিম ছাড়তে পেরেছে, জাটকা নিধন কমেছে। বৃষ্টি আর পানির প্রবাহ ঠিক থাকলে বড় আকারের ইলিশ পাবেন জেলেরা।  

ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান আরো বলেন, গত মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদন হয়েছে। বৃষ্টি এবং আবহাওয়ার সবকিছু ঠিক থাকলে এবার তা ছাড়িয়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন হতে পারে।  

তিনি বলেন, মার্চের ১ তারিখ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত যে নিষিদ্ধ সময় গেল এবং ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই এবং অক্টেবরের ২২ দিনের এ সময় টুকুতে যদি জেলেরা সরকারের বিধি নিষেদের আলোকে ইলিশ আহরণ না করেন তাহলে বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন আরো অনেক বেড়ে যাবে।  

মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, ইলিশের অভয়াশ্রমগুলোতে জাটকা ধরা বন্ধ করা এবং নিষিদ্ধ সময়ে মা ইলিশ ধরা বন্ধ করার কারণে ধারাবাহিকভাবে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। বেশি ওজনের ইলিশও এখন পাওয়া যাবে।  

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ফেনী ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মো. সাইফুদ্দিন শাহ্ বলেন, দেশের মোহনা অঞ্চলের নদীগুলোতে বিজ্ঞানভিত্তিক অ্যাডাপ্টিভ কো-ম্যানেজমেন্ট এবং জেলেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক-প্রতিবেশিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে চলমান ইকো ফিশ প্রকল্পে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ এবং পরে জাটকা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপে ইলিশের উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে।  

তিনি আরো বলেন, ‘ইলিশের মৌসুমেও আসছে পরিবর্তন, এর কারণ হচ্ছে বৃষ্টির সময়কাল, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এমনটা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মতিরহাট ও লুধুয়া মাছঘাট এলাকার কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেঘনার পানিতে লবণ বেড়ে গেছে। বৃষ্টিও নেই। দীর্ঘদিন পর তারা নৌকা ভাসাবে, কিন্ত ইলিশ পাওয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। বৃষ্টি না হলে ইলিশ কম পাওয়া যায়। এরমধ্যে এখন নদীর পানিতে লবণাক্ততা নতুন সমস্যা।  

এ বিষয়ে কথা হয় লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় মেঘনার পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। জোয়ারের পানি নদীতে প্রবেশ করছে , অন্যদিকে অনাবৃষ্টির কারণে নদীর পানি দিনকে দিন কমছে। বৃষ্টি হলে এ সমস্যা দূর হবে।  

নোয়াখালীর হাতিয়া, সুবর্ণচার, নিঝুমদ্বীপ ও লক্ষ্মীপুরের কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেঘনার পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও বৃষ্টি না হওয়ায় ইলিশ প্রাপ্তি নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছেন।

এদিকে শনিবার বাংলানিউজের ভোলার প্রতিবেদক ছোটন সাহা তার এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, ৭ জন জেলে প্রায় ৮ ঘণ্টা নদীতে মাছ শিকার করে পেয়েছেন মাত্র ৬টি ইলিশ এবং কিছু পোয়া মাছ। নদীতে ইলিশ নেই তাই ফিরতে হয়েছে হতাশা নিয়ে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪১ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২১
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।