ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কুষ্টিয়ার ইউটিউব গ্রাম

ইউটিউবে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন তারা

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
ইউটিউবে বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন তারা

কুষ্টিয়া: নোমান ২০১৮ সালে মাস্টার্স পাস করে চাকরির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলেন। হাত খরচের টাকাও থাকতো না কাছে।

তখন নতুন কিছু করার প্রবল ইচ্ছা থাকলেও ছিল না সুযোগ। এ সময় কথা হয় ‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’ ইউটিউব চ্যানেলের মালিক লিটন আলী খাঁনের সঙ্গে।  

এরপর লিটন আলী খাঁনের উদ্যোগে গ্রামের কিছু বেকার যুবককে নিয়ে তারা কাজ শুরু করেন। ‘ক্রিয়েটিভ বয়েজ’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে তারা এখন স্বাবলম্বী। চ্যানেলটিতে কাজ করেন শিমুলিয়া গ্রামের শিক্ষিত ৭ বেকার যুবক।

বাঁশ ও কাঠের পাশাপাশি গ্রামের বিভিন্ন  উপকরণ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন জিনিষপত্র কীভাবে তৈরি করে তারা সেগুলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভিডিও করে এবং ইউটিউবে আপলোড করে।

শিমুলিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক বাঁশ দিয়ে বাতা, নারিকেলের আকৃতির ঘর, লাভ আকৃতির বসার স্থান, বাঁশ ও খড় দিয়ে ব্যাঙয়ের দৃষ্টিনন্দন ছাতা, ছোট ব্রিজ, দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য পুকুরের মাঝে গোল ঘর ইত্যাদি তৈরি করছেন।

নোমান বাংলানিউজকে জানান, লেখাপড়া শেষ করে অনেকেই চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কোনো না কোনো বিষয়য়ে দক্ষতা ও সৃজনশীলতা থাকে। সবাই সেটাকে প্রকাশ করার সুযোগ পায় না। গ্রামীণ রান্না করে ‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’ ইউটিব চ্যানেলে দেওয়া হয়। তাই তাদের তত্ত্বাবধানে আমরা গ্রামীণ বাঁশ ও কাঠের বিভিন্ন জিনিষপত্র তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করি। এখন আমরা ৭জন বেকার ছেলে এখানে কাজ করি। একদিকে যেমন হাসিখুশি থেকে কাজের মধ্য দিয়ে সময় কেটে যায়, তেমনি আর্থিকভাবেও আমরা স্বচ্ছল হয়েছি। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাঁশ দিয়ে ইতোপূর্বে জিরাফ, হাতি, দোলনা, ঘর তৈরি করেছিলাম। অনেকদিন  হওয়ায় সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। বাঁশ ব্যবহার করে নারিকেল আকৃতির দোতালা ঘর তৈরি করেছি, সেই সঙ্গে দর্শনার্থীদের ছবি তোলা ও বসার জন্য লাভ আকৃতির বসার বেঞ্চ, ব্যাঙয়ের ছাতা তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে পুকুরের পানির মধ্যে আমরা গোলঘর এবং বাঁশের তৈরি টাওয়ার বানানোর চেষ্টা করছি। যাতে করে বিভিন্ন  এলাকা থেকে আসা দর্শনার্থীরা আনন্দ পায়। সেই সঙ্গে এসব কাজ কীভাবে করা যায় তা ভিডিওর মাধ্যমে দেখানোর চেষ্টা করি। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন জিনিষপত্র, ঘরের আসবাবপত্র তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ’

নোমানের সহযোগী রবিউল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এখানে কাজ করি। পুকুরের মাঝে বসার জন্য আমরা বাঁশ দিয়ে একটা ঘর তৈরি করছি। যাতে সেখানে দর্শনার্থীরা এসে দেখতে ও বসতে পারে। আমরা সবাই মিলেমিশে কাজ করি। এখান থেকে যে টাকা দেয় তা দিয়ে মোটামুটি আমাদের সবার সংসার চলে যায়। ’

‘অ্যারাউন্ড মি বিডি’ এর পরিচালক শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ‘ভিডিওর মাধ্যমে গ্রামের ৭ বেকার যুবক বাঁশের বিভিন্ন ব্যবহার দেখায় ‘ক্রিয়েটিভ বয়েজ’ ইউটিউব চ্যানেলে। এতে তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর আগে আমাদের রান্নার কাজ দেখতে অনেক দূর থেকে লোকজন আসতো। তখন বিনোদনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আমরা দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য এসব তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে করে একদিকে যেমন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হয়েছে, তেমনি দর্শনার্থীদের বিনোদনের ব্যবস্থা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভিডিওর মাধ্যমে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহার সম্পর্কে সবাই জানতে পারছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।