ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

এমডিজির ৪৯ সূচকের ৩০টি পূরণের পথে নেই বাংলাদেশ

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১০
এমডিজির ৪৯ সূচকের ৩০টি পূরণের পথে নেই বাংলাদেশ

ঢাকা: সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) ৮টি অবশ্য পূরণীয় লক্ষ্যের ৪৯টি সূচকের ১৯টি পূরণের পথে রয়েছে বাংলাদেশ। বাকিগুলোর  ২০টিতে কোনো অগ্রগতি নেই।

আর অন্য ১০টি সূচকের কোনো তথ্যই নেই সরকারের কাছে।

এ রকম একটি পরিস্থিতিতে এমডিজি প্রণয়নের ১০ বছরের মূল্যায়ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অথচ এসব সূচক পূরণে হাতে সময় আছে মাত্র ৫ বছর।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ‘এমডিজির ৪৯টি সূচকের ১৯টি সূচক অর্জনের পথে আমরা সঠিক পথেই রয়েছি। তবে অন্য ২০টি সূচক পূরণে সরকারকে আরও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। ’

বাকি ১০টি সূচকের অগ্রগতি বা এ সম্পর্কে কোনো কাজ করা হচ্ছে কি-না সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই বলেই জানান তিনি।

তবে এ লক্ষ্য পূরণ না হওয়ার পেছনে বৈদেশিক সহায়তা না পাওয়াকেই দায়ী করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার পরিকল্পনামন্ত্রী এ কে খন্দকার তার দপ্তরে বসে বাংলানিউজকে বলেন, ‘এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের টাকা পাওয়া যায়নি। প্রতিশ্রুত বিদেশি সহায়তাও আসেনি। ’

তবে তিনি ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করার পাশাপাশি সবার জন্য কাজের সুযোগ (কর্মসংস্থান) তৈরি করাকেই এমডিজির লক্ষ্য পূরণের পথে প্রধান বাধা হিসাবে দেখছেন।

মন্ত্রী  জানান, ২০১৫ সালের মধ্যে ল্ক্ষ্য অর্জনে দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে চলমান কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয়, কাঠামোগত দুর্বলতা, শস্যের বহুমুখীকরণে সীমাবদ্ধতা, শিশুদের অপুষ্টি, আঞ্চলিক আয় বৈষম্য এবং সঠিক পরিকল্পনা ও দতার দুর্বলতাকে অন্যতম বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তবে লক্ষ্য পূরণে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, সমন্বিত ভূমি ব্যবস্থাপনা ও নগরনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কার্যক্ষমতা বাড়ানো, পুষ্টি ও স্বাস্থ্য কর্মসূচি বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য-বান্ধব কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জ্বালানির স্বল্পতা হ্রাস এবং সুশাসন উন্নত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে বলে তিনি একে খন্দকার জানান।
 
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমানও লক্ষ্য পূরণে পিছিয়ে পড়ার পেছনে আর্থিক সহায়তাকেই বড় করে দেখছেন।

শুক্রবার টেলিফোনে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এমডিজি পূরণে বাংলাদেশের প্রচুর অর্থ সহায়তার প্রয়োজন ছিল। উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা পাওয়া যায়নি। ’

তিনি বলেন, ‘এমডিজি প্রণয়নের পর গত ১০ বছরে প্রতি বছর গড়ে ১৫৪ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক অনুদান ও ঋণসহায়তা পাওয়া গেছে। ’

চাহিদার তুলনায় এটি কম বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

এ ব্যাপারে অবশ্য আগেই সতর্ক করেছিল বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ। গত এপ্রিলে গ্লোব্যাল মনিটরিং রিপোর্ট-এ সতর্ক করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ২০১৫ সালের মধ্যে এমডিজি অর্জনে ব্যর্থ হবে। ’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, ‘বাংলাদেশের চলমান অবকাঠামো বিবেচনায় কোনো সূচকই পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে কোনো কোনো সূচক তো অবশ্যই পূরণ করতে হবে। ’

সরকারি কাজে নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সহস্রাব্দ উন্নয়নের যে টার্গেট বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা পূরণে আমাদের আমলেও প্রতিশ্রুত যথেষ্ট অর্থ ছাড় করেনি বিশ্বব্যাংক ও দাতা সংস্থা। ’

 তাই দারিদ্র্য দূর করতে কিছুটা সময় লাগবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আকবর আলি খান বলেন, ‘তবে সীমিত সম্পদের মধ্যেই সরকারের উচিত সুষ্ঠু কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাওয়া। ’

এদিকে, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার বাংলাদেশ অধ্যায়ের অগ্রগতি ও মূল্যায়নে সমন্বয়কের দায়িত্বে আছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ। এদের তৈরি করা গত ১০ বছরের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে হতাশাজনক চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম ৯ বছরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নবজাতক ও শিশুমৃত্যু হার কমিয়ে আনা, সুপেয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় লিঙ্গবৈষম্যের মতো সূচকগুলোতে কিছুটা সাফল্য পেলেও অন্যান্য লক্ষ্য অর্জনে ঢের পিছিয়ে বাংলাদেশ।

অপুষ্টি ও দারিদ্র্য হ্রাস, বেকারত্ব, আঞ্চলিক আয় বৈষম্য, মাতৃস্বাস্থ্য ও মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস, জ্বালানি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন, জাতীয় সংরক্ষিত এলাকার সুরক্ষা, উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলা, কার্বন নির্গমন হ্রাস এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এমডিজি পূরণের প্রধান বিষয় হিসেবে দারিদ্র্য হ্রাস, বেকারত্ব কমানো এবং মাতৃ-শিশু মৃত্যুর হার কমানোকে  প্রধান করণীয় বলে বিবেচনা করা হয়।

১৯৯০-৯১ সালে এমডিজির ভিত্তি বছরে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এটা ২০১৫ সালে ২৯ ভাগে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্য ৩৮ দশমিক ৭ ভাগে নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

তবে দেশে বেকারত্ব আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশে এখন বেকারের সংখ্যা ২ কোটি ৪৪ লাখ। এটা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এটা ১৯৯০ সালের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। ২০০০-’০২ সালে বেকারত্বের এ হার ছিল মাত্র ৮ শতাংশ।  

২০১৫ সাল পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুর হার ১৪৪-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও ২০০৫ সাল থেকে মাতৃমৃত্যু হার স্থির রয়েছে ৩৪৮-এ। এ চিত্রও হতাশার।

২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের শীর্ষ বৈঠকে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) প্রণীত হয়।

১৪৭টি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এবং জাতিসংঘের ১৮৯টি সদস্য রাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে সহস্রাব্দ উন্নয়নের এ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করে পরবর্তী ১৫ বছরের মধ্যে তা পূরণ করার অঙ্গীকার করে।

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় প্রধান ক্ষেত্র ৮টি । আর গড়পড়তা লক্ষ্য ১৮টি। সেইসঙ্গে এসবের অন্তর্গত মোট ৪৯টি সূচক ধরা হয়েছে।

প্রধান ৮টি ক্ষেত্র হল চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল করা, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা, নারী-পুরুষের সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যু হ্রাস, প্রসূতিস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগ মোকাবেলা, অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখা এবং সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে উন্নতির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad