ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২১
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা: আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। যে দেশে, কোনো ধরনের অন্যায় ও অবিচার থাকবে না, মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে।



প্রধানমন্ত্রী বলেন, শহীদ শেখ রাসেলের মতো আর কেউ যেন কোনো দিন এমন নির্মমতার শিকার না হয় সেই কামনা করি।  এ সময় শিশুরা যাতে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে সে প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তিনি।  

সোমবার (১৮ অক্টোবর) শহীদ শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।  এ সময়ও তিনি শেখ রাসেল দিবসের-২০২১ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। শহীদ শেখ রাসেল আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু আছে তার পবিত্র স্মৃতি। দেশের সব শিশুর মধ্যে আজও আমি রাসেলকে খুঁজে ফিরি। শিশুদের রাসেলের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। দেশ পরিচালনাসহ নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে শেখ রাসেলের দীপ্ত প্রত্যয়কে হৃদয়ে ধারণ করে তারা উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করবে। গড়ে তুলবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। যে দেশে, কোনো ধরনের অন্যায় ও অবিচার থাকবে না। মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, সেটাই আমরা চাই। আমরা সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই।

আবেগাপ্লুত কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, রাসেলের মতো আর যেন কেউ কোনো দিন এমন নির্মমতার শিকার না হয়।  যেন পরিবারের সবার মৃত্যু দেখতে না হয় কোন শিশুকে। সব শিশু যেন একটা নিরাপদ শৈশব পায়, বেড়ে ওঠার ভরসা পায়, নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে। আপনারা, আমাদের ছোট রাসেল সোনার জন্য দোয়া ও আশীর্বাদ করবেন।

শহীদ শেখ রাসেলের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাসেল নামটি মনে আসলেই প্রথমে যে ছবিটি ভেসে ওঠে তা হলো-হাস্যোজ্জ্বল, প্রাণচঞ্চল ছোট-দুরন্ত এক শিশু। যে শিশুর চোখগুলো হাসি-আনন্দে ভরপুর। মাথাভরা অগোছালো চুলের সুন্দর একটি মুখাবয়ব-যেখানে ভালোবাসা ও মায়া খেলা করে। রাসেলের যে দিন জন্ম হলো আমি, কামাল, জামাল, রেহানাসহ আমরা সবাই ভীষণ উৎকণ্ঠায় ছিলাম। সময় যেন থমকে গিয়েছিল। আমরা সবাই ঘুমে ঢুলুঢুল চোখ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম নতুন অতিথির আগমন বার্তা শোনার জন্য। মেঝ ফুফু এসে আমাদের খবর দিলেন যে, আমাদের ভাই হয়েছে। আমরা তখন খুশিতে আত্মহারা। কখন দেখতে পাবো ভাইটিকে সেই ভাবনায় অস্থির। কিছুক্ষণ পরে বড় ফুফু আমার কোলে তুলে দিয়েছিলেন ছোট রাসেলকে। মাথাভরা কুচকুচে ঘন কালো চুল, তুলতুলে নরম গাল। রাসেল হয়ে উঠলো আমাদের চোখের মণি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, রাসেলের জন্মের সময় আব্বা নির্বাচনী মিটিং করতে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন। তখনকার দিনে আজকের মতো মোবাইলফোন ছিল না। ল্যান্ডফোনই ছিল একমাত্র ভরসা। রাসেলের জন্মের খবর যেন রাতেই আব্বা পান তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আব্বার অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন খ্যাতনামা দার্শনিক ও নোবেলজয়ী লেখক বার্ট্রান্ড রাসেল। আব্বা বার্ট্রান্ড রাসেলের বই পড়ে, অনুবাদ করে তার ব্যাখ্যা করে আমাদের ও মাকে শোনাতেন। আব্বা ও মা বার্ট্রান্ড রাসেলের ফিলসফি খুব পছন্দ করতেন। তাই রাসেলের জন্মের পর শখ করে নাম রেখেছিলেন ‘রাসেল’।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের নির্মম বুলেট কেড়ে নিলো ছোট রাসেলকে। বাবা-মা, দুই ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, চাচার মরদেহের পাশ দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে সবার শেষে ঘাতকেরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করলো রাসেলকে। যাদের সান্নিধ্যে, স্নেহ-মমতায়, আদর-ভালোবাসায় বড় হয়েছে তাদের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে একটি শিশুর মনের অবস্থা কী হয়েছিল-আমি ভাবতে পারি না। সেদিন ছোট শিশু রাসেলও খুনিদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। রাসেল তো বাঁচতে চেয়েছিল। বাঁচার জন্য ঘাতকদের কাছে আকুতি জানিয়েছিল, মায়ের কাছে যাওবার কথা বলেছিল। মায়ের কাছে নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ঘাতকরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। কিন্তু কেন? কেন ওরা একটা ছোট শিশুকে পর্যন্ত রেহাই দিলো না? পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীও এভাবে শিশুদের হত্যা করেছিল। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত এভাবে অত্যাচার নির্যাতন শুরু করে। এরপর তারা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ মেরেছে, শিশুদের পুড়িয়ে মেরেছে।

শিশু-কিশোরদের মনোযোগী হয়ে লেখাপড়া করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চাই। যেখানে অন্যায় ও অবিচার থাকবে না। তোমরা মন দিয়ে লেখাপড়া করো। তোমাদের শিক্ষা কেউ নিতে পারবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২১
এসকে/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।