ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় রমজানকে হত্যা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২১
ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় রমজানকে হত্যা

ঢাকা: রমজান মিয়া (১৯)। এগারো হাজার টাকা বেতনে কাজ করতেন আশুলিয়ার শিমুলতলার দি ভাই ভাই ফার্নিচারে।

কাজ শেষে মোল্লা বাজারে তার ভাড়া বাসায় ফেরার সময় পলমল গার্মেন্টসের সামনে পৌঁছালে তার কাছে থাকা মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে ছিনতাইকারীরা।  
রমজান মিয়া তার কষ্টার্জিত টাকায় কেনা মোবাইল ও টাকা না দিয়ে তাদের গতিরোধ করার চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীরা ধারালো ছুরি দিয়ে রমজানের বুকে, পেটে ও সরু রড দিয়ে গলায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গ্রেফতার ছিনতাইকারীরা হলেন- আমিনুল (২৮), সাগর মোল্লা (২৮) ও মো. ইউনুছ (৩৫)। রোববার (১৮ অক্টোবর) দিবাগত রাতে কয়েকটি জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে। অভিযানে নিহত রমজানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরি জব্দ করা হয়।

সোমবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।

তিনি বলেন, ৪ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে নিহত রমজান মিয়া দ্বিতীয়। আর্থিক অনটনের সংসারে জীবিকার সন্ধানে প্রায় ছয় বছর আগে শিশু অবস্থায় ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় রমজান। এরপর খালার পরিবারের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থেকে আশুলিয়ার শিমুলতলার রানা মিয়ার ফার্নিচারের দোকানে ছয় হাজার টাকা বেতনে প্রায় তিন বছর কাজ করে। পরবর্তীতে একই এলাকার দি ভাই ভাই ফার্নিচার দোকানে ১১ হাজার টাকা বেতনে প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করে আসছিল।

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে তা সিআইডি'র নজরে আসে। সিআইডি ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনার বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত সংগ্রহ ও গভীরভাবে বিশ্লেষণের মাধ্যমে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। এরপর আমিনুলকে গ্রেফতার করা হয় নরসিংদীর জামগড়া এলাকা থেকে, সাগর মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয় রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে ও ইউনুছকে গ্রেফতার করা হয় আশুলিয়ার জিরানী এলাকা থেকে।

বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ০১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে ঢাকার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়াস্থ পলমল গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সামনে রমজান মিয়ার পথরোধ করে গ্রেফতার তিন ছিনতাইকারী। রমজান তার কষ্টার্জিত টাকায় কেনা মোবাইল ও টাকা না দিয়ে তাদের গতিরোধ করার চেষ্টা করলে এক পর্যায়ে ছিনতাইকারীরা ধারালো ছুরি দিয়ে রমজানের বুকে, পেটে ও সরু রড দিয়ে গলায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এরপর রাত আনুমানিক ১২টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে থানা পুলিশ সংবাদ পেয়ে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় নিহত রমজানের খালা মোসাম্মৎ কুলসুম বেগম অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানার মামলা করেন। মামলার পর সিআইডি ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে আসামিদের গ্রেফতার করে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতাররা মূলত সক্রিয় ছিনতাইকারী দলের হোতা ও সহযোগী। তারা ওই এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত রাস্তায় চলাচলকারী পথচারীদের টার্গেট করে তাদের গতিরোধ করে ছিনতাই করে। কেউ তাদের ছিনতাই কাজে বাধা দিলে ধারালো ছুরি, লোহার রড দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যেত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২১ 
এসজেএ/এসআইএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।