ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

বন্যা ছাড়া একটি বছরও কাটেনি জহুরার জীবনে

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২১
বন্যা ছাড়া একটি বছরও কাটেনি জহুরার জীবনে

সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বিরেন্দ্রনগর গ্রামে জহুরা আক্তারের বসবাস। বয়স ১৯ বছর।

জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এই ১৯ বছরের জীবনে এমন একটি বছরের কথাও মনে করতে পারলেন না যে বছর বন্যায় তাদের ঘর-বাড়ি ও এলাকা প্লাবিত হয়নি। শুধু কী বন্যা পাহাড়ি ঢল এবং নদী ভাঙনও রয়েছে সঙ্গে। আর বজ্রপাত মাঝে মাঝেই কেড়ে নেয় পরিচিত জনদের জীবন।

তবে ২০১৭ সালের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির কথা কোনোভাবেই ভুলতে পারেন না জহুরা। কারণ সেই বারের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি অতিক্রম করেছিল আগের সব রেকর্ড। জমির ধান সব নষ্ট হয়েছিল, অনেক গবাদি পশু মারা গিয়েছিল, ঘরে ছিল না খাবার ও বিশুদ্ধ পানি ব্যবস্থা, বেশ কয়েকদিন ছিল না বিদ্যুতের খোঁজ এবং পুরো পরিবারের আয়ের পথ ছিল বন্ধ।  

এমনিতেও জহুরার এলাকার যাতায়াত ব্যবস্থা নাজুক। তার ওপর প্রতিবারের বন্যায় রাস্তা ঘাটের আরও বেহাল অবস্থা দেখা দেয়। এবারের বন্যার আগে তার এলাকার কিছুটা পথে ইট বেছানো হয়েছিল। কিন্তু বন্যায় সে পথ নষ্ট হয়ে আবার আগের রূপেই ফিরে গেছে। কাঁদা পানিতে সব একাকার হয়ে থাকে। চলাচল করতে বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই।  

জহুরার পরিবারের প্রধান কাজ ফসলি জমিতে সেচ দেওয়া। বন্যার সময় তার পরিবারের করার মতো কোনো কাজ থাকে না। যার ফলে পরিবারের আয় প্রায় বন্ধই থাকে বলা চলে। তার পরিবার বন্যার সময় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কিছু ত্রাণ পেলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন জহুরা।  

আর্থিক অসচ্ছলতা ও নানা প্রতিকুলতা থাকা সত্ত্বেও অন্যের উপকারে থেমে নেই জহুরা। স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকের হয়ে অসুস্থ মানুষের সেবা, প্রসূতি মায়ের সেবা ও নবজাতক শিশুর সেবাদান করেন তিনি। তাছাড়াও এলাকার ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমেও সহযোগিতার হাত বাড়ান তিনি। ইউএনডিপির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে স্থানীয় সরকারের উদ্যোগ লোকাল গভর্নমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (লজিক) প্রজেক্টের মাধ্যমে তারা অনেকেই সহযোগিতা পেয়েছেন।

তবে সরকার থেকে শুধু ত্রাণ বিতরণই সমস্যার সমাধান নয় বলে তিনি মনে করেন। এছাড়াও এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের চান তিনি। বন্যার সময় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট নিরসনে চান গভীর নলকূপ ও বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে চান সৌরবিদ্যুতের সুবিধা।

বন্যার সময়সহ সারা বছরের আয়ের সুবিধার্থে সেলাই মেশিন বিতরণ, নকশী কাঁথা তৈরির কাজ ও ভাসমান দোকানের ব্যবস্থা করা গেলে তাদের এলাকার অনেকেই উপকৃত হবেন বলে জহুরা মনে করেন।  

পড়াশোনা শেষ করে আইটি সেক্টরে কাজ করতে চাওয়া জহুরার জীবন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে কতদূর যেতে পারে তা একটি বড় প্রশ্ন।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮,২০২১ 
এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad