ঢাকা: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ছাত্রদের আন্দোলনে ভর করে একটি মহল দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সোমবার (২৯ নভেম্বর) রাতের ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে তারা ছাত্রদের গায়ে কালিমা লেপনের চেষ্টা চালাচ্ছে।
বুধবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দাবির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে বিআরটিসির বাসে হাফ ভাড়া ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকরের নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে বাস মালিক সমিতি একই দিন থেকে ঢাকায় হাফ ভাড়া কার্যকর করেছে। বিআরটিসির বাসে ছাত্রদের হাফ ভাড়া যেভাবে সারা দেশে কার্যকর করা হয়েছে আশাকরি চট্টগ্রামসহ অন্যান্য শহরেও বেসরকারি বাস মালিকরা একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেবেন।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের বাসের চাপায় এক ছাত্র নিহত হয়েছে। তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। এ ঘটনা একটু বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, এ ঘটনা থেকে কিছু প্রশ্ন উঠে এসেছে। প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্যানুযায়ী ঘটনাটি ঘটে রাত পৌনে ১১টায়। এর ১২ মিনিট পর ১০টা ৫৭ মিনিটে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ তাদের যে ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ করেছে। রাত ১১টায় জামায়াত পরিচালিত টেলিগ্রাম চ্যানেলে খবরটি প্রকাশিত হয়। আর সেখান থেকে সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে ১২ মিনিটেই নিরাপদ সড়ক চাই পেজের অ্যাডমিন সেখানে কীভাবে পৌঁছালো, সেখান থেকে লাইভ কীভাবে করলো? বাঁশের কেল্লা কীভাবে ১৫ মিনিটের মধ্যে এ খবর পেল এবং সেখন থেকে প্রচার করলো? ঘটনার ১৫ মিনিটের মধ্যেই ১০/১২টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হলো। গাড়িগুলোতে আগুন ছাত্ররা দেয়নি। কারণ ঘটনার ১৫ মিনিটের মধ্যে অত ছাত্র সেখানে পৌঁছায়নি। প্রশ্ন হচ্ছে যারা ফেসবুক পেজে লাইভ দিয়েছে তারা কি ঘটনা সম্পর্কে আগে থেকেই অবহিত ছিল কিনা? ১২ মিনিটের মধ্যে যারা লাইভে গেছে এবং ১৫ মিনিটের মধ্যে লোকজন যোগাড় করে বাসে যে আগুন দেওয়া হলো আগে থেকে নিশ্চয়ই প্রস্তুত ছিল। এত অল্প সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী সেখানে পৌঁছাতে পারে না অথচ তারা পৌঁছে গেল, এই প্রশ্নগুলো উঠে এসেছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে ভর করে একটি মহল দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, সোমবার রাতের ঘটনা থেকে সেটি স্পষ্ট। ছাত্রদের গায়ে কালিমা লেপন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। ছাত্ররা অনেক দিন ধরে আন্দোলন করছে, তারা কিন্তু কোনো জায়গায় গাড়িতে আগুন দেয়নি। এমনকি ভাঙচুরের ঘটনা সেভাবে ঘটেনি। সেদিন ঘটনার ১৫ মিনেটের মধ্যে ১২ থেকে ১৫টি বাসে আগুন দেওয়া হলো, এগুলো দুস্কৃতিকারীরা করেছে। যারা দেশে কোনো কিছুর ওপর ভর করে অতীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা নিয়েছে বর্কমানেও এই ছাত্রদের ওপর ভর করে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টার উদ্দেশ্যে এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি বলেন, এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। সরকার ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সহানুভুতিশীল। রামপুরার ঘটনাটি কি দুর্ঘটনা ছিল, নাকি পরিকল্পিত ছিল। এ ঘটনা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে এবং হবে। যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে নিশ্চয়ই শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে মামলাও হয়েছে।
যারা লাইভ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ১১/১২ মিনিটের মধ্যে কীভাবে তারা সেখানে পৌঁছে লাইভে গেল? ১৫ মিনিটের মধ্যে বাসে আগুন দেওয়া হলো। ওখানে কিন্তু তার সহপাঠীরা ছিল না। মধ্যরাতে অত ছাত্রও সেখানে ছিল না। তাহলে এরা কারা, সে প্রশ্ন তো অবশ্যই আসে। দ্রুততার সঙ্গে এ কাজ করেছে। এত দ্রুত ঢাকার যানজট মাড়িয়ে সেনাবাহির পক্ষেও সেখানে যাওয়া সম্ভব কিনা সেটি একটি বড় প্রশ্ন। তাহলে কি আগে থেকেই তারা সেখানে ছিল? তদন্ত হচ্ছে তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১,২০২১
জিসিজি/এমএমজেড