ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

পার্বত্য এলাকার পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য সরকার তৎপর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২১
পার্বত্য এলাকার পরিবেশ সুন্দর রাখার জন্য সরকার তৎপর

ঢাকা: পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেছেন, সারা বিশ্বে এমন কোনো জায়গা আছে যেখানে টুকটাক সমস্যা থাকে না। কোনো কারণে যদি কোনো ঘটনা ঘটেই যায়, সমস্যা চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে ওই এলাকার সুন্দর পরিবেশ রাখার জন্য সরকার তৎপর থাকে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৪তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

শন্তু লারমা অভিযোগ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রামকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্বত্যমন্ত্রী বলেন, উনি উনার দৃষ্টিকোন থেকে বলতেই পারেন। সারা বিশ্বে এমন কোনো জায়গা আছে যেখানে টুকটাক সমস্যা থাকে না। কোনো কারণে যদি কোনো ঘটনা ঘটেই যায়, সরকার তাৎক্ষণিকভাবে সেটি সমাধানের জন্য, সমস্যা চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে এসে ওই এলাকার সুন্দর পরিবেশ রাখার জন্য তৎপর থাকে।  

বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেন, শান্তি চুক্তির পর এ অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রমে নতুন গতির সঞ্চার হয়েছে। এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করা হয়েছে। পার্বত্যবাসীর উন্নয়নে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বিভিন্ন সরকারি-আধাসরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রভৃতি। এতে একদিকে মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ছে অন্যদিকে জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। রাঙামাটিতে মেডিক্যাল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শান্তি চুক্তির সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পার্বত্য এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আর পারস্পরিক সহনশীলতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ১৯৭৩ সালেই বঙ্গবন্ধু একটি আলাদা বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির বিশাল জনসভায় বঙ্গবন্ধু ‘জাতীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার অবশ্যই রক্ষা করা হবে’ মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ অঞ্চলের উন্নয়নে নানা কর্মসূচির ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পর উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

মন্ত্রী বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি আজ ২৪ বছরে পদার্পণ করেছে। শান্তি চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ৪৮টি ধারা ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৫টি আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে, ৯টি ধারা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।  

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য শান্তি আর উন্নয়ন। আমরা যারা শান্তি চাই তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করছি। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে অভিযোগ নয়, কোনো জায়গায় বাধা বা সমস্যা হলে কীভাবে সমাধান করা যায় সেটি দেখতে হবে। সমস্যা যেমন আছে, সমাধান ও আছে। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি আছে, যার প্রধান হচ্ছেন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি (মন্ত্রী পদমর্যাদা)।

তিনি আরও বলেন, পার্বত্য এলাকার যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না সেসব এলাকায় ১০ হাজার ৮৯০টি পরিবারের মধ্যে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। আরও ৪০ হাজারটি সোলার হোম সিস্টেম ও ২ হাজার ৫০০টি সোলার কমিউনিটি হোম সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ চলমান রয়েছে। ৪ হাজার ৫০২টি পাড়াকেন্দ্রের মাধ্যমে এ অঞ্চলের নারী ও শিশুদের মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য টেকসই সামাজিক সেবা দেওয়া হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসচ্ছল ও প্রন্তিক পরিবারের নারী উন্নয়নে গাভী পালন প্রকল্প, প্রত্যন্ত এলাকায় উচ্চ মূল্যের মসলা চাষ প্রকল্প, ফলের বাগান সৃজন, কফি ও কাজু বাদাম চাষ এবং ইক্ষু চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পসহ অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় অনগ্রসর ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ সময় তিনি সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিনির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

মন্ত্রী বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষার হার ছিল অনেক কম, এখন প্রায় ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই।

মন্ত্রণালয়ের সচিব মোসাম্মৎ হামিদা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য বাসন্তী চাকমা। মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য কমিশনের সচিব সুদত্ত চাকমা।

এর আগে মন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২১
এমআইএইচ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।