ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিধবার আশ্রয়ণের ঘর অন্যের কাছে ‘বিক্রি’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২১
বিধবার আশ্রয়ণের ঘর অন্যের কাছে ‘বিক্রি’

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে এক বিধবা নারীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর অন্যের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য সৈয়দ কামাল।

এ ঘটনায় একাধিক জায়গায় অভিযোগ করেও কোনো ফল পাননি শ্যামনগর উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বিড়ালক্ষী গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী সালমা খাতুন।

তার অভিযোগ, দখলকারীরা টাকার বিনিময়ে সব জায়গা ম্যানেজ করে ফেলেছে।  

জানা গেছে, স্ত্রী ও দুই সন্তান রেখে মারা যান সিরাজুল ইসলাম। সন্তান দুটিকে নিয়ে অতিকষ্টে জীবনযাপন করতে শুরু করেন সালমা খাতুন।

এরপর ২০১৬ সালে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত পশ্চিম বিড়ালক্ষ্মী আশ্রয়ণ প্রকল্পে সালমা খাতুনকে একটি ঘর বরাদ্দ দেয় সরকার। সেখানে দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করছিলেন তিনি।

সালমা খাতুন বলেন, আমার বড় মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসার জন্য ১৫-২০ দিন বাড়ি ছিলাম না। তখন  আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক ফারুক বলেন, তোমার ঘরটা আমরা কিছু দিন ক্লাব হিসেবে ব্যবহার করব। তুমি চলে এলে ঘর ছেড়ে দেব। কিন্তু বাড়ি আসার পর দেখি মেম্বার সৈয়দ কামাল ঘর দখল করে তার এক পাতানো বোনকে ঘরে তুলে দিয়েছেন। পরে ওই নারীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান যে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে মেম্বারের কাছ থেকে ঘরটি তিনি কিনে নিয়েছেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা মিলন হোসেন বলেন, সালমা খাতুন তার সন্তানদের নিয়ে ঘর হওয়ার শুরু থেকে বসবাস করে আসছিলেন। হঠাৎ দেখি স্থানীয় মেম্বার সৈয়দ কামাল তার কোনো এক আত্মীয়কে ঘরে তুলে দিয়েছেন। আবার শুনেছি, মেম্বার ২৫ হাজার টাকায় তার নিকট আত্মীয়ের কাছে ঘরটি বিক্রি করে দিয়েছেন।

স্থানীয় আরও কয়েকজন জানান, সালমা খাতুন প্রথম থেকেই এ ঘরে বসবাস করছিলেন। হঠাৎ সালমাকে বের করে দিয়ে মেম্বার অর্থের বিনিময়ে তার পাতানো বোনকে উঠিয়ে দিয়েছেন।

বিষয়টি ধামাচাপা দিতে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সালমা খাতুন নিজেই ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অপ্রপ্রচারও চালান মেম্বার সৈয়দ কামাল।

এদিকে ঘর কেন্দ্রিক পুরো অভিযোগই স্থানীয় মেম্বারের ওপর চাপান আশ্রয়ণ প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন। তিনিও বলেন, ঘরের মূল মালিক সালমা খাতুন। ওই সময় সালমা খাতুন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়লে ইউপি সদস্য সৈয়দ কামাল ওই ঘরে তার পাতানো বোনকে তুলে দেন। ওই সময় আমি তাবলীগের কাজে বাইরে ছিলাম।

ইউপি সদস্য সৈয়দ কামাল বলেন, সালমা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়লে তাকে বের করে দেওয়া হয়। তখন ঘর খালি ছিল। আমরা কিছু দিন ক্লাব হিসেবে ব্যবহার করে পরে এক গরিব মানুষকে দিয়েছি। বিষয়টি অনেক পুরনো। এখন অভিযোগ করা হচ্ছে কেন, জানি না। তখন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) পরামর্শে ওখানে নতুন পরিবারকে তুলে দেওয়া হয়েছিল।

এ বিষয়ে শ্যামনগরের আটুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু বলেন, সালমা বিধবা ও ভূমিহীন দেখে তাকে সরকারি ঘর দেওয়া হয়। দুঃখজনক, স্থানীয় ইউপি মেম্বার সেই ঘর দখল করে তার এক আত্মীয়কে দিয়েছেন। তাকে ঘরটি ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।