ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাড়িতে বাবার মরদেহ রেখে এইচএসসি পরীক্ষা দিল মেরাজ!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২১
বাড়িতে বাবার মরদেহ রেখে এইচএসসি পরীক্ষা দিল মেরাজ!

কুড়িগ্রাম: রাতে হঠাৎ মারা গেছেন প্রাণপ্রিয় বাবা।  বাড়ির উঠানে বাবার সেই মরদেহ রেখে অশ্রু সজল নয়নে এইচএসসি পরীক্ষায় দিল মেরাজ হক।

চোখের পানিতে বার বার ভিজে যাচ্ছিলো তার উত্তরপত্র।

বৃহস্পতিবার (০২ ডিসেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সাইফুর রহমান সরকারি কলেজ কেন্দ্রে এভাবেই কেঁদে কেঁদে খাতায় লিখে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে মেরাজ।

ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজ থেকে কারিগরী শাখা থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মেরাজ হক। সে উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের হকটারী গ্রামের শরিফুল হক মিল্টনের (৪৭) ছেলে। মিল্টন বুধবার (১ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

পরীক্ষা কেন্দ্রে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই তাদের অভিভাবকদের নিয়ে গেলেও তার অভিভাবক বাবার মরদেহ নিজ বাড়ির উঠানে রেখে পরীক্ষা দিয়েছে। অন্যান্য পরীক্ষার্থীরা আনন্দ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে গিয়ে সিটে বসলেও মেরাজের চোখে অঝোর ধারায় ঝরেছে জল। তখন অন্যদের বোঝার আর বাকি থাকে না, তারা জনতে পারেন মেরাজের কান্নার করণ। শিক্ষক ও সহপাঠীদের সান্ত্বনায় কেন্দ্রের ৩ নম্বর কক্ষে বসে পরীক্ষা দেয় মেরাজ। পরীক্ষার পুরো সময়টা মাঝে-মধ্যেই ফুঁপিয়ে কেঁদে এক হাতে চোখ মুছে আর অন্য হাতে কলম দিয়ে লিখে চলে পরীক্ষার খাতায়। তারই সহপাঠী রবিউল ইসলাম জানায়, মেরাজ পরীক্ষা দিতে গিয়ে বাবার শোকে পুরো সময়টাই কেঁদেছে আর লিখেছে। এ দৃশ্য দেখে তার সহপাঠী, শিক্ষকসহ পুরো কেন্দ্রেই নেমে আসে শোকের ছায়া।

মেরাজের খালু পলাশ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বধুবার রাত ১২টার দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে মেরাজের বাবা মারা গেছেন। বাবাকে হারানোর পর ভেঙে পড়লেও কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষার হলে গেছে মেরাজ। আমরা সান্ত্বনা দিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য পাঠিয়েছি। পরে পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পর মেরাজের উপস্থিতিতে বিকেল ৩টার দিকে মরদেহ পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়েছে।

সাইফুর রহমান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও পরীক্ষা কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব মো. রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, পরীক্ষার্থী মেরাজের বাবার মৃত্যুর বিষয়টি শোনার পর আমরা তাকে সান্ত্বনা ও উৎসাহ দিয়েছি পরীক্ষা দিতে। তবে তার জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষা দিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০২১
এফইএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।