ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের ভিত্তি গণতন্ত্র: রাম নাথ কোবিন্দ

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২১
বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বের ভিত্তি গণতন্ত্র: রাম নাথ কোবিন্দ

ঢাকা: সাম্প্রদায়িক সহিংসতা নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ। প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে তিনি এ প্রশংসা করেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ কথা জানান। ভারতের রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফর নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বাংলাদেশ-ভারতের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে তার সঙ্গে আমার আলোচনা হয়। আমি তার সঙ্গে আলোচনার সময়ে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করি। এ সময় আমি তাকে বলি, বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্কের মূল ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক বিশ্বাস এবং আস্থা। ভারতের রাষ্ট্রপতি এ সময় বলেন, ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’ তত্ত্বের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এবং ভারতের আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীক অঙ্গনে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও সুসংহত করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

ড. মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্বের ভিত্তি হচ্ছে গণতন্ত্র, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র। এসময় তারা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রধানমন্ত্রী আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের বিষয়াদি সমাধানের ওপর সন্তোষ প্রকাশ করেন। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা, দুই দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা আনবে বলে তিনি মত দেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা এবং সাম্প্রতিক আর্থসামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণের প্রশংসা করেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কম্প্রিহেনসিভ ইকনোমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট ( সিইপিএ) সম্পন্ন করার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ভারতীয় রাষ্ট্রপতি দুর্গাপূজার সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার ব্যাপক প্রশংসা করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কোনো সংখ্যালঘু নেই, সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশ ধর্ম নিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এই নীতিতে বিশ্বাস করে। এ পর্যায়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি আম পাঠানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। ভারতের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল মিউজিয়াম প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধু-বাপু স্মারক ডাক টিকেট উদ্বোধন, বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর বায়োপিক নির্মাণ উদ্যোগসমূহ দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবেন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

ড. মোমেন জানান, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। এ সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এ পি জে আব্দুল কালামের বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করেন। এ পর্যায়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন সময়ে তার ভারত সফরের কথা উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মেঘালয়ের বালাত শহরে থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের স্মৃতি রোমন্থন করেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি দুই দেশের দুর্লভ যোগসূত্রের ভিত্তি একই ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, কৃষ্টি ও সভ্যতা থেকে উৎসরিত বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বাংলাদেশি এবং ভারতীয় যোদ্ধাদের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

বৈঠকে ভারতের রাষ্ট্রপতি আরও উল্লেখ করেন যে, করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার পর এটিই তার প্রথম বিদেশ সফর। এ বছর বাংলাদেশের চারজন বিশিষ্ট নাগরিককে ভারতীয় পদ্ম পদক প্রদান করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ২০২০ সালে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর ১২২ জন সদস্য ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন বলে তিনি জানান। ২০২১ সালে বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর উৎসবে সমান সংখ্যক ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য অংশগ্রহণ করবেন বলে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহম্মদ ইমরান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২১ 
টিআর/জেএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।