ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাগেরহাট মুক্ত দিবস আজ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২১
বাগেরহাট মুক্ত দিবস আজ

বাগেরহাট: আজ ১৭ ডিসেম্বর, বাগেরহাট মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্সে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও বাগেরহাট হানাদার মুক্ত হয় এক দিন পর ১৭ ডিসেম্বর।

মুক্তি সংগ্রাম ও যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা শত্রু (পাকিস্তানি হানাদার) মুক্ত হতে থাকে। এক পর্যায়ে যৌথবাহিনীর প্রচেষ্টায় ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্ম সমর্পনের মাধ্যমে বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্ম প্রকাশ করে প্রাণের বাংলাদেশ। যখন দেশের বেশিরভাগ স্থানে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাস করছিল। তখনও বাগেরহাটের কোথাও কোথাও পাকবাহিনীর তাণ্ডব চলছিল। নিজেদের সীমানা থেকে পাক হানাদার বাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করতে বাগেরহাটের মুক্তিযোদ্ধারা লড়ছিলেন প্রাণপণে।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করলেও রাজাকার-আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তান সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এ.কে.এম. ইউসুফের জন্মস্থান হওয়ার কারণে বাগেরহাট ছিল  রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

কে.এম. ইউসুফের দোসর রাজাকারদের খুলনা অঞ্চল প্রধান রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে বাগেরহাটে তখনও ব্যাপক লুটপাট, মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা এবং নির্মম নির্যাতন চলছিল। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড মাঠে ছিল রাজাকারদের ক্যাম্প। বর্তমান জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ছিল রাজাকারদের বিচারালয় এবং টর্চার সেল।

স্বাধীনতার পরে যেখানে স্থাপন করা হয়েছে বদ্ধভূমী স্মৃতি সৌধ। এর বিপরিত পাশে ভৈরব নদীর পাড়ে রজব আলীর নির্দেশে তৈরি করা হয় ফায়ারষ্কট বা কসাই খানা। যেখানে সম্প্রতি শহীদদের স্মরণে বদ্ধ ভূমী স্মৃতি স্তম্ভ নির্মান করা হয়েছে।

এদিকে সারাদেশ যখন শত্রুমুক্ত তখন বাগেরহাট শত্রুদের দখলে থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা উদগ্রীব ও অস্থির হয়ে পড়ে। প্রাণপণ চেষ্টা চলতে থাকে। শুরু হয় পরিকল্পনা। ১৬ ডিসেম্বর বাগেরহাট শহর দখলের পরিকল্পনা হয়। ১৭ ডিসেম্বর ভোরে রফিকুল ইসলাম খোকনের নেতৃত্বে রফিক বাহিনী  মুনিগঞ্জ এলাকা দিয়ে বাগেরহাট শহরে প্রবেশ করে। ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে তাজুল বাহিনী শহরের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে প্রবেশ করে বাগেরহাট শহরে। সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়া উদ্দিনের বাহিনী দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে সম্মিলিতভাবে বাগেরহাট শহর দখলের জন্য আক্রমণ করে।

বাগেরহাট সদর থানায় রাজাকার ক্যাম্পে অবস্থানরত রাজাকার-আল বদর ও পাকিস্তানি বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকার রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে হানাদাররা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পালিয়ে যায়।

১৭ ডিসেম্বর দুপুরে হানাদার মুক্ত হয় বাগেরহাট। বিজয়ের আনন্দে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। উল্লাস আর আনন্দে বাগেরহাটবাসী পায় মুক্তির স্বাদ। মুক্তিকামী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা উত্তোলন করেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

বাগেরহাট শহর মুক্তি সমরে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধা নকীব সিরাজুল হক বলেন, ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকার রজব আলী বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যরা পালিয়ে যায়। তবে কেউ কেউ আত্মসমর্পণও করে। সমগ্র বাগেরহাট মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। আমরা বিজয়ের পতাকা উড়াই স্বগৌরবে।

বাগেরহাট সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার  বীরমুক্তিযোদ্ধা শেখ  শওকত হোসেন বলেন, বাগেরহাট ছিল রাজাকার অধ্যুষিত একটি এলাকা। শহরের পাশে বিশালাকারের একটি নদী থাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জড় করতে আমাদের একটু বিলম্ব হয়। যার ফলে ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে আমরা (বীর মুক্তিযোদ্ধারা) বাগেরহাট শহরে প্রবেশ করি। বাগেরহাট শহর আমাদের নিয়ন্ত্রণে আসে। বাগেরহাট সদর থানায় রাজাকার ক্যাম্পে অবস্থানরত রাজাকার-আল বদর ও পাকিস্তানি বাহিনী  প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তির কাছে হার মানে তারা। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকার রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে হানাদাররা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পালিয়ে যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২১
এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।