ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বাঁশের সাঁকোয় ১৫ গ্রামবাসীর দুর্ভোগ

কাজী আব্দুল কুদ্দুস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
বাঁশের সাঁকোয় ১৫ গ্রামবাসীর দুর্ভোগ বাঁশের সাঁকো। ছবি: বাংলানিউজ

রাজবাড়ী: পদ্মা নদীর চরাঞ্চল থেকে উপজেলায় আসতে যাতায়াতের জন্য গ্রামবাসীর নিজেদের উদ্যোগে তৈরি বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা। সাঁকোটি র্দীঘদিন ব্যবহারে ভেঙে গেছে।

চলাচলের অনুপযোগী সাঁকো দিয়েই চলাচল করছে পদ্মার চরের ১৫ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ।  

যাতায়াতের অসুবিধার কারণে চরের বুকে উৎপাদিত ফসল উপজেলায় নিয়ে আসতে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এতে পিছিয়ে পড়ছে চরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি। পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে যেতে বিপাকে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। অসুস্থ রোগীকে উপজেলা বা সদর হাসপাতালের আনতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে চরবাসী।

বলছি রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের মুরালীখোলা গ্রামের পাগলা ঘাটের কথা। পদ্মা নদীর কোলে অবস্থিত এ সাঁকো। নদীর ওপারের ১৫টি গ্রামের সঙ্গে উপজেলায় যাবার একমাত্র পথই এই সাঁকো।

প্রায় দেড় ফুট চওড়ার সাঁকোটি দিয়েই চলাচল করছে পদ্মার চরাঞ্চলের কয়েক লাখ সুবিধাবঞ্চিত সাধারণ মানুষজন। সাঁকোটির জায়গায় সরকারিভাবে একটি পাকা সেতু হলে এ দুর্ভোগ থাকবে না বলে দাবি স্থানীয়দের। সেতু হলে বাড়বে জীবনযাত্রার মান। ঘুড়বে অর্থনীতির চাকা।

জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নে পদ্মা নদীর বেড়িবাঁধের পাশে পাগলের ঘাট। শুকনা মৌসুমে পদ্মা নদীর পানি শুকিয়ে যায়। বর্ষার ভরা মৌসুমে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। পদ্মার পানি বাড়লে সাঁকোর দুই প্রান্ত পানিতে ডুবে থাকে। নৌকাতেই তখন চলতে হয় চরবাসীকে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সাঁকো ব্যবহার করে প্রতিদিনি কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। ১০-১৫টি গ্রামের কয়েকশ’ শিক্ষার্থী স্কুলে যায়। গ্রামগুলো হলো মুড়ারীখোলা, পশ্চিম হারুয়া, মাধবপুর, হড়িনবাড়িয়া, বাঘঝাঁপা, ভাগলপুর, লস্করদিয়া, সালেপুর, কৃষ্ণগর, সাদারচরসহ আরও কয়েকটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ী শহররক্ষা বেড়িবাঁধের কালুখালীর রতনদিয়া ইউনিয়নের মুড়ারীখোলা গ্রামের চৌরাস্তায় দু’টি মুদি দোকান। একটি দোকান পাগলের দোকান নামে পরিচিত। পাগলের দোকানের পাশ দিয়ে উল্টো দিকে একটি মাটির কাঁচা রাস্তা নেমে গেছে। রাস্তা দিয়ে ৫০ গজ সামনে এগিয়ে গেলে একটি বাঁশের লম্বা সাঁকো। সাঁকোর দৈঘ্য প্রায় দেড়শ মিটার। সাঁকো পার হওয়ার পর মাটির আঁকাবাঁকা রাস্তা। মাটির রাস্তার দুই পাশে দিগন্ত জোড়া ফসলের ক্ষেত।

পদ্মার কোল থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর সরিষা চাষ করা হয়েছে। হলুদ সরিষায় দু’চোখ জুড়িয়ে যায়। প্রায় মাইলখানেক দূর থেকে গ্রাম শুরু হয়েছে। সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ।

পশ্চিম হারুয়া গ্রামের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে ১০-১৫টি গ্রামের মানুষ যাতায়াত করে। বিশেষ করে শতাধিক শিক্ষার্থী সকাল-বিকেল যাতায়াত করে। বর্ষার সময় তাদের খুব সমস্যা হয়। কারণ বাঁশের সাঁকো ও চরের দিকের কিছু রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। তখন শিক্ষার্থীদের সকালে একবার নৌকায় করে দিয়ে যেতে হয়। আবার ছুটি হওয়ার পর তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে হয়। একটা সেতু হলে রাস্তা ঘাটও ভালো হতো। সবার জন্য খুব হতো সুবিধা।

মুরারীখোলা গ্রামের বাসিন্দা নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, চরাঞ্চলে ফসল খুব ভালো হয়। সব ধরণের ফসলের আবাদ করা হয়। কিন্তু স্থায়ী সেতু না থাকায় ফসল মাথায় করে আনতে হয়। কিন্তু যাতায়াতের ভালো ব্যবস্থা থাকলে স্থানীয় কৃষকদের অনেক উপকার হতো। কায়িক শ্রম যাওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ও সময় অপচয় কম হতো। তাছাড়া বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করতেও অনেক টাকা খরচ হয়। তিন-চার বছর পরপর আবার নতুন করে বাঁশের সাঁকো তৈরি করতে হয়।

রূপসা মেধা চয়ন একাডেমির প্রধান শিক্ষক রাজীব কুমার সরকার বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি বেড়িবাঁধের পাশেই অবস্থিত। নদী ভাঙন কবলিত চর এলাকায় বিদ্যালয়ের সংখ্যা কম। চর এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ালেখার জন্য এ পথ দিয়ে যাতায়াত করে।

রতনদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মেহেদী হাচিনা পারভীন নিলুফা বলেন, সাঁকোর পাশেই রয়েছে একটি বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি নদীর পাড়ের বেড়িবাঁধের ভেতর অংশে। অনেক শিক্ষার্থী প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে। বাঁধের ভেতরের কয়েকটি গ্রামের মানুষ ফসল তুলতে যায়। আবার পদ্মাপাড়ের মানুষ ফসল বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসে। এতে সবার দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ওই এলাকায় একটি সেতু হলে খুব ভালো হয়। তখন যানবাহনে করে ফসল উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতে পারবেন চাষিরা। ফলে ঘুরবে তাদের ভাগ্যের চাকা।

কালুখালী উপজেলার প্রকৌশলী তৌহিদুল হক জোয়াদ্দার বাংলানিউজকে বলেন, সাঁকো দিয়ে পারাপারের বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি। এ বিষয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম চলছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০২২
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।