ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

শিশুকে গলা কেটে হত্যার জট খুলেছে, দাবি পুলিশের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২
শিশুকে গলা কেটে হত্যার জট খুলেছে, দাবি পুলিশের

বরিশাল: ছেলের শ্বশুর বাড়ির লোকদের শায়েস্তা করতে বাসায় বেড়াতে আসা ভায়রার ৯ বছরের নাতীকে জবাই করে হত্যা করেন সিরাজুল ইসলাম। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে এলাকায় নিখোঁজের মাইকিংও করান।

এমনকি মরদেহ উদ্ধারের সময়েও পুলিশের সঙ্গে ছিলেন সিরাজ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। তদন্তে বেড়িয়ে এসেছে আসল রহস্য।  

সোমবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারকের সামনে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছেন গরুর খামারের দিনমজুর সিরাজুল ইসলাম। এমনটাই জানিয়েছে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ।

এ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আজিমুল করিম সাংবাদিকদের জানান, শনিবার সকালে বরিশাল নগরের রুপাতলী বসুন্ধরা হাউজিং এলাকা থেকে শিশু ইয়াছিনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের পর রাতে নিহতের বাবা সিএনজি চালক মোঃ ছগির বাদী অজ্ঞত ব্যাক্তিদের আসামী করে কোতয়ালি মডেল থানায় মামলা দায়ের করে।

ওই মামলায় কাজী সিরাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল রোববার বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয় তাকে। আর সেখানে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয় সিরাজ। জবানবন্দীর বরাত দিয়ে ওসি আজিমুল করীম এবং স্থানীয়রা জানান, আট মাস আগে সিটি করপোরেশনের ২৫ নং ওর্য়াড সোহরাফ খান হাউজিংয়ের দিনমজুর জাকির সর্দারের মেয়ে ইতি আক্তারের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সিরাজুল ইসলামের ছেলে আল আমিনের। কিন্তু বিভিন্ন কারনে ইতি এবং আল আমিনের সংসার সুখের ছিল না। যার ফলে ইতি কয়েক দিন আগে পিতার বাসায় এসে ওঠে। ইতির বাবা জাকির সর্দার বেশ কয়েকটি মামলা দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে। এই মামলা থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজচ্ছিলেন সিরাজুল। পাল্টা মামলা দিয়ে জাকির সর্দারকে চাপে রাখার চেষ্টা ছিল তার।  

গত ১ ফেব্রুয়ারি বরগুনা জেলার বদরখালি ইউনিয়নের ফুলঝুড়ি গ্রামের বাসিন্দা ছগির হোসেনের ছেলে ইয়াছিন তার দাদি শিরিন বেগমের সাথে রূপাতলী ২৫ নং ওয়ার্ডের ঝালকাঠি-বরিশাল মহাসড়কের পাশে রজ্জব আলী খান জামে মসজিদ সংলগ্ন বাসিন্দা সিরাজুল ইসলামের বাসায় বেড়াতে আসেন। ইয়াছিনের মা দেশে থাকেন না। ফলে তাকে ডিভোর্স দিয়ে মনোয়ারা বেগমকে বিয়ে করেন। ছগির রাজধানীর মহাখালীতে থেকে সিএনজি চালিয়ে সংসার চালান। আর ইয়াছিন তার দাদির সাথে বরগুনায় থাকে। মাঝে মাঝে পিতার কাছে ঢাকা যান। কয়েকদিন আগে তেমনি ঢাকা গিয়েছিল।

ইয়সিন বাসায় আসার পরই সিরাজুল পরিকল্পনা করেন শিশুটিকে হত্যা করে দায় চাপাবেন ছেলে আল আমিনের শ্বশুর ও তাদের স্বজনদের ওপর। এমনকি বাদী হয়ে মামলা দেওয়ারও পরিকল্পনা ছিল। পরিকল্পনা মোতাবেক শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে বসুন্ধরা হাউজিংয়ের মধ্যে বরিশাল রেডিও সেন্টারের দেয়াল সংলগ্ন একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যান এবং পরিত্যাক্ত টয়লেটের স্লাবের ওপর শুইয়ে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে জবাই করেন। পরে দিনভর বৃষ্টি হলে রক্ত ও পায়ের চিহ্ন মুছে যায়। হত্যার পর বাসায় ফিরে এসে বিকেলে ইয়াছিনের সন্ধানে মাইক ভাড়া করে এলাকায় মাইকিং করান। রাতে কয়েক দফায় হত্যাকান্ডের এলাকায় গিয়ে ঘুরে আসেন।  

শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় লোকজন মরদেহ দেখতে পেলে সিরাজুলও ঘটনাস্থলে যান এবং স্ত্রী আলেয়া বেগম, সন্তান আল আমিনকে শিখিয়ে দেন আল আমিনের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের ওপর দায় চাপানোর। তবে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিলে সেখানে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেন সিরাজুল ইসলাম। আদালতের বিচারক সিরাজুল ইসলামকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

এদিকে গ্রেফতারকৃত সিরাজুলের ছেলে বউ ইতি ও তার পরিবার জানিয়েছে, এক ফকিরের কথা বিশ্বাস করে তাকে ঘটনার মাত্র কয়েকদিন আগে নির্যাতন করে স্বামী আলামিন। এরপর ইতি বাবার বাড়িতে চলে আসলে তিনি আর ও বাড়ির কোন খোজ জানতেন না। তবে শিশুটি নিখোজ হওয়ার পর আলামিন তাকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। পরের দিন মরদেহ পাওয়ার খবর জানতে পেরে তিনি সেখানে যেতে চাইলে তাতে বাধা দেন শশুর সিরাজুল।

তিনি আরো জানান, ছত্তার নামে ওই ফকিরের কথা মতো ধ্বনি হওয়া নিয়ে গুজব  নানান তথ্যে শশুর বাড়ির লোকজন যে কোন কাজ করতে দ্বিধাবোধ করতেন না।

বাংলাদেশ সময়: ০০২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০২২
এমএস/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।