ঢাকা, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

নিত্যপণ্যের ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোর সিদ্ধান্ত

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২২
নিত্যপণ্যের ভ্যাট-ট্যাক্স কমানোর সিদ্ধান্ত

ঢাকা: রমজানকে সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নিত্যপণ্যের মজুদ নিয়ন্ত্রণসহ ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো বা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ওএমএস কার্যক্রম ও পণ্যের সরবরাহ বাড়াবো এবং মজুদ নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

 

দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে রোববার (১৩ মার্চ) বিকেলে সচিবালয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ তথ্য জানিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সভায় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ অংশ নেন।  

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, অর্থসচিব, বাণিজ্য সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদসহ বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তারা অংশ নেন।  

বিকেল ৪টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আজকে মিনি কেবিনেটের মতো আলোচনা সভা হয়েছে। আমাদের মন্ত্রিসভার সদস্যরা এখানে আছেন। সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক বিভাগের সচিব উপস্থিত ছিলেন।   

‘আপনারা জানেন সারা বিশ্বে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে। দাম বাড়ার একটা মাত্র নেই। আমরা প্রতিদিনই দেখছি দাম বাড়ছে। সেটার প্রভাব আমাদের দেশেও আসছে। আমাদের দেশে যেটা আসছে আপনারা লক্ষ্য করছেন। রোজার মধ্যে অন্যান্য জিনিষেরও দাম বাড়তে পারে সেটা মাথায় রেখে আজকে আমরা বসছিলাম। ’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যে যুদ্ধাবস্থা সেই যুদ্ধাবস্থাতে ফুয়েলের সরবরাহ, গ্যাসের সরবরাহ কিছু কিছু জায়গায় কমছে। সেটা সারা বিশ্বেই কমছে। আমাদের দেশও সেখানে ইফেক্টেড হচ্ছে কিংবা হবে। গমের সাপ্লাই যেহেতু ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে আসতো, সেখানেও আমরা একটা অসুবিধায় পড়তে পারি, দাম বৃদ্ধি করতে পারে। কীভাবে এটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবো কিংবা একটা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পারবো সেজন্য আজকের সভাটি হয়েছে।   

সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন থেকেই ওএমএসের যে কার্যক্রম বৃদ্ধি করবো যাতে করে ন্যায্যমূল্যে কিংবা স্বল্পমূল্যে জনগণের হাতে পৌঁছে দিতে পারি। দ্রব্যের যে সাপ্লাই চেইন সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবো কোনোখানে খাদ্যদ্রব্য কিংবা অ্যাসেন্সিয়াল পণ্যের সাপ্লাই চেইন যাতে ঠিক থাকে। প্রোডাক্ট স্টক যে যেখানেই রাখেন সেই স্টকটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করবো কেউ যেন স্টক বেশি রেখে, মজুদ বেশি করে দ্রব্যমূল্য না বাড়াতে পারে।   

ভোজ্যতেলের ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে জানিয়ে দাম বৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এক টন সয়াবিন তেলের মূল্য এক বছর আগে ছিল ১ হাজার ২৩৫ ডলার, পামওয়েল ছিল ১ হাজার ৩২ ডলার। গত ৯ মার্চ সয়াবিন তেল ১ হাজার ২৩৫ থেকে বেড়ে ১ হাজার ৯৩০ ডলার এসেছে। পামওয়েল হয়েছে ১ হাজার ৮৯৭ ডলার। এ যে অস্বাভাবিক বৃদ্ধির চাপে তেল আমদানি করতে হচ্ছে। আমাদের চাহিদার ১০ শতাংশ বেশি উৎপাদন হয় না। আমাদের পুরোটাই আমদানি নির্ভর। কাজেই পরিস্থিতি কী হতে পারে তা নিশ্চয়ই উপলব্ধি করছেন। তেলের দাম সহনীয় রাখার জন্য দাম যেভাবে বাড়ছে দেশবাসীকে সহনীয় পর্যায়ে দিতে আজকের এ মিটিং।   

তিনি বলেন, আমরা সাপ্লাই সোর্স, স্টক সোর্স এবং যেকোনো উপায়ে দাম যেন অস্বাভাবিক বৃদ্ধি না হয় সেটার দিকে নজর রাখবো। আমরা সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের ওপর ভ্যাট-ট্যাক্স তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট-ট্যাক্সের কথা চলে এসেছে। ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো যায় কিনা আমরা সেটা নিয়েও সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি খুব শিগগিরই। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ভ্যাট-ট্যাক্স কমানো বা তুলে দেওয়া, ডিউটি কিংবা ট্যাক্স যেটাই হোক। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের ওপর অর্থাৎ ভোজ্যতেল, চিনির ওপর কতখানি কমানো যায় আমরা শিগগিরই একটা ঘোষণা দেব।  

মন্ত্রী বলেন, রোজার আগাম অতিরিক্ত চাহিদা বিবেচনা করে তড়িৎ আমদানির ব্যবস্থা করার জন্য আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। বর্তমান বিশ্বের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা আন্তর্জাতিক ক্রয়ের ক্ষেত্রে কীভাবে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, সোর্স বাড়ানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা মোটামুটি সবাইকে উৎসাহ প্রদান করবো যাতে করে এ সমস্ত জিনিষগুলো আমদানি করে মার্কেট স্থিতিশীল রাখে।  

‘আমাদের আরেকটা অসুবিধা হতে পারে বলে মনে করছি গমের সরবরাহ। যেহেতু গমের সরবরাহ ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকেই হয়, সেটারও হয়তো এখানে একটা ইফেক্ট হতে পারে। চাল-গমের বাজার স্থিতিশীল থাকে তার জন্য আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো। ’ 

রোজার সময় বিদ্যুতের সরবরাহ যাতে কম না হয়, কারণ আপনারা বুঝতে পারছেন যে ডিজেলের সরবরাহ হয়তো কমে যেতে পারে। আমাদের গ্যাসের সরবরাহ কমে যেতে পারে। সেগুলো আমরা সঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে বিদ্যুতের ঘাটতি না হয় এবং কোনোকিছুই যাতে আমাদের জনগণ অসুবিধায় না পড়ে সেজন্য যা যা করবার সেটা করছি।  

কীভাবে মানুষকে সাশ্রয়ীমূল্যে পণ্য দেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যার জন্য সরকার যেটা করতে পারে...ভ্যাট-ট্যাক্সের ব্যাপারে। একটা পজিটিভ সিদ্ধান্ত হয়েছে। আশা করছি, কালকের মধ্যে একটা পদক্ষেপ নিতে পারব।  

তিনি বলেন, আমরা ক্রাইসিস মোকাবিলার জন্য টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে ছয়টি পণ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি। এর কমপক্ষে চারটি পণ্য গ্রামাঞ্চলেও পাঠাবো। সেটার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ঢাকা শহরে ১৫ লাখ লোককে কীভাবে দেওয়া যায়, সেটার যাতে অপব্যবহার না হয় সেজন্য আলোচনা হয়েছে।    

মানুষ টিসিবির পণ্য পাচ্ছে না এ বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, একটা জিনিস বুঝতে হবে, যেখানে দেড়শ ট্রাক ছিল সেখানে সাড়ে ৪০০ ট্রাক নিয়ে নেমেছি। প্রতিদিন রাতারাতি তো বাড়ানো সম্ভব নয়। পাশাপাশি আগামী রোজা সামনে রেখে এক কোটি মানুষকে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি। মেশিন চাপলেই যে চলে আসবে তা তো নয়। আমরা ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের করছি। আরও আলোচনা হয়েছে প্রয়োজনে আমরা আরও ব্যবস্থা নেব। আমরা পুরোপুরি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি, যা করণীয় আমরা করবো।

ভোজ্যতেল এখন যে দামে বিক্রি হচ্ছে তা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার আগেই আমদানি হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, একটি প্রক্রিয়ায় দাম নির্ধারণ হয়। গত ২ ফেব্রুয়ারি একটা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম, যেটা জানুয়ারি মাসের ৩০ দিনের গড় আমদানি মূল্যের ওপর করা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে আজকে যেটা বাড়ছে সেটা আজকে প্রভাবে ফেলছে তা কিন্তু নয়। তবে দাম আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু ব্যবসায়ী সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা কিন্তু কথাবার্তা বলেই নির্ধারণ করে দিয়েছি। সেটার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে, আমরা কোথাও মজুদদারি করতে দেব না। কোনো সুযোগ নিতে দেব না।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২২, আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা
এমআইএইচ/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।