ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

রাস্তা যেন তাদের বাড়ির উঠান

হারুন-অর-রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২২
রাস্তা যেন তাদের বাড়ির উঠান

ফরিদপুর: ফরিদপুরের বিভিন্ন সড়কের ওপর চলছে অবাধে মৌসুমি ফসল শুকানোর কাজ। এর ফলে একদিকে যেমন রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

জমি থেকে বিভিন্ন ধরনের ফসল কেটে এনে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে সড়কের পাশে। পরে সেই ফসল সড়কের একটা জায়গা দখলে নিয়ে মাড়াই মেশিন বসিয়ে দিব্বি চলছে মাড়াইয়ের কাজ। আর এ অবস্থায় সড়কের অর্ধেক অংশে বিভিন্ন ধরনের ফসল শুকানো ছাড়াও ফসলের অবশিষ্ট অংশ সড়কের ওপরেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে রোদে শুকানো হচ্ছে।

এতে সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। যানবাহনের মধ্যে প্রতিনিয়ত অটোভ্যান, সিএনজি, মোটরবাইক, রিকশা-ভ্যান এবং ইজিবাইক বেশি চোখে পড়ে। এসব গাড়ি চালকেরা সর্বক্ষণ দুর্ঘটনার আতঙ্কের মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে।  

শুধু কী তাই, কোনো কোনো পাকা সড়কে গম, ভুট্টা, মুসুরি, কলায় মাড়াইয়ের কাজের চিত্র চোখে পড়ে। পাকা সড়কে যানবাহন চলাচলে চরম অসুবিধা সৃষ্টি করে এবং দুর্ঘটনার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও এই বেআইনি কাজ জেনে বুঝে তারা করে যাচ্ছে।

পাকা সড়কে ফসল শুকানসহ বিভিন্ন কাজ করতে আসা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) এক ব্যক্তি বাংলানিউজকে বলেন, এই মৌসুমে বাড়িতে কাঁচা মাটিতে গম-গমের খড় শুকাতে বেশি সময় লাগে। তাছাড়া যেকোনো সময় বৃষ্টি বাদল, ঝড়ে ক্ষতিও হয়। তাই তারা নিরাপদ এবং দ্রুত শুকানোর স্বার্থেই পাকা সড়কে ধান এবং খড় শুকিয়ে থাকেন।

আলফাডাঙ্গা উপজেলার টাবনি ইউনিয়নের ইউনুস মোল্লা নামে এক পথচারী বাংলানিউজকে বলেন, এরা নিয়ম-কানুন তোয়াক্কা না করে সড়ক বন্ধ করে সড়কের ওপর ধান, গম, কালাই, মুসুরিসহ ডাটা শুকাচ্ছে স্থানীয় কৃষক-কৃষাণীরা।

তিনি আরও বলেন, সড়কগুলো দেখলে মনে হয় চলাচলের জন্য সড়ক নয় এ যেন ধান ও খড় শুকানো ব্যক্তিদের পৈত্রিক সম্পত্তি।  

অপরদিকে সিএনজি চালক ইসলাম বলেন, এসব ফসল শুকানোর জন্য একদিন আগে থেকেই সড়কের দুই ধারে বড় বড় করে ফসলের পালা দিয়ে রাস্তা দখল করে রাখা হয়। এতে রাস্তার প্রশস্ততা কমে সরু হয়ে যাওয়ায় পাশাপাশি দুটি গাড়ি চলাচলের সময় সমস্যায় পড়তে হয়।

সরেজমিনে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় যানবাহনগুলো দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন কৃষক-কৃষাণীসহ কৃষক পরিবারের ছোট-ছোট শিশু বাচ্চারা। আবার রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে অনেক স্থানে যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও অটোভ্যান ও রিকশা দুর্ঘটনা নিত্যদিনের স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনায় অনেকেরই হাত-পা কেটে গেছে ও ভেঙে গেছে বলে জানান তারা।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. হযরত আলী বাংলানিউজকে বলেন, রাস্তার ওপর মৌসুমি ফসল শুকানোর ফলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে মারাও যাচ্ছে মানুষ। তবে এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের তদারকি করা উচিত।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক দীপক কুমার রায় বাংলানিউজকে বলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।