ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

হার না মেনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা প্রতিবন্ধী বাবু

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২২
হার না মেনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা প্রতিবন্ধী বাবু বাবু মিয়া

মাগুরা থেকে: সরাসরি নিজের দুরাবস্থার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাঠিয়ে ঘর পেয়েছেন মাগুরার প্রতিবন্ধী বাবু মিয়া। আর নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে এখন সে এলাকার অনেক যুবকেরই হার না মেনে এগিয়ে চলার রোল মডেল, অনুপ্রেরণা।

তরুণরা যেমন তার এই জীবনযুদ্ধকে সম্মান জানিয়ে নিজেদেরও কঠোর পরিশ্রমী করতে চান, ঠিক তেমনি অনেক অভিভাবকও চান তার সন্তান জীবনযুদ্ধের পরিশ্রম আর বিদ্যা-বুদ্ধিতে হোক বাবু মিয়ার মতো। তারা চান, তাদের সন্তান যেন থেমে না যান বরং এগিয়ে চলেন সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে।

বৃহস্পতিবার মাগুরার সদর উপজেলার ইছাখাদা পুরাতন বাজারে বাবু মিয়া ও তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখা করে ও কথা বলে দেখা গেছে এমন চিত্রই। বিশেষ করে বাবুর বাবার মৃত্যু, সহায় সম্পদহীন প্রতিবন্ধী হওয়ার পরেও যে হার মানেননি বরং এগিয়ে নিয়েছেন লেখাপড়া, পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহায়তা, জীবনযুদ্ধ তাকে এনে দিয়েছে আলাদা মর্যাদা।

এ বিষয়ে বাবুর প্রতিবেশী ইকবাল হোসেন বলেন, আমরা তো দেখেছি ছেলেটা কত কষ্ট করেছে। কীভাবে মানুষ হয়েছে। তারপরও সে হার মানেনি। আমরাও চাই আমাদের সন্তানেরাও এমন হার না মানতে শিখুক।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মাগুরা আদর্শ কলেজে থেকে বাবু এবার ইসলামের ইতিহাস বিভাগে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন।  
একই কলেজের স্নাতকের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, বাবু ভাইয়া আমাদের গর্ব। আমরা তাকে দেখে শিখি। তিনি কথা বলা এবং শারিরীকভাবে প্রতিবন্ধী হলেও নিজে হার মানেননি। লেখাপড়া করছেন এবং রেজাল্টও ভালো।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে বাবুর অসহায় অবস্থার বর্ণনা দেওয়া এসএমএসটি। পরে মাগুরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তাকে ঘর করে দেওয়া হয়। হাজরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দুই শতক সরকারি খাস জমিতে সেমি পাকা দুই কক্ষের টিন সেডের ঘর নির্মাণ হয় বাবুর জন্য।

বর্তমানে এই বাড়িতে একাই থাকেন বাবু। তার মা ঢাকায় থেকে একটি গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। রান্না খাওয়াসহ দৈন্দনিন কাজগুলো নিজেই করেন বাবু মিয়া।  
কথা হলে অস্ফূট স্বরে বাবু মিয়া বলেন, ছোট থাকতেই বাবা মারা যান। পরে মা ও ছোট ভাই চাকরির সন্ধানে ঢাকায় চলে গেলে নানীই আমাকে দেখতেন। নানী মারা যাওয়ার পর আমি আরও সমস্যায় পড়ি। একদিন ফেসবুক থেকে অনেক খুঁজে প্রধানমন্ত্রীর নম্বর পাই। সেই নম্বরে প্রধানমন্ত্রীকে এসএমএস ও পরে চিঠি লিখি, একটা ঘর ও চাকরি চেয়ে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে ঘর দিয়েছেন। তাকে ধন্যবাদ দিলেও ছোট হয়। আমি এখন ও আজীবন প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করে যাবো।
মাগুরার জেলা প্রশাসক ড. আশরাফুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বাবুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর বাবুকে আমরা খুঁজে বের করি। তাকে তার নানা বাড়িতে ঘর করে দিতে চাই। কিন্তু তাতে সে রাজি হয়নি। পরে প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেওয়া ঘর দিতে চাইলে সে রাজি হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তার মাকে ঘরটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

বাবুর ঘরে গিয়ে দেখা যায়, টেবিলে বসে বই নিয়ে ব্যস্ত বাবু। তার পুরো ঘরটি বেশ গোছানো। আর অ্যাকাডেমিক বই ছাড়াও বাবুর বইয়ের তাকে সাজানো রয়েছে ধর্মীয় ও নানা অনুপ্রেরণামূলক বই, যা পড়ে অবসর সময় কাটে বাবুর।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২২
এইচএমএস/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।