ঢাকা, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর সেকশনের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের সংস্কার কাজ শেষ

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২২
ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর সেকশনের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের সংস্কার কাজ শেষ

পাবনা (ঈশ্বরদী): ১ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ঈশ্বরদীর পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের আওতায় ২৬৪ ফুট দৈর্ঘ্যের ‘ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর’ সেকশনে ২১৩ নম্বর প্রাচীন ঝুঁকিপূর্ণ রেলব্রিজের সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলোর মধ্যে ব্রিজটি দিয়ে দেশের ১৮টি জেলার ২২ জোড়া আন্তঃনগর, মেইল-লোকাল, মালবাহী ট্রেন চলাচল করতো।

রেলওয়ে ব্রিজের বেডব্লক এবং বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ফাটল ধরার কারণেই রেলওয়ের যে স্পিড তা কমিয়ে ট্রেনগুলো শূন্য কিলোমিটার গতিতে চলাচল করানো হতো।

ব্রিটিশ আমলের ১৪২ বছরের পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের গোঁড়ায় ট্রেন দাঁড়িয়ে যেত। অতঃপর ট্রেনের চালক ট্রেনগুলো হাঁটার গতিতে ধীরে ধীরে ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করতেন। রেলব্রিজটি সংস্কারের কারণে এক সপ্তাহ পর আর শূন্য কিলোমিটার গতিতে নয়, সেকশন স্পিডের গতিতে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেনগুলো নিরাপদে চলাচল করবে।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত (ঈশ্বরদী-রাজশাহী-চিলাহাটি) রেলওয়ে রুটের ডাউন লাইনে সিসিক্রিপের ওপরের থেকে রেললাইন তুলে ফেলে সংস্কার করা নতুন আরসিসি বেডব্লকের ঢালাইয়ের ওপরে লোহার গার্ডার বসানোর কাজ শেষ করে দুপুর ১৩টা ১৫ মিনিটে কুড়িগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্তঃনগর কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস অতিক্রম করে।  

একই দিনে দুটি রেললাইন স্থাপন করে সময়টা বেশ প্রয়োজন হয়। এতে ২২ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেনের ব্যাপক শিডিউল বিপর্যয় হয়। যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। যে কারণে সোমবার (১৮ জুলাই) ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর সেকশনের ২১৩ নম্বর ব্রিজে আপ লাইলের অস্থায়ী ব্যবস্থাপনার রেললাইন সরিয়ে নতুন ঢালাই করা পিয়ারের বেডব্লকে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়।  

চলতি বছরে সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) থেকে (বিকল্প) অস্থায়ী ব্যবস্থাপনায় রেললাইন নির্মিত করে সংস্কার কাজ শুরু করার পর এই রুটে ট্রেন চলাচল অব্যাহত ছিল। সংস্কার চলাকালীন সময় অস্থায়ী ব্যবস্থাপনার রেললাইনে ট্রেন চলাচল করতো।

সংস্কার কাজে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত শরীফ খান, পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে প্রকৌশলী-২ আব্দুর রহিম, পাকশী বিভাগীয় সেতু প্রকৌশলী নাজিব কায়সার, পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শিপন আলী, পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী, তৌহিদ সুমন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) এ,বি,এম বাকিয়াতউল্লাহ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সেতু) হাসান আলী, উপ-সহকারী প্রকৌশলী (কার্য) আতিকুর রহমান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পদ্মা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম সুলতান উপস্থিত ছিলেন।  

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন সহকারী প্রকৌশলী আবু তৌহিদ সুমন বাংলানিউজকে জানান, ঈশ্বরদী-আবদুলপুর সেকশনে ২৬৪ ফুট দৈর্ঘ্যের রেলব্রিজের পায়ারের বেডব্লক ফাঁটলের কারণে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটের ট্রেনগুলোতে যাত্রী নিয়ে ঝুঁকিতে চলাচল করতো। ব্রিজের পায়ারগুলো ফাঁটলের কারণে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতো। দুর্ঘটনা এড়াতে দ্রুত সংস্কার করা হলো।  

প্রাচীন আমলের ব্রিজটি সংস্কার করতে গিয়ে অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী শিপন আলী বাংলানিউজকে জানান, ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনের ৫ কিলোমিটার উত্তরে ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর জংশন স্টেশনের মধ্যবর্তী পাটিকাবাড়ি ১৪২ বছরের পুরোনো ২১৩ নম্বর রেলব্রিজে অস্থায়ী ব্যবস্থাপনার রেললাইন তৈরী করে ১২০ দিনের প্রকল্পের কাজে, পুরোনো গার্ডার ভেঙে নতুন করে গার্ডারের বেডব্লক আরসিসি ঢালাই করা হয়েছে। ব্রিজটি ছয় স্প্যান বিশিষ্ট গার্ডার ব্রিজ। এই গার্ডার ব্রিজের পায়ারে বেডব্লকে বড় ফাঁটল দেখা গিয়েছিল। যা ৭৫ দিনে শেষ করা হবে।  

পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী শিপন আলী বাংলানিউজকে জানান, সিসিক্রিপ দিয়ে অস্থায়ী ব্যবস্থাপনায় রেললাইন তৈরি করেছিলাম। তা সরিয়ে ফেলে গার্ডার ব্রিজের লোহার গার্ডার বেড ব্লকে বসিয়ে আগের মতো ট্রেন চলাচলের জন্য উপযোগী করা হয়েছে। এখন আর ট্রেন এসে ব্রিজের গোড়ায় ডেডস্টপ হবে না।  

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জোনের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশলী-২ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের পুরোনা রেলসেতু যেগুলো রয়েছে সেগুলো ভগ্নদশা। রেলসেতুসমূহ সংস্কার ও পুননির্মাণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যেটি আমরা অব্যাহত রেখেছি। যার অংশ হিসেবে এই জরাজীর্ণ ব্রিজটি সংস্কার করা হলো। এরপর একে একে অন্য ব্রিজের কাজগুলো চলবে।  

ডিএন২ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের  ঈশ্বরদী-আব্দুলপুর রেলসেকশনে এই রুট দিয়ে ১৮ জেলার ২২ জোড়া আন্তঃনগর মেইল ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। অতিরিক্ত ট্রেন চলাচলের কারণে বেডব্লকে ফাঁটল ধরার কারণে সেকশন স্পিড ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার গতি থেকে ট্রেনগুলো শূন্য কিলোমিটার গতিতে এসে ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের গোঁড়ায় দাঁড়িয়ে হাঁটার গতিতে ট্রেনগুলোকে পারাপার হতো। ঝুঁকিপূর্ণ এতটাই ছিল, যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেত। ব্রিজটি সংস্কার করায় ট্রেনের গতি কমে গিয়ে কিছুটা সময় ট্রেনগুলো বিলম্ব হতো। নিরাপদে এখন ট্রেনগুলো চলবে।  

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী লিয়াকত শরীফ খান বাংলানিউজকে জানান, বর্তমান সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রেলওয়ে সেক্টরে অভূতপূর্ব দৃশ্যমান উন্নয়নের ধারা বজায় রেখেছেন। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অধীনে ঝুঁকিপূর্ণ রেলব্রিজ যেগুলো রয়েছে, ব্রিজগুলো সেই ব্রিটিশ আমলে নির্মিত। পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকোশলী বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজগুলো পর্যায়ক্রমে পরিদর্শন করে একেবারে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ যে রেলব্রিজ। আমরা সেগুলো আগে সংস্কার করছি।  

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ১৮৮২ সালে ট্রেন চালুর পর আসাম-শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি রুটে দার্জিলিং মেইল ট্রেন চলাচল করতো। ১৮৮৩ সালে বিহারে ও পশ্চিমবঙ্গের কয়েক জেলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ৮৪ সালে দুর্ভিক্ষ মোকাবিলা করতে ১৮৭৪-১৮৭৮ সাল পর্যন্ত ইংল্যান্ডে নর্দান বেঙ্গল স্টেট নামে রেল কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন ৩৩৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মিত হয়।  

১৪২ বছর আগে ব্রিটিশ আমলে ১৮৭৮ সালে পার্বতীপুর-চিলাহাটি-সান্তাহার-দর্শনা রুটে কলকাতা থেকে সাঁড়া (বর্তমানে ঈশ্বরদী জংশন) হয়ে চলাচল করতো। এসময় পদ্মা নদীর সাঁড়া, এখনকার ঈশ্বরদী থেকে আব্দুলপুর জংশন, সান্তাহার জংশন, পার্বতীপুর জংশন, সৈয়দপুরে ও নীলফামারীতে চিলাহাটি হয়ে শিলিগুড়ি হয়ে ট্রেন চলাচল করতো। এ সময়ে দুর্ভিক্ষ অঞ্চলে সহজে ত্রাণসামগ্রী যেন পৌঁছানো, বৃটিশদের ব্যবসা ও বাণিজ্যিক কারণে দেশের সঙ্গে কলকাতা, আসাম, শিলিগুঁড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা হয়, কারণ তখন চা তামাকের জন্য বিখ্যাত ছিল। সে সময়ে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়।  

১৯২৬ সালে নর্দান বেঙ্গল স্টেট রেলওয়ে কোম্পানি সাঁড়াঘাট থেকে শিলিগুড়ি রেললাইন মিটারগেজ থেকে ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হয়েছিল।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২২
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।