ঢাকা, শনিবার, ১২ আশ্বিন ১৪৩১, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সিরাজদিখানে ধলেশ্বরীর ভাঙনে হুমকিতে বসতবাড়ি-বিদ্যুতের খুঁটি

শামসুল ইসলাম সনেট, উপজেলা করেসপন্ডেট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২২
সিরাজদিখানে ধলেশ্বরীর ভাঙনে হুমকিতে বসতবাড়ি-বিদ্যুতের খুঁটি

বাড়তে শুরু করেছে দেশের নদ নদীর পানি, সঙ্গে বৃষ্টির মৌসুম, তাই চিন্তায় নির্ঘুম সময় পার করছে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ধলেশ্বরী নদী পাড়ের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। গত কয়েক বছরের অব্যাহত ভাঙনে উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের ডাকেরহাটি ও গোয়ালখালি গ্রামে বিলীন হয়ে গেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি।

বর্ষার শুরুতে সামান্য বৃষ্টিতেই ফের ভাঙতে শুরু করেছে মানুষের বসতভিটা।

অস্বাভাবিক হুমকিতে আছে ১৫টি বসতবাড়ি ও দুইটি ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের খুঁটি। যে কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে এসব ঘরবাড়ি ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। তাছাড়া আরও প্রায় ৫০টি বাড়ি রয়েছে ভাঙনের আতংকে।

অনেক পরিবার তড়িঘড়ি করে তাদের ঘরবাড়ি অন্য অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। বারবার আশ্বাস দিয়েও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরণের সাহায্য পাচ্ছেন না বলে ভাঙন কবলিত মানুষের অভিযোগ।

শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার চিত্রকোট ইউনিয়নের ধলেশ্বরী নদীর পানির তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙনে দিশেহারা তুলসীখালী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে গোয়ালখালি ও ডাকেরহাটি গ্রামের মানুষ। এতে গত দুই বছর ধরে ক্রমাগতভাবে ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন ফসলি জমি, বসতবাড়ি, দুইটি ৩৩হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের খুঁটি। প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ভাঙন কোনো ভাবেই থামানো যাচ্ছে না। তাই গ্রামবাসীরা বলছে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন আমাদের দিকে নজর দিচ্ছে না।

জানা যায়, গত বছরে প্রায় ৫০টির ওপরে ঘর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানালে তারা সরেজমিনে দেখেও কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত ডাকেরহাটি গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ারা বেগম বলেন, আমার বাড়ির সামনে বিশাল জায়গা ছিল। এখানে ফসল ফলিয়ে ছেলে মেয়েকে নিয়ে চলতাম। গত কয়েক বছরের নদী ভাঙনে আমার সব জায়গা বিলীন হয়ে গেছে। এখন শুধু বাড়ি টুকুই বাকি রয়েছে। এই বর্ষায় হয়তো কিছুই থাকবে না। আমাদে দেখার কেউ নাই।

একই গ্রামের বাসিন্দা মো.ইকবাল খান বলেন, আমাদের গ্রামের মোনায়েম খান একজন প্রতিবন্ধী তার বাবার রেখে যাওয়া বসতবাড়িটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। তার আর কোনো সম্পদ নেই। এখন নদী যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে তার বাড়িটিও শীঘ্রই নদীগর্ভে চলে যেতে পারে। তাই প্রশাসনের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই এখনই যদি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তা না হলে মোনায়েম খানের বাড়িটি রাখা যাবে না। সে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে।

সফর আলী, মোকসেদ খান, রাজন বেগমদের একই সুর, তারা বলছেন বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই শুরু হয়ে গেছে তীব্র নদী ভাঙন। গত বছরও প্রশাসনের লোকজন এসে দেখে গেছে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এবার শুরু হয়ে গেছে ভাঙন। কিন্তু এবারও কোনো পদক্ষেপ কি তারা নিবে না । আসলে আমাদের পোড়া কপাল, তাই এই নদী ভাঙন ছাড়ছে না। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে নদীর গর্ভে আমাদের জায়গা বিলীন হয়ে যাবে।

চিত্রকোট ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার শফিউদ্দিন খান মাসুম বলেন, গত বছর বহু মানুষের ঘর দুয়ার নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। এবার পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে আমার নিজের বাড়িঘরসহ অনেক মানুষের বাড়িঘর ভাঙনের মুখে পড়েছে। গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড এই এলাকাগুলো দেখে মেপে গেছে। কিন্তু তারা আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.শরিফুল আলম তানভীর বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি, তবে আমি সরেজমিন দেখে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুন্সিগঞ্জ জেলা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, ধলেশ্বরীর তীরে বেশ কয়েকটি স্থানে নদী ভাঙনের তথ্য রয়েছে। এবারও আমরা নদী ভাঙন রোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমাদের তথ্য মতে চারটি স্থান রয়েছে যেখানে নদী ভাঙন জুন মাসের দিকে দেখা দেয়। আমরা জরুরি তৎপরতার অংশ হিসেবে জিআই ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করি। তবে এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে কোন নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলেই আমরা কাজ শুরু করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২২
এনএইচআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।